জুম্ম জাতীয় জাগরনের অগ্রদূত এমএন লারমার আজ ৩৮তম মৃত্যূ বার্ষিকী

Published: 10 Nov 2021   Wednesday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা,সাবেক সাংসদ ও জুম্ম জাতীয় জাগরনের অগ্রদূত মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার(এমএন লারমা)  আজ মঙ্গলবার ৩৮তম মৃত্য বার্ষিকী। এমএন লারমা ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য। তিনি তার মৃত্যুর আগ পর্ষন্ত পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। মহান এই নেতার মৃত্যূ বার্ষিকী উপলক্ষে জনসংহতি সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন স্মরণ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।  

 

এমএন লারমা ১৯৩৯ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহাপুরম নামক স্থানে(বর্তমানে কাপ্তাই বাধের কারণে বিলুপ্ত) জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা চিত্ত কিশোর লারমা, মাতা শুভাষিনী দেওয়ান। এমএন লারমার তিন ভাই ও এক বোন। সবার বড় জ্যোতি প্রভা লারমা(মিনু) ছিলেন একজন সমাজকর্মী। বড় ভাই শুভেন্দু লারমা(বুলু) ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী, দক্ষ সংগঠক ও বিপ্লবী। সব চেয়ে ছোট ভাই বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। 

 

এমএন লারমা ১৯৫৮ সালে রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে আইএ পাস এবং একই কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে ১৮ জুন তিনি পার্বত্য ছাত্র সমিতি নামে একটি সংগঠন গঠন করেন এবং সর্ব প্রথম পাহাড়ি ছাত্র সন্মেলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন। ১৯৬০ সাল আদিবাসী জনগণের জন্য এলো এক বিভাষিকাময় বছর। সে সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ প্রকল্প বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। পাকিস্তান সরকার ১৯৬৩ সালে ১৫ ফের্রুয়ারী রাষ্ট্রদ্রোহিতা অভিযোগ এনে তাঁকে গ্রেফতার করে এবং প্রায় দু বছর জেলে রাখার পর ১৯৬৫ সালে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭০ সালে এমএন লারমা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং একই বছর পাকিস্তান প্রদেশিক পরিষদে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে ১৫ ফের্রুয়ারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয় এবং তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। পরে তিনি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিপুল ভোটে জয়ী হন।

 

পাহাড়ী জনগনের  আত্ননিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তৎকালীন সময়ে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে আত্নগোপণ করেন এমএন লারমা এবং তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী জনগণের আত্ননিয়ন্ত্রাধিকার আদায়ের লে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সামরিক উইনিং ‘শান্তি বাহিনী, নামে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮২ সালে ২৪ জুন জনসংহতি সমিতির দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এ সন্মেলনের পর আদর্শগত ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে জনসংহতি সমিতি শেষ পর্ষন্ত দ্বিধাবিভক্ত হয় এবং ১৯৮৩ সালের ১৪ জুন সর্ব প্রথম লারমা গ্রুপ (লম্বা) ও প্রীতি গ্রুপ (বাদি) পরস্পর সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৯৮৩ সালে ১০ নভেম্বর বিভেদপন্থীরা হামলা চালালে এমএন লারমাকে তার আটজন সহযোগীসহ নিহত হন।

 

তবে তার মৃত্যু হলেও তার আদর্শ ও সংগ্রামকে ধারন করে দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সশস্ত্র সংগ্রাম করে জনসংহতি সমিতি তথা তৎকালীন শান্তি বাহিনী। অবশেষে পাহাড়ীদের অধিকারের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা সাথে বাংলাদেশ সরকার ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করে।  এমএন লারমা শুধু পাহাড়ের মানুষের নেতা ছিলেন না। তাঁর সংগ্রাম ছিল দেশের সব নিপীড়িত মানুষের পক্ষে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে। সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আদর্শ  ও অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছেন এই মহান নেতা এমএন লারমা। 

 

এদিকে, মঙ্গলবার রাঙামাটিতে এমএন লারমার ৩৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন রাঙামাটিতে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র‌্যালী, অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, শোক সভা, প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বালন ও ফানুস  বাতি উড়ানো। এছাড়া শহরের দেবাশীষ নগর এলাকায় এমএন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশন ও এমএন লারমা স্মৃতি গণ পাঠাগারের উদ্যোগে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত