লংগদুতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩শ থেকে ৪শ ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা,১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

Published: 03 Jun 2017   Saturday   

রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর শাখার ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নকে হত্যার জের ধরে পাহাড়ীদের বাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠা কারণে শনিবার  দুপুর ২টা থেকে জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এলাকায় নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার রয়েছে।

 

এদিকে, শুক্রবারের লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলাসহ চারটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩শ থেকে ৪শ ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।  এ  ঘটনায় পুলিশ শনিবার পর্ষন্ত ৭ জনকে আটক করেছে ।

 

লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা,বাত্যাপাড়াসহ চারটি গ্রামে সংঘটিত অগ্নিসংযোগের ঘটনার ঘটনাস্থল শনিবার পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নান ও পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান। এসময় জেলা প্রসাশক উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে জরুরী আইন-শৃংখলা সভাও করেছেন তারা। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নান। সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নান এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠায় জারিকৃত ১৪৪ প্রত্যাহারের ঘোষনা করেন। এছাড়া  সভায় শুক্রবারের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় যে সমস্ত পাহাড়ী লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিজেদের বাড়ীঘর থেকে প্রাণ রক্ষার্থে পালিয়েছেন তাদেরকে স্ব স্ব এলাকায় ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন, যাদের ঘরবাড়ী আগুনে পুড়ে গেছে তাদের লংগদু উপজেলা সদরে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ এবং শুক্রবারের সহিংসতায় যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তাদের খুঁজে বের করা   নিহত নয়নের প্রকৃত হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সমূহের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

 

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সাইদ তারিকুল হাসান, সেনাবাহিনীর লংগদু জোনের জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আবদুল আলীম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম, লংগদু উপজেলার চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমা (আদু) ও আদারক ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক সহ উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও উপজেলা পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে সভায় পাহাড়ী পল্লীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি নিহত যুবলীগ নেতা হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।

 

এদিকে অগ্নিাকান্ড সংযোগ,হামলা ও পুলিশের উপর আক্রমনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩শ থেকে ৪শ ব্যক্তিকে আসামী করে গেল শুক্রবার রাতে লংগদু থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শনিবার দুপুর পর্ষন্ত ৭ জনকে আটক করেছে। তাদের জেলা জজ কোর্টে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতরা হল,শরিফুল, মোক্তার,শরিফ,সাইফুল,শাহ আলম, তোহিদ ও আবুল কালাম।

 

লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোমিনুল ইসলাম সত্যতা স্বীকার করে জানান,অগ্নিসংযোগ,হামলা ও পুলিশের উপর আক্রমনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩শ থেকে ৪শ ব্যক্তিকে আসামী করে শুক্রবার রাতে লংগদু থানায় মামলা হয়েছে। এ পর্ষন্ত ৭জনকে আটক করা হয়েছে।

 

এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য মতে পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা দাবী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং লংগদু উপজেলার অন্যান্য পাহাড়ী জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে এখনো শঙ্খা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে লংগদুর সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সমূহের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে বিজিবি, পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী টহল জোরদার করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, আতংকে পালিয়ে যাওয়া ওইসব গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ী লোকজন গ্রামে ফিরেননি। ফলে এসব গ্রাম এখনো জনশূন্য রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ী লোকজন শিশু সন্তানদের নিয়ে  লংগদু উপজেলার সদর থেকে বেশ কিছু দুরে জঙ্গলে ও বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ে রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

 

শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিকদের আসার খবর পেয়ে  সহিংসতার শিকার কয়েকজন পাহাড়ী জঙ্গলে ও বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় থাকা থেকে বেরিয়ে এসে সহিংসতার ঘটনার বর্ননা দেন। সহিংসতার শিকার  তিনটিলা এলাকার বাসিন্দা বুদ্ধ কুমার চাকমা ও তার স্ত্রী নন্দীবালা চাকমা জানান, সেলাই মেশিন, কাপড়চোপড় আর কিছু  আসবাবপত্র একমাত্র  সম্বল ছিল। গেল শুক্রবার অগ্নিসংযোগের কারণে জীবনের শেষ সম্বলটুকু ছাই হয়ে গেছে। এখন কি নিয়ে বাঁচবে জানেন না তারা। তারা আরো জানান,শুক্রবারের ন্যক্কারজনক অগ্নিসংযোগের ঘটনার কথা বর্ননা করে বলেন,ওইদিন বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আগে প্রথমে অগ্নিসংযোগকারীরা বাড়ীতে থাকা জিনিসপত্রসহ লুটপাট করে একটি গাড়ীতে তুলে নেয়। পরে তারা বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় তারা প্রাণের ভয়ে বাড়ীর পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে দুর থেকে  এসব দেখেছিলেন।

 

তিন টিলা এলাকায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পূর্ন ধন চাকমা,বিক্রম চাকমা,স্বপন বিকাশ চাকমা এবং বাট্টা পাড়ার সাধন কুমার কারবারী  অভিযোগ করেন, শুক্রবারের অগ্নিকান্ড সংযোগ ঘটানোর আগে পাহাড়ীরা নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। এতে প্রশাসন থেকে আশ্বাস দিয়েছে তাদের কিছু হবে না। কিন্তু  এধরনের ঘটানা ঘটে গেলো। তারা আরো জানান, প্রাণের ভয়ে বর্তমানে তারা জঙ্গলে ও বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ে রয়েছেন। এখনো কোন সহায়তা তারা পাননি।

 

উল্লেখ্য, গেল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইলের যৌথ খামার এলাকা থেকে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর ইউনিয়ন শাখার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ায় চালিম মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। নয়নের বাড়ী লংগদু উপজেলা সদরের বাত্যাপাড়া এলাকায়। তিনি পেশায় একজন মোটরসাইকেল চালক।

 

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাঙালীরা পাহাড়ীদের দায়ী করেছেন। গেল শুক্রবার নয়নের লাশ খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের শেষে লংগদু উপজেলার বাত্যাপাড়া এলাকার বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্থানীয় বাঙালীরা নয়নের লাশ নিয়ে লংগদু সদের মিছিল বের করে। এসময় উচ্ছৃংখল লোকজন পাহাড়ীদের চারটি গ্রামে হামলা,লুঠপাত ও অগ্নিসংযোগ কওে বলে অভিযোগ। এতে প্রায়  আড়াই শতের অধিক ঘরবাড়ী আগুনে পুড়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ী লোকজন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে দাবী করেছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত