লংগদুতে যুবলীগ নেতা নয়নের হত্যার সন্দেহভাজন দুজন আটক ও মোটর সাইকেল উদ্ধার

Published: 10 Jun 2017   Saturday   

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের হত্যার সন্দেভাজন দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাইনি নদী থেকে নয়নের মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। 


দীঘিনালা থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লংগদু উপজেলা সদর ইউনিয়নর যুবলীগ নেতা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার নন্দহভাজন রনেল চাকমা (১৮) ও জুনেল চাকমা (৩৩) শুক্রবার রাতে পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজমোহন চাকমার ছেলে রনেল চাকমাকে দীঘিনালা মাইনি সেতু এলাকা থেকে এবং জ্ঞান লাল চাকমার ছেলে জুনেল চাকমাকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকা থেকে আটক করা হয়।

 

আটকৃতদের দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে শনিবার সকাল থেকে দীঘিনালার মাইনী নদীত মোটর সাইকেল উদ্ধারে অভিযানে নামেন ডুবুরিা। এতে অভিযানে অংশ নেন রাঙামাটির কাপ্তাই নৌবাহিনী ও চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল। তারা সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্ষন্ত মাইনী নদীতে অভিযান চালিয়ে মোটর সাকেলটি উদ্ধার করেন। আটক জুনেল চাকমা বাড়ী রাঙামাটির লংগদু উপজেলার রাঙ্গিপাড়ায় এবং রনেল চাকমার বাড়ী খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকায়। গত ১লা জুন দিঘীনালা থেকে নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধারের পর নিহত নয়নের ভাই দ্বীন ইসলাম লিটন ৬ জনকে আসামী করে দিঘীনালা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।


মোটর সাইকেল উদ্ধারের পর দীঘিনালা থানায় সংবাদ সন্মেলন করে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোঃ আলী আহম্মেদ খান। তিনি বলেন, আটক দুজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মাইনি নদীতে ডুবুরিরা অভিযান চালিয়ে নয়নের মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। নয়ন হত্যারকান্ডে সাথে জড়িত বাবুরাজ চাকমা নামে আরো একজনকে আটকের চেষ্টা চলছে।


অপরদিকে, লংগদুতে পাহাড়ীদের বাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে লংগদু থানা পুলিশ গত শুক্রবার রাতে লংগদুর বিভিন্ন স্থানে অবিয়ান চালিয়ে আরো ৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হল গ্রাম পুলিশ সদস্য দিদার হোসেন, লিয়াকত আল এবং বাবুল মিয়া । এই নিয়ে এই ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতের সংখ্যা ২১ জনে দাড়ালো।


লংগদু উপজেলার স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে ২ রা জুন লংগদু উপজেলার তিনটি পাহাড়ী পল্লীতে অগ্নিকান্ড এবং সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে লংগদু থানার এস আই দুলাল মিয়া ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবঙ অজ্ঞাতনামা ৩শ হতে ৪শ জনকে আসামী করে লংগদু থানায় মামলা দায়ের করে। লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম শুক্রবারের অভিযানে ৩ জনকে আটকের কথা স্বীকার করে বলেছেন আটককৃদের শনিবার রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে।


এদিকে, একই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাইনী মুখ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপিতি কামাল উদ্দিন পাশাসহ আরো ৩ জনকে আটক করে লংগদু থানায় রাখা হয়েছে। তাদের ঘটনার ব্যাপারে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।


লংগদু উপজেলায় সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ঘটনার ৯ দিন পরও কোন সরকারী ত্রাণ সহায়তা গ্রহন করেনি বলে জানা গেছে। সরকারী উদ্যোগে এই পর্যন্ত ৩০ মেট্টিক টন খাদ্য শষ্য, ৫০০ কম্বল এবং নগদ টাকা বরাদ্দদ দেয়া হয়েছে। অপর দিকে সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডারের পক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা, বিএনপির পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।


এদিকে লংগদুর ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ী লোকজনদের সহায়তার জন্য রা্গংামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ানকে আহবায়ক করে গঠিত ১৯ সদস্যে লংগদু ক্রাইসিস হেলপ কমটির পক্ষ থেকে ত্রাণ সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। এই কমিটি আগামী দু একদিনের মধ্যেই লংগদুর ক্ষতিগ্রস্থ লোকনের মাঝে ত্রাণ বিতরন করবেন বলে জানা গেছে।


উল্লেখ্য, গেল ১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইলের যৌথ খামার এলাকায় ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা নূরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। নয়ন বাড়ী লংগদু উপজেলার বাত্যা পাড়া এলাকায়। ২ জুন নয়নের নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিলের সময় তিনটিলাসহ পাহাড়ীদের চারটি বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে স্থানীয় বাঙালীরা। এ ঘটনায় পাহাড়ীদের অন্ততপক্ষে দুই শতের অধিক ঘরবাড়ি পুড়ে যায়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত