পানীয় জলের চরম ভোগান্তিতে বন্দুকভাঙ্গার ছাক্রাছড়ি গ্রামবাসী

Published: 18 Apr 2020   Saturday   

একদিকে করোনা ভাইরাসের আতংক  অপরদিকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের চরম ভোগান্তিতে  পড়েছেন  রাঙামাটি সদর উপজেলার ৫ নং বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাক্রাছড়ি গ্রামবাসী।

 

জানা গেছে, রাঙামাটি সদর উপজেলার ৫ নং বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাক্রাছড়ি গ্রাম। এই গ্রামে ৩৫ পরিবারের বসবাস। গ্রামের বিদ্যালয়ের একটি মাত্র রিংওয়েল থেকে ৩৫ টি পরিবার পানীয় জল সংগ্রহ করে থাকেন। সাধারনত চৈত্র-বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে কাপ্তাই হ্রদের পানী শুকিয়ে গেলে আরো বেশি বিশুদ্ধ পানীয় জল ও ব্যবহার্য পানীর অভাব দেখা দেয়। কাপ্তাই হ্রদের পানী নেমে যাওয়ায় এলাকায় গোসল করার পানী পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকায় নেই কোনো বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব,শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া,যাতায়াতের রাস্তাঘাট নির্মাণ, এলাকাবাসীদের যাত্রী ছাউনি নির্মাণসহ কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া মেলেনি সে গ্রামে। বিভিন্ন সমস্যায় ঝরাঝীর্ণ গ্রামে  যেন নেই কোনো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

 

তবে অনেক পাহাড়ি ছোট্ট ঝিরিঝর্ণা থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয় এলাকাবাসীদের। অনেকে নদীর পাড়ে খোঁয়া খনন করে পানীয় জল ব্যবস্থা করে আসছে বহুবছর ধরে।  গ্রামে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়া করার মত নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসতে হয় নৌকা পথ দিয়ে। স্কুলে আসার সময়ে পানিতে পরে যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

 

 

একদিকে করোনার কারণে হাট-বাজার বন্ধ অন্যদিকে গ্রাম থেকে কাঁচামাল বাজারে আনার নেই কোনো ব্যবস্থা। কেউ করোনার ঝুঁকিতে বাজারে কাঁচামাল আনতে চাচ্ছে না। বাড়িতে নেই চাউল, নেই তেল, নেই প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। অনেকের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও এলাকার মেম্বারের সাথে আলোচনা করলেও পানীয় জলের জন্য নলকূপ,রিংওয়েল,টিউবওয়েল প্রতিস্থাপন, যোগাযোগের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ কোনটাই সুফল পাওয়া যায় হয়নি। মেম্বার, চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনার কেউ নেই। এলাকায় একটি রাস্তাও নির্মাণ হয়নি। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে রাস্তা নির্মাণ ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব নিরসনের জন্য পরামর্শ চাইলে এলাকাবাসীদের দুঃখের কথা শোনার কেউ আমলে নেয়নি বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন।

 

 এলাকার মুরুব্বী শান্তিময় চাকমা ও বিলেশ্বর চাকমা জানান, করোনায় মরতে তো ১৫ দিন লাগে। আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। সবার কপালে তো সরকারি ত্রাণ জোটে না। সে ত্রাণে কতদিন বা সংসার চলবে। একদিকে করোনা অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে আমাদের গ্রামে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো যেন দেখার কেউ নেই। নির্বাচনের কাছা-কাছি সময়ে মেম্বার ও চেয়ারম্যান যে প্রতিশ্রুতি দেয় নির্বাচনের পরে ভোটে জয়যুক্ত হওয়ার পরে তাদের সমস্ত প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়। যার কারনে এ গ্রামে কখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি। ৩৫ পরিবারে প্রায় ২৫০জন লোকের বসবাস। গ্রামে রয়েছে মাত্র ১টি রিংওয়েল।তাও রিংওয়েলটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।  ইউনিয়ন পরিষদ সৃষ্টি হওয়ার পরে আমরা এখনো কোনো উন্নয়ন দেখতে পাই নি। বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা ইউনিয়ন পরিষদ করে দিতে পারেনি। ১০ থেকে ১২ বছর আগে গ্রামে ২টি রিংওয়েল প্রতিস্থাপন করে ইউনিয়ন পরিষদ।

 

কিন্তু সেই ২টি রিংওয়েলর কাজ ২০১৯ সালেও শেষ হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ সৃষ্টির লগ্ন থেকে এ গ্রামে কোনো টিআর কাবিখা,টিআর কাবিটা কোনো সুফল পাই নি। গ্রামে বিদ্যালয়ে মাত্র ১টি রিংওয়েল দিয়ে ৩৫ পরিবারের পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। যা সমস্ত এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের রিংওয়েল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে থাকে।

 

তারা আরো বলেন,  মাত্র ১ টি রিংওয়েল থেকে ৩৫ পরিবারের পানীয় জলের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয় বলে অনেকে পাহাড়ের ঝিরিঝর্ণা থেকে এমনকি নদীর পারে খোঁয়া খনন করে পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করে। তবে সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ যদি চাইতো তাহলে এ গ্রামের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারতো। 

 

৫নং বন্দুক ভাঙ্গা ইউয়িনের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার চিত্র রঞ্জন চাকমা জানান, বন্দুক ভাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যে ছাক্রাছড়ি গ্রাম হচ্ছে অত্যান্ত দুর্গম এলাকা। যার কারনে সেখানে উন্নয়ন হতে একটু সময় লাগছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। সরকার যদি কোনো বরাদ্ধ না দেয় তাহলে এলাকার উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এলাকার সমস্যাগুলো অনেক আগে বলা হয়েছে। সেই ওয়ার্ডে বছরে ছোট-খাতো বরাদ্ধ হয়ে থাকলেও বড় ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়। তবে এর আগে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যেমে এলাকায় দু’টি রিংওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে সেগুলো অকেজো অবস্থায় পরে আছে। সেগুলোর সংস্কারের জন্য বছরে একবার বরাদ্ধ আসে। কিন্তু অসময়ে সে বরাদ্ধ আসলে সেগুলোর সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয় না। যার কারনে সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কাবিখা ও কাবিটার কোনো বড় ধরনের বরাদ্ধ না হলে সেখানে বরধনের কাজ করা সম্ভব নয়।

 

৫নং বন্দুক ভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান বরুন কান্তি চাকমা জানান, চেয়ারম্যান আরো বলেন, রিংওয়েল স্থাপনের প্রথম থেকেই পানি গোলা ও পানিতে আয়রন দেখা দিলে রিংওয়েলের নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়। তবে রিংওয়েলগুলোর সংস্কারের জন্য রির্পোট দেওয়া হয়েছে। আশা রাখি এবছরে বাকী থাকা কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

 

তিনি আরো জানান, আমরাও চাই এলাকার উন্নয়ন হোক। কিন্তু সরকার বরাদ্ধ না দিলে ইউনিয়ন পরিষদ কিভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করবে। তবে এলাকায় ছোট-খাতো রাস্তা নির্মাণ সম্ভব। সেক্ষেত্রে এলাকাবাসীদের রাস্তা নির্মাণে জায়গা দিতে হবে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত