মাসিক প্রতিটি নারী-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত

Published: 28 May 2020   Thursday   

রজ:স্রাব পিরিয়ড প্রতিটি নারী ও কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু এ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উন্নত দেশে গুরুত্বারোপ করা হলেও অনেক দেশে ও অনেক সমাজে এখনো তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখনো এ বিষয়ে পুরাতন ধ্যানধারণার মধ্যে রয়েছে, পিরিয়ড সংক্রান্ত আধুনিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অসচেতন। যার কারণে কোটি কোটি নারী ও কিশোরীদের পিরিয়ডকালে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

 

সে জন্য পিরিয়ড বা রজ:স্রাব স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে, সঠিক তথ্য জানাতে এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ মে পালিত হয় বিশ্ব পিরিয়ড বা রজ:স্রাব স্বাস্থ্যবিধি দিবস। এ বছরও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিশ্বব্যাপী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন এ দিবসটি পালন করছে। খাগড়াছড়িতেও জাবারাং, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা এবং খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও সিমাভীর সহযোগিতায় এ দিবসকে কেন্দ্র করে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে। এই বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল “মহামারীর সময়েও রজ:স্রাব থেমে থাকবে না, কাজেই এ বিষয়ে কাজ করার এখনই মোক্ষম সময়”। জার্মানি ভিত্তিক এনজিও ওয়াশ ইউনাইটেড ২০১২ সালে জনস্বাস্থ্যের সাথে জড়িত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূল সংগঠক, সামাজিক উদ্যোক্তা এবং জাতিসংঘের এজেন্সিসহ পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি (এমএইচএম) সম্পর্কে নীরবতা ভাঙতে এবং বিশ্বব্যাপী এই বিষয়ে তাদের দৃষ্টিআকর্ষণ করতে শুরু করে।

 

এর পর ২০১৩ সালের মে মাসে ওয়াশ ইউনাইটেড ২৮ দিনব্যাপী সামাজিক মিডিয়া টুইটারে এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণার মধ্যদিয়ে প্রথম পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করে। ২০১৪ সালে জার্মানি ভিত্তিক এনজিও ওয়াশ ইউনাইটেড কর্তৃক প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী ১৪৫টি সহযোগী সংগঠনকে সাথে নিয়ে নারী এবং কিশোরীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য শুরু করেছিলো এই দিবসের উদযাপন। বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪১০টির অধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠন এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। মে মাসের ২৮ তারিখ দিবসটি পালনের পিছনে একটি প্রতীকি অর্থ বা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তা হচ্ছে, নারীদের ঋতুচক্র গড়ে ২৮ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং পিরিয়ড গড়ে ৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেটি মাথায় রেখে প্রতীকি হিসেবে ২৮ তারিখ এবং পিরিয়ডের স্থায়িত্ব বিবেচনা করে বছরের ৫ম মাস হিসেবে মে মাসকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাই আয়োজকরা প্রতি বছর ২৮ মে কে বিশ্ব পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি দিবস(Menstrual Hygiene Day)  হিসেবে পালন করে আসছে।


পিরিয়ড বা মাসিক বা রজ:স্রাব নারীদেহের একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বা জৈবিক প্রক্রিয়া। তা সত্ত্বেও রজ: স্রাবকে কেন্দ্র করে সেই অতীতকাল থেকে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক মানুষের মধ্যেও (বিভিন্ন অঞ্চল, সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর মধ্যে) এখনো ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বিভিন্ন রীতিনীতি, সংস্কার ও কুসংস্কার (ট্যাবু) রয়ে গেছে। মূলত: এখনো সংস্কারের চেয়ে কুসংস্কারই বেশি দেখা যায়। অনেক পরিবার বা সমাজ বা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। যেমন- মাসিক হলে নারীরা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাওয়া যাবেনা বা প্রবেশ করা যাবেনা, রান্না করা যাবেনা, ভালো পোষাক পরতে পারবে না, বাইরে যাওয়া যাবে না, ছাত্রী হলে স্কুলে যাওয়া যাবে না, ভালো বিছানায় ঘুমানো যাবে না, পিরিয়ড চলাকালীন ঐ নারীকে ছোঁয়া যাবে না, ছুঁয়ে থাকলে  স্নান করে শুদ্ধি হতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় বা প্রচলিত আছে। এক কথায় অনেক সমাজে পিরিয়ড কালীন নারীকে অপবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

এটা আসলে আমাদের ভুল ধারণা এবং সামাজিক কুসংস্কার। তাই এই বিষয়ে সকলের বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক ধারণা থাকা উচিত। বয়ঃসন্ধিকালে প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর একটা শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এই সময় তাদের শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে তাদের মানসিক বিকাশও ঘটে থাকে। শারীরিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে কিশোরীদের পিরিয়ড শুরু হয়।


পিরিয়ড বা মাসিক কি ?
পিরিয়ড বা মাসিক নারীদেহের একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া এটি প্রতিমাসে একবার হয়, প্রায় ৫দিন পর্যন্ত স্থায়ীত্ব হয় এবং ২৮ দিন পর পর ঋতুচক্রটি ঘুরতে থাকে। এটি আমরা অঞ্চলভেধে মাসিক/পিরিয়ড/ঋতুস্্রাব/রজ¯্রাব (অন্য ভাষায় আরো নাম রয়েছে) ইত্যাদি বলে থাকি। সাধারনত ৯-১৩ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের প্রথম মাসিক/পিরিয়ড শুরু হয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে তা ১৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত গড়াতে পারে। প্রতি মাসে মেয়েদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বানু উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে একটি পরিপক্ক ডিম্বাণু ডিম্বনালির মধ্য দিয়ে জরায়ুতে আসে। এই সময় ডিম্বাণুটিকে ঘিরে জরায়ুতে রক্তের আবরণ তৈরি হয়। ডিম্বাণু, শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে মেয়েরা গর্ভধারণ করে। কিন্তু নিষিক্ত না হলে ডিম্বাণুটি নষ্ট হয়ে যায় এবং রক্তের আবরণসহ যোনীপথ দিয়ে রক্ত আকারে বের হয়ে আসে। এটিকেই আমরা সাদা চোখে দেখি, যাকে বলা হয় মাসিক/পিরিয়ড।


মাসিক সাধারণত ২৮ দিন পর পর হয়ে থাকে এবং সাধারণত ৩-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অনেকের ক্ষেত্রে তা ১০ দিন পর্যন্তও হতে পারে। মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে পরবর্তী মাসিকের আগের দিন পর্যন্ত সময়কে মাসিক/ঋতু চক্র বলা হয়। ব্যক্তি বিশেষে এই চক্রকাল ২৮ দিনের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে। তবে ১০ দিনের বেশি রক্তপাত হলে কিংবা ২৬ দিনের কম সময়ে পিরিয়ড হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অবশ্যই প্রয়োজন।


পিরিয়ড নিয়ে যেসব ভুল ধারণা বা কুসংস্কার রয়েছে, সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৬৪% (শতাংশ) কিশোরীই বয়:সন্ধিকালের আগে পিরিয়ড/ মাসিক সম্পর্কে জানে না। এই কারণে অনেক মেয়েকেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। মেয়েদের সঠিক সময়ে পিরিয়ড হওয়া তার শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার পূর্বশর্ত। তাই পিরিয়ড চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জানা থাকা তার অধিকার। এই অধিকার আদায়ে আমাদের সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পিরিয়ড শুরু হলে ভয় বা লজ্জা না পেয়ে পরিবারের বড়দের অর্থাৎ মা, মাসি, পিসি, দিদিদেরকে জানাতে হবে ও পরামর্শ নিতে হবে। বড়দেরও নৈতিক কর্তব্য ছোটদেরকে এই বিষয়ে আগে থেকে ধারণা দেওয়া। পিরিয়ড বিষয়ে কুসংস্কার ও অস্বস্তি কাটাতে পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরও রয়েছে সমান দায়িত্ব। এই সময় সুস্থ থাকার জন্য পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেমন- পিরিয়ডের সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা, স্যানিটারি প্যাড না থাকলে পরিস্কার সুতি কাপড় প্যাড হিসেবে ব্যবহার করা, প্রতিদিন গোসল করা, গোসলের সময় যোনিপথ ও এর চারপাশ পরিস্কার পানি দিয়ে পরিস্কার করা।


স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে পিরিয়ডের কাপড় বা প্যাড ভিজে গেলে ৪-৬ ঘণ্টা পরপর বদলাতে হবে তা না হলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের ঝুঁকি থাকে এবং নানা রোগ দেখা দিতে পারে। কাপড় বা প্যাড বদলানোর পর হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। প্যাড বা কাপড় ফেলার সময় কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলতে হবে। পরে তা ময়লা ফেলার জায়গায় অথবা গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে। পিরিয়ডে ব্যবহৃত কাপড়গুলো পরিস্কার করে ধুইয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে যাতে পরবর্তী পিরিয়ডের সময় তা ব্যবহার করা যায়।

 

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ৩১ মে ২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি কিশোরী ও নারী এখনও পিরিয়ডের সময় কাপড় ব্যবহার করে। তাদের অনেকে আবার একই কাপড় বার বার ব্যবহার করে থাকেন। আবার নারী ও কিশোরীদের একটি বড় অংশ অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে থাকেন। কিশোরীদের মাত্র ১০শতাংশ এবং বয়স্ক নারীদের ২৫ শতাংশ মাসিক/পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা স্বাস্থ্যসম্মত প্যাড ব্যবহার করেন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে মাসিক/পিরিয়ডের সময় অপরিস্কার পুরোনো কাপড় বার বার ব্যবহার করলে নারীরা নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এতে মূত্রনালি ও জরায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে। এসব সংক্রমণ থেকে জরায়ু ক্যানসার হওয়ার সম্বাবনা থাকে। এছাড়া পুরোনো অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া দেশের বিশাল একটা অংশ দরিদ্র হওয়ায় তারা উচ্চ মূল্যে স্যানিটারী প্যাড ক্রয় করতে পারে না।


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারী বান্ধব টয়লেট না থাকা: দেশে বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টয়লেট পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি উপযোগী নয়। সে কারণে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিনিয়ত মেয়েদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

 

সমাজের সকল স্তরেই মেয়েরা এখন প্রায় সমান ভুমিকা রেখে চলছে। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই তাদের অংশগ্রহন প্রায় সমান সমান। তাই সকল স্তরেই মেয়েদের পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি উপযোগী টয়লেট এখন সময়ের দাবী। মাসিক/পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে নারী ও কিশোরীরা। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে প্রায় ৮৬ শতাংশ ছাত্রী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন ( দৈনিক সমকাল, সম্পাদকীয় ও মন্তব্য কলাম, প্রকাশ- ২৮ মে ২০১৯)। তাদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব টয়লেট থাকা প্রয়োজন। একই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে সচেতন ও সংবেদনশীল হতে হবে এবং নারীবান্ধব অনুকুল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্টপোষকতা, উদ্যোগ, সহায়তাছাড়া এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করা আদৌ সম্ভব নয়। শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়; কর্মক্ষেত্রেও তা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।


পিরিয়ড চলাকালীন খাবার: মাসিকের সময় শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যায়। তাই এই সময় মেয়েদের শরীরে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়, তা পূরণে বেশি করে পুষ্টিকর, আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। আর এসব উপাদান পাওয়ার জন্য বাজার থেকে দামী জিনিস কিনে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কচুশাক, লাউশাক, পাটশাক, লালশাক, কলা, গুড়, ডিম ও শুঁটকি খেতে হবে। সম্ভব হলে কলিজা, মাছ ও মাংস খাওয়া যেতে পারে। শুঁটকি মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও প্রোটিন এবং ডিম, দুধ, দই, ছোট মাছ ও মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। মাসিকের সময় এগুলো খেলে মেয়েদের শরীরে সৃষ্টি হওয়া ঘাটতি পুরণ হবে। পরিবারে বিশেষ করে পিরিয়ডকালে কিশোরীদের খাবার-দাবারের বিষয়ে অভিভাবকদের গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত অপরিহার্য।


সুপারিশমালা:
পিরিয়ড বা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে দেশের সর্বস্তরে সফলভাবে কার্যকর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নে কিছু সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হলোঃ
১. পরিবারের সকল সদস্যকে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নারী ও কিশোরীদের পাশে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।
২. মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কারগুলো দূরীকরণে সমাজের প্রথাগত নেতৃত্ব, সামাজিক নেতৃত্ব, ধর্মীয় গুরু, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ইতিবাচক ও সহায়তামূলক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
৩. জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহার করে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদারর করতে হবে।
৪. ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০ অনুযায়ী ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট এবং পর্যাপ্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ও পরিষ্কারের সুবিধা প্রদানের জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে ।
৫. ২০১৫ সালে উন্নত সুবিধাসহ সাবান ও পানির ব্যবস্থা এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর মেয়েদের শিক্ষা দেয়ার জন্য নারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনা সব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিশীঘ্রই বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাডের ব্যবহার বৃদ্ধি করার স্বার্থে প্যাডের দাম কমিয়ে সহজলভ্য করার জন্য ভর্তুকি প্রদানসহ সরকারিভাবে বহুমুখি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. সেক্টর উন্নয়ন পরিকল্পনা (এসডিপি) ২০১১-২০২৫-এর নির্দেশনা অনুসারে, ১ঃ১৮৭-এর পরিবর্তে ১ঃ৫০ জন ছাত্রীর জন্য নতুন এবং পৃথক টয়লেট স্থাপন ও পরিচালনার জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
৮. নারীদের সকল কর্মক্ষেত্রে (সরকারি- বেসরকারি সকল কার্যালয়সহ) পিরিয়ড বা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: ডাঃ স্যুইচিং অং মারমা, ডিএইচএমএস, বিএইচবি-ঢাকা এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার, তৃনমূল উন্নয়ন সংস্থা, খাগড়াছড়ি ।


তথ্য সূত্র :

১. https://www.prothomalo.com/menstrual-hygiene-day
২. https://www.prothomalo.com/opinion/article/1499801/, ৩১ মে ২০১৮,
৩. https://rituonline.org
৪. https://samakal.com/todays-print-edition/tp-editorial- 28 †g 2019 comments/article/19054965/মাসিক-ব্যবস্থাপনা
৫. http://www.womennews24.com/ঋতু-বা-মাসিক-প্রশ্নে-নীরবতা-ভাঙুন/6850?fbclid=IwAR3MXNpfyXLX74-0rcL0v_jS9FNgsn_cBAw9u5MIxn768nawEyH3pBxe02I
৬. https://bn.wikipedia.org/wiki/রজঃস্রাব_স্বাস্থ্যবিধি_দিবস
৭. https://www.globalwaters.org/events/menstrual-hygiene-day-2020
৮. https://halderviolet.wordpress.com/2017/09/14

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/ইআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত