রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় ১১০ মৃত দেহ উদ্ধার, ব্যাপক আকারে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত

Published: 16 Jun 2017   Friday   

রাঙামাটিতে ভারী বর্ষনে পাহাড় ধসের ঘটনায় শুক্রবার আরো ২জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১১০ জনে এ দাড়িঁড়েছে। পাহাড় ধসের ঘটনায় নিখোজদের ব্যাপকহারে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। তবে নিখোজের খবর পাওয়া গেলে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান চালাবে। 

 

এদিকে, এ অবস্থায় শুক্রবার দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসা পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এসময় তিনি ধসে যাওয়া সড়ক পথের পুনঃ নির্মাণে অনিশ্চিতি দেখা দেয়ায় নদী পথে কাপ্তাই রাঙামাটি নৌ চলাচলে লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধিও করার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য,যানবাহনের চলাচল নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত পরিমানের জ্বালানী চট্টগ্রাম থেকে আনায়নের উদ্যোগ ইত্যাদিসহ জনজীবন স্বাভাাবিক রাখার নিরিখে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

 

উল্লেখ্য, গেল মঙ্গলবার ভারী বর্ষনে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে দুই সেনা কর্মকর্তা ও ৩ সেনা সদস্যসহ ১১০ জন মারা যান। এর মধ্যে এর মধ্যে রাঙামাটি সদও উপজেলায় ৬৩ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, জুরাছড়ি ৪ জন ও বিলাইছড়ি ২ জন রয়েছেন। এ ঘটনায় শুধু রাঙামাটি শহরের ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।


উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে শুক্রবার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ভেদেভেদীর দক্ষিণ মুসলিম পাড়া এলাকা থেকে মুজিবুর রহমান(১২) এবং অরণ্যক এলাকার কাপ্তাই হ্রদ থেকে ইব্রাহিম(২৫) মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত ইব্রাহিমের বাড়ী দক্ষিণ মুসলিম পাড়া এলাকায়। তার মৃত পাহাড়ী ঢলে কাপ্তাই ভেসে যায়। নিখোজের চার দিনের মাথায় তার লাশ পানিতে ভেসে উঠে।


রাঙামাটি শহরে পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনদের আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয় ও সরকারী ভবনে ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে শিশু মহিলা পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্ষন্ত এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২১শ জন আশ্রয় নিয়েছেন।


পাহাড় ধসের ঘটনার পর চতূর্থ দিনেও রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ভেঙ্গে গিয়ে সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বর্তমানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের সাথে বিকল্প রুট হিসেবে সড়ক পথে কাপ্তাই পর্ষন্ত এবং কাপ্তাই থেকে নৌপথে লঞ্চ চলাচল ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাঙামাটি শহরে গেল বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও তা অত্যন্ত সীমিত আকারের বলে উল্লেখ করেছেন বিদ্যূৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার।


এদিকে, পাহাড় ধসের ঘটনায় নিখোজদের ব্যাপকহাওে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। তবে যেখানে নিখোজের খবর পাওয়া যাবে সেখানে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবে বলে ফায়ার সার্ভিস এন্ড ডিফেন্সের অপারেশন মেন্টেনেন্ট-এর পরিচালক মেজর শাকিল নেওয়াজ।

 

শুক্রবার রাঙামাটিতে পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। শুক্রবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রী।

 

এর আগে বিকেলে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় রাঙামাটি আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নবকিশোর ত্রিপুরা, ত্রাণ মন্ত্রালয়ের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মেদ, চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুখ,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।


এসময় পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, রাঙামাটিতে এ বর্ষায় আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড় ধসে আর কোন প্রানহীন যাতে না ঘটে সে জন্য পাহাড়ের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।


তিনি এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী সার্বিক দিক নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে বলেন,এ কথা সত্য যে পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে যে চাষাবাদ পদ্ধতি চলে আসা হচ্ছিল তার ব্যাপক পরিবর্তন, ভূমি ব্যবহারে নির্দয় ব্যবস্থা গ্রহনের যে অভিযোগগুলো এ অঞ্চলের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে তাও অনেকটা সত্য। তাই এবারের দুর্যোগ ব্যবস্থা মোকাবেলার জন্য সকলের সম্মিলিত ও সচিন্চিত পরিকল্পনা গ্রহন করা দরকার।


তিনি নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসমুহের ক্ষতিপূরণ,পূর্নবাসন ও আশ্রিতদের যথাযথ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন এ ক্ষেত্রে সরকারের যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে, অর্থেও কোন ঘাটতি হবে না। তবে প্রয়োজন আন্তরিক ও নিষ্টামূলক ব্যবস্থা গ্রহনের।


অন্যদিকে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো চালু হতে কয়েক দিন সময় লাগার কথা উল্লেখ করে এটির পূনঃ চালুকরনের ক্ষেত্রে কিছু সময় লাগতে পারে। তিনি যানবাহন ব্যবস্থা সচল রাখার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অধিনন্থ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজেল এবং পেট্রোল সররবরাহের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের রাজী করার কথা উল্লেখ স্থাণীয় পেট্রোল পাম্প ও খুচরা তৈল বিক্রেতাদের সংঘবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহনের তাগিদ দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত