রাজধানী ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স যৌথ উদ্যোগে ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন সম্পন্ন হয়েছে। গেল ২২ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্ষন্ত এ কনভেশন অনুষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্র্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক ও কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব থুইক্যচিং মারমার স্বাক্ষরিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলরুমে কনভেনশন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনভেশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক, সিলেট চা-জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমাসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বিপুল চাকমার সঞ্চালনায় অধিবেশনে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় থেকে আগত প্রতিনিধিরা বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেন।
কনভেনশনের সমাপনী অধিবেশনে উপস্থিত থেকে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, বান্দরবান জেলা সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা।
দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই কনভেনশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান), সাভার, কাঁচপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, উখিয়া থেকে বিভিন্ন জাতিসত্তা, ছাত্র-যুবক-শ্রমিক ও নারী ও বিভিন্ন সংগঠনের পৌনে চার শতাধিক প্রতিনিধি পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
কনভেনশনে ইউপিডিএফের প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ও সারা দেশে অস্থির এক সময়ে ঢাকায় ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন খুবই গুরুত্ববহ। এই কনভেনশনের ওপর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের দৃষ্টি নিবন্ধ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ছাত্র-যুব-নারীসমাজ বর্তমান পরিস্থিতিতে কনভেনশন থেকে কর্মসূচি ও ঘোষণার প্রতীক্ষা করছে। দেশের সচেতন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদরা কনভেনশনের রাজনৈতিক প্রস্তাবনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কনভেনশনে উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাব, দাবিনামা-কর্মসূচি নিয়ে এলাকায় এলাকায় মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষকে সংগঠিত করার আহ্বান জানান।
প্রেস বার্তায় আরো বলা হয়, কনভেনশনে ৭ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাব, দাবিনামা ও কর্মসূচি হাউজে উপস্থিত সকলে হাত উঁচিয়ে ও করতালির মাধ্যমে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেন। কনভেনশনে উত্থাপিত দাবিনামাগুলোর মধ্যে রয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানপূর্বক নাগরিক মর্যাদা ও অধিকার প্রদান। প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান। প্রত্যেক জাতি ও জাতিসত্তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রদান করা, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে তার ঐতিহাসিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠাকরণ। সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন/মন্ত্রণালয় গঠন ও তাদের অধিকার বিশেষভাবে রক্ষা করা, প্রথাগত ভূমি অধিকার স্বীকৃতি দেয়া,পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অপারেশন উত্তরণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১দফা নির্দেশনা প্রত্যাহার, চাকমা সার্কেলের রাণীর ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের উপপযুক্ত সাজা,বিলাইছড়ির দুই মারমা বোনকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দোষীদের বিচার করে সাজা দেয়াসহ ইত্যাদি।
এছাড়া কনভেশন থেকে ৭ মার্চ মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ দিবসে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ,৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ,১০ মার্চ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপন দিবসে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ,১৫ মার্চ বান্দরবানে পালিত হবে ‘অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস এবং ৩১ মার্চ ‘ক্যজয় মারমার শহীদ দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় খাগড়াছড়িতে পালনের ঘোষনার কথা প্রেস বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.