রাঙামাটির লংগদুর চারটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখতে বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দলের একটি কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, লংগদুতে পাহাড়ীদের বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। কিছু মহল অস্ত্র ও হুমকিকে দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে চাচ্ছে। তা কখনো হতে দেয়া হবে না। পাহাড়ীদের ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং নয়নের হত্যাকান্ডের জড়িতদের অবশ্যই আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ এ ঘটনা দেখতে এসেছেন তিনি উল্লেখ আরো বলেন, এ অঞ্চলে পাহাড়ী-বাঙালীদের সম্প্রীতি সম্পর্ক ছিল একটি দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে বিনষ্ট হয়েছে। পাহাড়ীদের বাড়ীতে যারা অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হবে। তিনি আরো বলেন, হত্যাকান্ডের ব্যাপার না জেনে শুনে,না তদন্ত করা অবস্থায় নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় হামলা করা তা অত্যন্ত নিন্দীয় ঘটনা। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের চিহিৃত করে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।
গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলের সম্বনয়ক মোহাম্মদ নাসিম এমপি’র নেতৃত্বে দশ সদস্যর কমিটির নেতৃবৃন্দ লংগদুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কমিটির মধ্যে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, ওয়াকার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল এমপি, রাঙামাটির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু।
এসময় সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মীর শফিকুর রহমান,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান,পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় কমিটির নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা বাত্যাপাড়া ও তিন তিলা এলাকা পরিদর্শন যান এবং ক্ষতিগ্রস্থরদের কথা শুনেন। এছাড়া কমিটির সদস্যরা নিহত মোটর সাইকেল চালক নয়নের বাসায় যান ও তার আত্বীয়দের সাথে কথা বলেন। পরে কমিটির সদস্যরা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। সেখানে স্থানীয় পাহাড়ী ও বাঙালীর নেতৃবৃন্দ বক্তব্যে রাখেন।
এদিকে, লংগদুর ৪টি গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাওয়া ঘটনার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার পঞ্চম দিনেও ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীরা ভিটেমাটিতে ফিরেননি। সরকারের দেয়া কোন ত্রাণ সহায়তা তারা নেননি। এ ঘটনায় বুধবার আরো এক জনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ৭জনকে গতকাল রাঙামাটি আদালতের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ৭দিনের রিমান্ড দাবী জানালে আদালত ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন, এ অঞ্চলের আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব রয়েছে এবং শান্তিতে বসবাস রয়েছে তা নষ্ট করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শ রয়েছে এ ঘটনায় যারা জড়িত যে দলের হোক তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা, ক্ষতিপূরণ ও পূর্ন নিরাপত্তা দেয়া হবে।
ওয়াকার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ঢাকায় ফিরে গিয়ে এ ঘটনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করা হবে। প্রত্যেকটি আদিবাসীদের বাড়ী পূনর্নিমাণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আর যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করা হবে। হত্যার ঘটনায় যে অপরাধী তাকে খুজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা চাই শান্তি চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন হোক। যেখানে চুক্তি পূর্ন বাস্তবায়নের জন্য সরকারসহ আমরা সকলেই চেষ্টা করছি সেখানে অরাজগতা সৃষ্টি করা হচ্ছে এটা দুরবিসন্ধিমূলক। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে পাহাড়ী গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়ানোর আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গেল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইলের যৌথ খামার এলাকা থেকে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর ইউনিয়ন শাখার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ায় চালিম মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন তিনি মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে লংগদু থেকে খাগড়াছড়ি যান। এ হত্যাকান্ডের জন্য বাঙালীরা পাহাড়ীদেরকে দায়ী করেছেন। শুক্রবার স্থানীয় বাঙালীরা নয়নের লাশ নিয়ে লংগদু সদরে মিছিলের সময় তিনটিলা,পূর্ব ও পশ্চিম মানিকজোড় ছড়া ও বাত্যা পাড়া গ্রামে হামলা,লুটপাত ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এতে দুই শতের অধিক ঘরবাড়ী আগুনে পুড়ে যায়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.