আলীকদমের শাবনুর নিজের বাল্যবিবাহ রোধ করে সমাজকে দেখিয়ে দিলেন

Published: 27 Nov 2016   Sunday   

শাবনুর আক্তার (১৪) পিতা- মো. জামাল, মাতা মোছা. হাজেরা বেগম, বান্দরবান জেলাধীন আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। সে নিজের বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করে সমাজ সভ্যতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তারা অবলা নয়; প্রতিবাদ করতে জানে। বাল্য বিবাহ সমাজ-রাষ্ট্র’র একটি বড় ব্যাধী।

 

মান্ধাতামলের অসভ্য এই প্রথাটি নারীর প্রতি এক চরম নিষ্ঠুরতাও বটে। সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংগঠনগুলো নারী নির্যাতন রোধ ও নারীর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে বাল্য বিবাহ রোধে সচেতনতা মূলক নানান রকম কাজ করে যাচ্ছেন।

 

 আলীকদমে গ্রীন হিল নামের একটি বেসরকারী উন্নয় সংস্থার (এনজিও) সচেতনতারমূলক ও বিভিন্ন রকম প্রচারণায় বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে অবহিত হন শিশু-কিশোরীরা। এর বাস্তবতা রূপ মিলেছে আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী শাবনুর আক্তারের বেলায়।

 

গ্রীন হিল শিখা প্রকল্পের কমিউনিটি সুপারভাইজার মংছিংপ্রু মার্মা জানান, বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে। বাল্য বিবাহ একটি মারাত্মক সমস্যা। ইউনিসেফের শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের শতকরা ৬৪শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন অনুসারে ছেলেদের বিবাহের বয়স নুন্যতম একুশ এবং মেয়েদের বয়স আঠারো হওয়া বাধ্যতামূলক৷ অশিক্ষা, দারিদ্রতা, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারনে এ আইনের তোয়াক্কা না করে বাল্য বিবাহ হয়ে আসছে। বাল্য বিবাহের প্রধান কুফল: নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারনে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মা হতে গিয়ে প্রতি ২০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন।

 

অন্যদিকে প্রতি ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক। নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানান শারীরিক ও মানসিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনটি বাস্তবায়নে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রচার-প্রচারনা করে যাচ্ছেন। এনজিও সংগঠনগুলোর গ্রাম পর্যায়ে উঠান বৈঠক ও মা সমাবেশ এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ প্রভাব ফেলছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎ্ক্ষণিক ঘটনা স্থলে গিলে বিবাহ বন্ধ করা হচ্ছে। এত কিছু পরেও সমাজে বাল্য বিবাহ ঠেকানো যাচ্ছে না।

 

এনজিও কর্মী আরো জানান, এ বাস্তবতায় বান্দরবান জেলাধীন আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী শাবনুর আক্তার (১৪)। তার নিজের বাল্য বিবাহ রোধ করে দৃষ্টান্তÍ স্থাপন করলেন। নিজের নির্বোধ অভিভাবক ও সমাজ সভ্যতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, বাল্য বিবাহ একটি অপরাধ ।

 

জানা গেছে, গত সাড়ে তিন বছর ধরে আলীকদম উপজেলায় গ্রীন হিল নামের আমাদের এই সংস্থা (এনজিও)টি এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, বাল্য বিবাহ নিয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিসহ নারী বান্ধব কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।

 

উপজেলার ঠান্ডামিয়া মেস্তরীপাড়ার বাসিন্দা মো. জামাল-এর ৭ম শ্রেণিতে পড়–য়া শাবনুরকে চকরিয়া উপজেলার হারবাং বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা মো. আশিক-এর সাথে বিবাহ ঠিক করেন উভয়ের পরিবার। এ অবস্থায় ২৫ নভেম্বর বিবাহের প্রাথমিক আয়োজন শুরু হয়। ৭ম শ্রেণির ছাত্রী শাবনুর বাল্য বিবাহের বিষয়ে ইতোপূর্বে এনজিও গ্রীন হিলের এসংক্রান্ত সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কর্মসূচী অবলকন ও প্রত্যক্ষ করে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে অবহিত হন। তাই সে নিজের বিবাহ বন্ধে তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, এই বেআইনি কাজটি রোধ করেন।

 

আলীকদমের মেয়ে শাবনুর আক্তার (১৪) নিজের বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করে সমাজ সভ্যতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তারা অবলা নয়, প্রতিবাদ করতে জানে। বাংলার সবকটি গ্রামে শাবনুরদের জম্ম হওয়া দরকার। সে সাথে আলীকদমে দরিদ্র পরিবারের সন্তান ৭ম শ্রেণির ছাত্রী শাবনুর আক্তারকে তার প্রতিবাদি ভুমিকার জন্য পুরুস্কৃত করা দরকার বলে সচেতন সমাজ মনে করেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত