আরবের মরু অঞ্চলের খেজুর এখন কাপ্তাইয়ে

Published: 23 Apr 2017   Sunday   

সৌদি আরবের মরুভূমি অঞ্চলের খেজুর উৎপাদনে সফল হয়েছে কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। ফলে এদেশের আবহাওয়া উপযোগী মরু অঞ্চলের খেজুর উৎপাদনের দ্বার খুলে দিয়েছে।

 

ইতিমধ্যে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে খেজুর বাগান সৃজনের জন্য চারা সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এতে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশে সর্ব প্রথম বাণিজ্যিকভাবে মরুর খেজুর উৎপাদন করে সফল হয়েছে ময়মনসিংহ জেলাধীন ভালুকার আব্দুল মোতালেবের খেজুর বাগানে। এর পরেই কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের এ খেজুর উৎপাদন সম্ভব হল।


রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ সালে কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা সৌদি আরব থেকে সরাসরি কয়েক’শ খেজুরের বীজ নিয়ে এসে গবেষণার কাজ সম্পন্ন করে সেগুলোর চারা মাঠ পর্যায়ে রোপন করে। কয়েক’শ চারার মধ্যে এ বছর মাত্র ২০টি গাছে ফুল আসে। এর মধ্যে কয়েকটি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। যার আকার ও আকৃতি খুবই আর্কষণীয়। ফলগুলো লম্বায় ৪ থেকে ৪ দশমিক ৬০ সেঃমিঃ লম্বা হয় এবং প্রস্থে ২ থেকে ২ দশমিক ৫০ সেঃমিঃ হয়। একেকটি খেজুরের ওজন ১২ থেকে ১৫ গ্রাম এবং বীজের ওজন প্রায় আধা গ্রাম হয়। এ খেজুরের আদিনিবাস মেসোপটেমিয়া। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ফিনিক্স ডেকটাইলিফেরা (Phoenix dactylifera)।

 


এ খেজুরের স্ত্রী পুরুষ উভয় গাছে ভিন্ন ভিন্ন ফুল আসে। ফলের ভালো আকার আকৃতির জন্য পুরুষ ফুলের রেণু খুবই প্রয়োজনীয়। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করলে স্ত্রী গাছ পাওয়ার হার খুবই কম। তাই খেজুর গাছের গোড়ার চারপাশের সাকার বা তেউড় আলাদা করে খেজুরের বংশ বিস্তার করাই উত্তম। এতে মাতৃ গুণাগুণ বজায় থাকে। তেউড় আলাদা করার মৌসুম হল বর্ষাকাল। চারার ব্যাস ১০ সেঃমিঃ এবং ওজন ১৫-২০ কেজি হলে বসানোর উপযুক্ত হয়। তেউড় বসানোর আগে বেশ কিছু পাতা কেটে দেওয়া হয়। এসব চারায় সাধারণ শিকড় থাকে না। তাই ছোট তেউড় আলাদা করে নিয়ে নার্সারীর কেয়ারীতে বসিয়ে সবল করে শিকড় তৈরি করে নেওয়া হয়।

 

গাছ বসানোর ৪-৫ বছর পর ফুল এলেও ভালো ফলনের জন্য আরো ২-৩ বছর কোন কোন ক্ষেত্রে ৬-৭ বছর লেগে যায়। ফুল ফোটা থেকে শুরু করে ফল পাঁকা পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ১৮০-১৯০ দিন। ফল পাঁকার সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এর জন্য খুবই ক্ষতিকর। মূলত দেশী খেজুর শেষ হওয়ার ২-৩ মাস পর আরবের খেজুরগুলো পাঁকতে শুরু করে। এদেশের আবহাওয়া অত্যন্ত চমৎকার বিধায় সৌদির খেজুর ব্যাপক ভাবে চাষাবাদ করা যেতে পারে।


এ খেজুর পুষ্টিমানে ভরপুর। ভিটামিন ‘এ ও বি’ সমৃদ্ধ এ খেজুরের প্রতি ১শ’ গ্রাম শাঁসে ২৮২ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। ফলের মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণ খনিজ লৌহ। প্রতি ১শ’ গ্রাম শাঁসে রয়েছে শতকরা ২৪ দশমিক ১ ভাগ জলীয় রস, প্রোটিন ৩ ভাগ, øেহ ২ ভাগ, খনিজ ১ দশমিক ৩ ভাগ, আঁশ ২ দশমিক ১ ভাগ, শর্করা ৬৬ দশমিক ৩ ভাগ, ক্যালসিয়াম ৭ ভাগ, ফসফরাস ৮ ভাগ, লৌহ ১০ দশমিক ৬ ভাগ।


এ খেজুর চাষের ক্ষেত্রে বাড়তি কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তবে ফুল থেকে ফল নামানোর সময়টুকু নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। কারণ ফল কাটার মৌসুমে আমাদের দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশী থাকে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সূত্রে জানা যায়, আরবের খেজুর নিয়ে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারা আশা করছেন গবেষণার মাধ্যমে খুবই শীঘ্রই আরবের খেজুর এদেশের মাটিতে জাত হিসাবে অবমুক্তায়িত করা সম্ভব হবে। এতে অল্প সময়ে কম খরচে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মরুর খেজুর চাষ করা সম্ভব হবে।

 

এক সময় আসবে সেসময় সৌদি আরব থেকে আর খেজুর আমদানীর প্রয়োজন হবে না। সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যে পাহাড়ী অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য অনেকেই ইতিমধ্যে চারা সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ খেজুর চাষে ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভবনা রয়েছে বলে গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানায়।

 

এদিকে খেজুর গাছে ফল আসলেও নতুন করে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে সদ্য যোগদানকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ আলতাফ হোসেন জানান।

 

এসব সমস্যার মধ্যে বিশেষ করে খেজুর গাছে পচন ধরে গাছ মরে যাওয়ার মত সমস্যাটি প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এর কারন উদঘাটনের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে সঠিক জমি নির্বাচন না করায় গাছের এ পচন রোগ দেখা দিয়েছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিঅার.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত