রাঙামাটির লংগদু পাহাড়ীদের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গণ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লংগদু উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত গণ শুনানিতে এতে প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার সুব্রত সাহা। কমিটির অন্যান্য মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক(যুগ্ম সচিব) দীপক কুমার চক্রবর্তী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য বাস্তবায়ন (যুগ্ম সচিব) মনজুরুল আলম, কমান্ডেন্ট এস পি এম এ মাসুদ, রাঙামাটির অতিরক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু শাহেদ চৌধুরী ও লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম।
গণ শুনানীতে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অংশ গ্রহন করেন। গণশুনাণীতে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য জানে আলম, লংগদু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নূর জাহান বেগম, লংগদু সদর উপজেলা পরিষদ পরিষদ চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমা আদু, আঠারকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা, মাইনি মুখ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক, বগাচত্তর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ও গুলশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাসির। এসময় তদন্ত কমিটির কাছে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন লিখিত আকারে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশ করেন।
গণ শুনানীতে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার ও তদন্ত কমিটির প্রধান ও সুব্রত সাহা বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথাবার্তা বলেছেন। তাদের দাবি দাওয়াও শুনেছেন। তার মতে,ঘটনার প্রাথমিকভাবে বুঝা গেছে এলাকায় আগে যে সম্প্রীতি ছিল তা নষ্ট করা হয়েছে। এলাকায় সম্প্রীতি কিভাবে ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারী ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন তদন্ত কমিটির কাছে পাহাড়ীদের ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের শাস্তি, আগুনে পুড়ে নিহত ৭০ বৎসর বয়স্ক গুনমালার চাকমা পরিবারকে ক্ষতিপুরণ ও দোষীদের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ পূর্নবাসনের লক্ষে ঘর নির্মানের বদলে নগদ অর্থ প্রদান, পাহাড়ীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ক্ষতিগ্রস্থদের তিন বছর পর্ষন্ত রেশন চালু ও ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের বইপত্র ও তাদের বৃত্তি প্রদানসহ ইত্যাদি বিষয়ে দাবী-দাওয়া লিখিত আকারে পেশ করেন বলে আঠারকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গেল ১ জুন দিঘীনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের খাগড়াছড়ি সদর থানার চার মাইল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি মোটর সাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে লংগদু থেকে খাগড়াছড়িতে গিয়েছিলেন। গেল ২জুন লংগদুর বাট্ট্যাপাড়া থেকে লংগদু সদর পর্যন্ত নয়নের লাশ নিয়ে স্থানীয় বাঙালীরা মিছিলের সময় তিনটিলা,মানিকজোড় ছড়া ও বাট্টাপাড়ায় পাহাড়ীদের ঘর বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে কমপক্ষে সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২১২টি পাহাড়ী ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। এসময় আগুনে পুড়ে মারা যান গুনমালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধা।
অপরদিকে, এই ঘটনায় লংগদু থানার পুলিশ উপ পরিদর্শক দুলাল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩/৪শ জন অজ্ঞাত জনকে আসামী লংগদু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে ২৯ জন অভিযুক্ত স্থানীয় বাঙালীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তারা জেল হাজতে রয়েছেন। অন্যদিকে পাহাড়ীদের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্থ কিশোর কুমার চাকমা গেল ১০ জুন লংগদু থানায় ৮৯ জনের নাম উল্লেখ করে তিনশ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া গেল ২১ জুন রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রে আদালতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুব মিয়া ৪৪ জন পাহাড়ী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.