প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় রক্তক্ষয়-সংঘাত ও অশান্তির পরিবেশ ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহিৃত করেই আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করেছে। শান্তি চুক্তির ইতোমধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের ভূমি অধিকার নিশ্চিতে পার্বত্য ভূমি কমিশন কাজ করছে উল্লেখ করে আরো বলেন, জমি-জমার মালিকানা সেই ব্রিটিশ আমলে করা আইন দিয়ে নয় বরং সব জায়গার মানুষ যেন তাদের ভূমির মালিকানাটা পায়, পার্বত্যবাসীও যেন সেরকম ভূমির অধিকার পায়, সে ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহবান জানিয়ে বলেন,পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কারণ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।
রোববার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল থেকে ভিডিও কনফরেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ি এলাকায় সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পে’র ৪ হাজার তম পাড়া কেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং ও ইউসিফের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডুয়ার্ড বেইগবেডার বক্তব্যে দেন। স্বাগত বক্তব্যে দেন পার্বত্য মন্ত্রনালয় সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী সভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনিতিকবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পাড়াকেন্দ্রেগুলোর ৪শ’ জন সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ি পাড়া কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে বক্তব্যে দেন রাঙামাটি আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। এছাড়া অনুষ্ঠানে পাড়াকেন্দ্রের ছাত্রী উমেনু মারমা, উপকারভোগী মা রোজিনা আক্তার, পিসিএমসি সভাপতি আশীষ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, হেডম্যান থোয়াই অং মারমা বক্তব্যে দেন। অনুষ্ঠানে এসময় প্রধানমন্ত্রী পাড়াকেন্দ্রের তিন বছর বয়সী ছাত্রী উমেনু মারমার কাছে গান শুনতে চাইলে উমেনু মারমা ভাষায় গান গেয়ে শোনায়।
ভিডিও কনফারেন্সে আরো উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা,জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান, জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার আলতাফ ইকবাল,জেলা পরিষদ সদস্য থোয়াই চিং মারমা, শান্তনা চাকমা, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, ইউএনও তারিকুল আলম, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুল হক,উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুই ছাইন চৌধুরী, চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী, কেপিএমের এমডি ড.এম এম এ কাদের,নারী নেত্রী নুর বেগম মিতাসহ আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাড়াকেন্দ্র নিয়ে একটি ভিডিও তথ্যচিত্রও পরিবেশিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ‘চিটাগাং হিলট্রাক্টস জার্নি টুওয়ার্ডস পিস এন্ড প্রসপারিটি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের একটা অঞ্চল অবহেলিত থাকবে এটা সরকার চায় না। পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছে তাঁর সরকার এবং এজন্য এটার বাস্তবায়নও সরকার করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আড়াইশ’র মত সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিয়েছি এবং সেখানকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) বিওপি তৈরী করে দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকার প্রধান বলেন, যারা অস্ত্র সমর্পন করেছিল তাদের পুলিশ এবং আনসার-ভিডিপিতে চাকরি দেয়া হচ্ছে।
তাদের জন্য প্রয়োজনে নীতিমালা পর্যন্ত শিথিল করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি তারা সিদ্ধ চাল খেতে পারে না, তাই আতপ চালের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল তাদের প্রশিক্ষণের সময়। এভাবে তাদের জন্য প্রতেকটি উদ্যোগ অত্যন্ত যত্নসহকারে করছে তাঁর সরকার।
এখান আধুনিক পদ্ধতিতে জমি-জমা চাষ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর জমি-জমার মালিকানা সেই ব্রিটিশ আমলে করা আইন দিয়ে নয় বরং সব জায়গার মানুষ যেন তাদের ভূমির মালিকানাটা পায়, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যেন তাদের ভূমির মালিকানাটা সেইভাবে নিতে পারে-আমরা সেই ব্যবস্থাই করতে চাই। কাজেই ঐ মালিকানা পার্বত্যবাসীরই থাকবে সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।
ভিডিও কনফারেন্সে কাপ্তাইয়ের মিতিঙ্গাছড়ির পাড়া কেন্দ্রে উপস্থিত বক্তব্যে রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার পার্বত্য চুক্তির অবশিষ্ট অংশ দ্রুত বাস্তবায়ন, দেশের একমাত্র কর্ণফুলী কাগজ কল ঠিকিয়ে রাখতে এবং কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বাঙালহালিয়া কলেজটি সরকারীকরনে ঘোষনা দিয়েছেন তা স্মরণ করিয়ে দেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক আইসিডি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী মার্চ মাসে, এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত কর্মচারীদের নতুন প্রকল্পে পুনরায় যোগদান করতে পারে দ্রুত একনেকে পাশের জন্য প্রধানমন্ত্রী কাছে দৃষ্টি আকষর্ন করেন। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য এলাকায় নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির জন্য জুম্মল্যান্ড নামের একটি সংগঠন বিভিন্ন সামাজিক অনলাইনে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আর্কষন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিসেফ কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়িতে ৪০০০তম পাড়া কেন্দ্রটি নির্মাণ করে। এই পাড়া কেন্দ্রে ৩ বছর থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশু শিক্ষা,স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিশুর মায়েদের নিরাপদ জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.