জুরাছড়িতে এক হাজারের অধিক শিশুর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত

Published: 27 Jul 2015   Monday   

ঈদের ছুটি শেষ-সব স্কুল খুলেছে। কিন্ত রাঙামাটি জুরাছড়ি উপজেলার ২৫টি বেসরকারী স্কুল খুলেনি। ফলে এসব স্কুলের ১হাজার ১৫জন শিশুর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ সব স্কুলে পড়া  পিএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ’র যৌথ পরিচালনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা দান প্রকল্পের সকল কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা  গেছে। এর জন্য সরকার ও জেলা পরিষদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন শিশুদের অভিভাবকরা। পাহড়ের শিশুদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বেকার হবে এসব স্কুলের ৭৫ জন শিক্ষক।

সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে সরকারের সহ¯্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা অর্জণের লক্ষ্যে পূরণে সরকারকে সহযোগিতা করতে ইউএনডিপি ২০০৬ সালে পরিকল্পনা হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২০১০ সাল থেকে  রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ’র যৌথ পরিচালনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা দান প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায়  জুরাছড়ি উপজেলা সদর-৭ টি, বনযোগীছড়া-২ টি, মৈদং- ৪টি এবং দুমদুম্যা-১২টি বিদ্যালয় নির্মাণসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড শেষে ২০১০ সালে জানুয়ারীতে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়।

সূত্র মতে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্যাঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা। স্কুল বিহীন এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। সমষ্টিগতভাবে স্কুলগুলোকে সহযোগিতাসহ স্কুলের জাতীয়করণ করা।

সূত্র আরও জানায়,  ২০১৩ সালের জুন ৩০ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে পরে ২০১৫ সালের ৩০ জন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কথা ছিল প্রকল্প চলাকালীন সময়র মধ্যে স্কুলগুলো জাতীয়করণ করা। তারই অংশ হিসেবে প্রতিটি স্কুলে ৪ জন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্ত এই প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় সবই অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে।

প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশ অনিশ্চুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, স্কুলগুলো জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রীর বেশ আন্তরিকতা ছিল। কিন্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সরকারের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে এ দশা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে পিছিয়ে ছিল অঞ্চলটি। তাই শুরুতে সবাই এই প্রকল্পকে প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর শিক্ষা উন্নয়নের স্বার্থে এই স্কুলগুলো জাতীয়করণ হোক তা সরকারের একটি অংশ চায়নি।

সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, লক্ষ্যহীন গন্তব্যের মধ্যে প্রকল্পটি মেয়দ বাড়ানো রাজি নয় ইউএনডিপি। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পটির সকল কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বালিশ পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রূপা চাকমা বলেন, স্কুলগুলো জাতীয়করণ হবে এ আশায় স্বল্প বেতনে এত বছর স্কুলের প্রতি বেশ মনযোগী ছিলাম। কিন্ত এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।

জুরাছড়ি ইউনিয়নের পেকপাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল বিকাশ চাকমা বলেন, গত জুন মাস থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়েছে। পরিবারের উপার্জনের জন্য স্কুলের ক্লাস শেষে দিনমজুর করতে হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত স্কুলে পাঠদান করানো এখন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

দুমদুম্যা ইউনিয়নের অভিভাবক কালা চোগা তংঞ্চঙ্গ্যা বলেন, স্কুলগুলো হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া অনিশ্চি হয়ে পড়েছে। তিনি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, স্কুলগুলো যেন বন্ধ হয়ে না যায় তা স্থানীয় পর্যায় থেকে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া জেলা পরিষদ স্কুলগুলো টিকিয়ে রাখতে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত