রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনার চার দিনেও ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের ভিটে মাটিতে ফিরেনি।
সোমবার সহিংসতার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগী কমিশনার মোঃ রুহল আমীন ও চট্টগ্রাম বিভাগের পুলিশের ডিআইজ এসএম মনিরুজ্জামান রুনি।
উল্লেখ্য, গেল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইলের যৌথ খামার এলাকা থেকে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর ইউনিয়ন শাখার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ায় চালিম মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকান্ডের জন্য বাঙালীরা পাহাড়ীদেরকে দায়ী করে লংগদুতে বিক্ষোভ-মিছিল বের করেন। পরে তিনটিলা,পূর্ব ও পশ্চিম মানিকজোড় ছড়া ও বাত্যা পাড়া গ্রামে হামলা,লুটপাত ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এতে অন্ততপক্ষে আড়াই শতের অধিক ঘরবাড়ী আগুনে পুড়ে যায়।
জানা যায়,ঘটনার চার দিন পরও ক্ষতিগ্রস্থরা নিরাপদ আশ্রয় নেয়া স্থান থেকে তাদের ভিটে মাটিতে ফিরেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরন দেয়া হলেও ক্ষতিগ্রস্থরা ত্রাণ সহায়তা ফেরত দিয়েছেন। তবে তিনটিলা পাড়ায় পুড়ে যাওয়া অনেক পাহাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘরবাড়ী দেখতে আসলেও বিকালের দিকে তারা আশ্রয় নেয়া স্থানে ফিরে যাচ্ছেন। পাহাড়ীদের দাবী
পূর্ন নিরাপত্তা ,ঘরবাড়ি নির্মাণ ও ঘটনার দোষীদের শাস্তি না দেয়া পর্ষন্ত তারা ত্রাণসহ ভিটেমাটিতে ফিরে আসবে না।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৭ লক্ষ টাকার অনুদান ঘোষনা করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০ মে.টন চাল, ৬০ হাজার নগদ টাকা ও ৫০০টি কম্বল ত্রাণ সহায়তা হিসেবে লংগদুর ভারপ্রাপ্ত উপজেলার নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, অগ্নিসংযোগে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে লংগদু থানা পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গেল রোববারে গ্রেফতারকৃত ৫জনের মধ্যে ৩জনকে রাঙামাটি জেলা জজ কোর্টে পাঠানো হয়েছে। গেল শুক্রবার রাতে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৩শথেকে ৪শ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে।
লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম জানান, এ পর্ষ›ত ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, সোমবার অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগী কমিশনার মোঃ রুহল আমীন ও চট্টগ্রাম বিভাগের পুলিশের ডিআইজ এসএম মনিরুজ্জামান রুনি। এসময় জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নান ও পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান তাদের সাথে ছিলেন। এসময় লংগদু সদরের তিনতিলা বৌদ্ধ বিহারে আশ্রিত অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীদের সাথে কথা বলেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্থরা শুক্রবারের অগ্নিসংযোগের বর্ননা দেন। পরে তারা উপজেলা মিলনায়তনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও উপজেলা প্রশাসনের কথা আইন-শৃংখরা বৈঠকে যোগ দেন।
এসময় সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মীর শফিকুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার তারিকুল হাসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, আটারক ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ স্থানীয় সেনা জোনের কমান্ডার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজউল ইসলমাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি এবং পাহাড়ী-বাঙালি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইলে মাধ্যমে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সভায় বলেন,এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে। তাদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
সভায় চট্টগ্রাম বিভাগী কমিশনার মোঃ রুহল আমীন ও চট্টগ্রাম বিভাগের পুলিশের ডিআইজ এসএম মনিরুজ্জামান রুনি সকল সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা সহ সব ধরণের আতংক থেকে মুক্ত থাকা ও কোন রূপ বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার জন্য তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারের পাশে ৫০ সদস্যর একটি পুলিশ টিম অস্থায়ী ক্যাম্প ও ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত নিজ নিজ জায়গায় ফেরত এনে পুনর্বাসিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.