বান্দরবানে আদিবাসী জুমিয়া পল্লীতে চলছে নবান্নের উৎসব

Published: 22 Sep 2015   Tuesday   
বান্দরবান পাহাড়ে জুম চাষের দৃশ্য,জুম ধান কাটা ব্যস্ত এক আদিবাসী নারী--ছবি বান্দরবান প্রতিনিধি।

বান্দরবান পাহাড়ে জুম চাষের দৃশ্য,জুম ধান কাটা ব্যস্ত এক আদিবাসী নারী--ছবি বান্দরবান প্রতিনিধি।

পাকা জুম ধানের ম-ম গন্ধে ভরে উঠেছে বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদ। জুমের নতুন ধান ঘরে তোলা উপলক্ষ্যে পাড়ায় পাড়ায় এখন চলছে জুমিয়া পল্লীতে নবান্নের উৎসব। এ উৎসবে মেতেছে শিশুসহ সকল বয়সের নারী পুরুষরা। 

জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের পাদদেশে গাছ-গাছালি কেটে আগুনে পুড়িয়ে জমিতে যে চাষ করা হয় তার নাম হচ্ছে জুম চাষ। জুম চাষ  আদিবাসীদের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা হলেও এটি একটি জীবন জীবিকার উৎসও বটে। সাধারনত পৌষ-মাঘ (জানুয়ারী-ফের্রুয়ারী) মাসে পাহাড়ের ঢাল পরিস্কার করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে মাটি উপযুক্ত করা হয়। এর পর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ(এপ্রিল-মে) মাসে পাহাড়ে বর্ষা শুরু হওয়ার পূর্বে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধানসহ নানা সব্জির বীজ বপন করা হয় এবং শ্রাবণ-ভাদ্র (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে জুমের ধান পেকে থাকে। জুমিয়ারা জুমে যেসব ধান রোপন করে থাকেন সেগুলো হল সোনালী, বাদোয়ে, কনক চাপা ও গেলং, কবরক, গেলং, গুড়ি চিনেল, রাঙা গেলং, রেঙ্গই, বিন্নি।

এসব ধান স্বাদ ও গন্ধ আলাদা এবং সুগন্ধি এবং আঠালো হয়ে থাকে। জুম ধানের সাথে শাক-সব্জির মধ্যে ভূট্টা, মারপা, মরিচ, বেগুন, শসা, শিম, তিল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙে, করলা, ফোরল, পাহাড়ি আলু, শাবারাং (এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত সবব্জি) জুমিয়া কচু বপণ করে থাকে। এছাড়াও আর্থিক লাভের আশায় জুমে ধানের সাথে তূলা, হলুদ ও সত্রং ফূলের (গাঁদা ফূল) চাষ করা হয়। তবে আজকাল জুম চাষীরা সেই সত্রং ফুল আর চাষ করেন না। শুধুমাত্র আর্থিক লাভের আশায় বর্তমানে ধানের সাথে হলুদ ও আলু চাষ করে থাকেন জুমিয়ারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর পাহাড়ের আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বান্দরবানে জুমের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এবার জেলায় ৮হাজার ৯৩৭ হেক্টর পাহাড়ী জুম ভুমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ১টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।

এদিকে জুমের নতুন ধান ঘরে তোলার পর প্রতিটি জুমিয়া পাড়ায় পাড়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে নবান্ন উৎসব। জুমিয়া কৃষকরা নতুন ধানের চাল দিয়ে নানা ধরনের পিঠা তৈরী করে ও জুমে উৎপাদিত বিভিন্ন ফল অতিথিদের সম্মানে পরিবেশন করে থাকেন। পাশাপাশি নবান্ন উৎসবের সাথে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এ উৎসবে পাড়ার সকল বয়সের নারী পুরুষদের মধ্যে মিলন মেলায় পরিনত হয় এবং সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্বের সেতু বন্ধন। জুম চাষ পদ্ধতি সমতলের ছেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী হওয়ায় এবং জুম ধানের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও স্বাদুযক্ত গন্ধ হওয়ায় বাজারে জুমে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা বেশী রয়েছে।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান,জুম এবছর পরিবেশ অনুকুলে থাকায় বান্দরবান জেলায় ৮ হাজার ৯৩৭ হেক্টর জুম ভুমিতে জুম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর ৪ দশমিক.১টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত