মঙ্গলবার রাঙামাটির জুরাছড়িতে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালীর আয়োজন করা হয়েছে।
আলোচন সভায় বক্তারা বলেছেন, পার্বত্য এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন ও নির্বিচারে সবুজ বনায়ন নিধন এবং সেগুন গাছ ও রাবার বনায়নে পাহাড়ের মাটির গভীরের পানির স্তর কমে যাওয়াই পাহাড়ী ঝিরি-ঝর্ণা শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন শুস্ক মৌসুমে প্রান্তিক এলাকার জনগোষ্ঠীদের নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। পাহাড়ী এলাকায় ঝিরি-ঝরনায় পানির প্রবাহ ও উৎস বাচিঁয়ে রাখতে গ্রাম ভিত্তিক বন সংরক্ষণ, বাঁশ বাগান তথা সবুজ বনায়ন করতে হবে। এছাড়া ঝিরি-ঝরনা ও ছড়া-খালগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা জরুরী।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে ও ইউএনডিপির সহযোগীতায় জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সিএইচটি ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (সিসিআরপি) জেলা কর্মকর্তা শিশির স্বপন চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নব নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা,আল্পনা চাকমা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা, হেডম্যান মায়া নন্দ দেওয়ান, নারী কার্ব্বারী (গ্রাম প্রধান) রজিনা চাকমা, উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী, মৎস্য কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি চাকমা, ,কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী বাবুল চাকমা, ইউএনডিপির প্রতিনিধি ধীমান ত্রিপুরা প্রমুখ। এসময় গ্রাম ভিত্তিক বন রক্ষনাবেক্ষণ কমিটির প্রধান ও বিভিন্ন সরকারী সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে একটি র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।
এনজি কর্মী মিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য এলাকায় চির সবুজ বন ভূমি উজার করে বসবাসরত জনগোষ্ঠী সেগুন বাগানের দিকে ঝুকছে। ব্যপক সেগুন বাগান সৃষ্টির কারণে পাহাড়ের মাটির গভীরের পানির স্তর কমে যাচ্ছে এবং বর্ষার মৌসুমে প্রচুর মাটির ক্ষয় হচ্ছে। যার ফলে ঝরি ও ঝরনার পানির শুকিয়ে যাচ্ছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সিসিআরপি জেলা কর্মকর্তা শিশির স্বপন চাকমা বলেন, সারা পৃথিবীর ন্যায় পার্বত্য এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিলক্ষীত হয়েছে। যার ফলে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের অতিবৃষ্টিতে রাঙামাটি, বন্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ভূমি ধ্বসের কারণে ব্যাপক হারে জান-মাল ও অবকাঠামোর ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তদুপরি ভূমি ধ্বস পরবর্তী সময়ে দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানির প্রকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা অসংখ্য ঝিরি-ঝরনা, ছড়া থেকে নিরাপদ পানি আহরণ করেন। কিন্ত এ সব ঝিরি-ঝরনা গুলো অধিকাংশ মরে (শুকিয়ে) গেছে। বনভূমি উজাড়ই ঝিরি-ঝরনা, ছড়াগুলো মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ।
উপজেলা চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা বলেন, পানির স্তর ধরে রাখা সম্ভব না হলে আগামীতে নিরাপদ পানির আহরণের দুরহ হয়ে পরবে। সুতরাং প্রতিটি গ্রামে রিজার্ভ বা পাড়া বন সংরক্ষন করা বাঞ্জনিয়। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি অতিবগুরুত্বপূর্ন, তাছাড়াও স্থানীয় হেডম্যান ও কার্ব্বারীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনে অনুরোধ জানান তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.