রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের ঈদের আনন্দ নেই

Published: 25 Jun 2017   Sunday   

সালেহা খাতুন, বয়স ৭০। পাহাড় ধসে ছেলে দরবেশ আলীকে হারিয়ে এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখন দু বছর ও ছয় বছরের নাতি-নাতিনীকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছেন। একদিকে শোক অন্যদিকে ঘরবাড়ি হারা অবস্থায় এবার তার ঈদ করা হবে না। একথায় ঈদের আনন্দ তার মনের মধ্যে নেই। এখন দুই নাতি-নাতিনীকে নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবেন ও কোথায় যাবেন সেই চিন্তায় রয়েছেন। নিহত দরবেশ আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম অনেক দিন আগে স্বামীকে ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন। সালেহা খাতুনের মতো আরো অনেকেই বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন তাদেরই এবার ঈদ করা হবে না। ঈদের আনন্দ নেই তাদের।


পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি সরকারী কলেজে আশ্রয় নেয়া সালেহা খাতুনসহ অনেকের সাথে শনিবার কথা বলে তারা এসব কথা জানিয়েনে।


উল্লেখ্য, গেল ১৩ জুন ভারী বর্ষনে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা,মুসলিম পাড়া.শিমুলতলী এলাকা,সাপছড়ি,মগবান,বালুখালী এলাকায় এবং জুরাছড়ি,কাপ্তাই,কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যূ হয়। এতে জেলায় ১৬শ থেকে ১৭ শ ঘরবাড়ি সম্পূর্ন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শুধুমাত্র রাঙামাটি শহরের ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩হাজার ২শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৫৬ জন,মহিলা ৯শত ২৪ জন এবং শিশু ১হাজার ২২জন। পাহাড় ধসের কারণে সারাদেশের সাথে সড়ক যোগযোগের এক সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন থাকার পর গত বুধবার হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হয়।


সালেহা খাতুন আরো জানান, রাঙামাটি শহরের বাংলাদেশ টেলিভিশন রাঙামাটি উপকেন্দ্রের পাশে রুপ নগর। গত ১৩ জুন পাহাড় ধসে তার ছেলে দরবেশ আলী নিখোজ হন। তার লাশ আর পাওয়া যায়নি। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অবশ্যই পরে জেলা প্রশাসন তার নিখোজ ছেলে দরবেশ আলীকে মৃত তালিকায় যুক্ত করেছেন। তিনি জানান, তার ছেলে দরবেশ আলীর দুই সন্তান রয়েছে। এক মেয়ে নাম ফারিয়া(২) ও এক ছেলে রাকিব(৬)। এই দুই নাতি-নাতিনীকে নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। ছেলের স্ত্রী রাবেয়া ৫/৬ বছর আগে অন্যত্র চলে গেছে।


বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া আবু তাহের জানান, পাহাড় ধসে নতুন পাড়া এলাকায় তার বসতবাড়ি সম্পূর্ন ভেঙ্গে গেছে। তিন বাচ্চা ও স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ঈদ করবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এবারের তার ঈদ করা হবে না। আগের বছর জমাজমাট ঈদ করেছি। ঈদের দিনে আত্বীয়-স্বজনরা তার বাড়ীতে বেড়াতে এসেছেন। আমরাও আত্বীয়দের বাড়ীতে বেড়াতে গেছি। এবার আর সেভাবে ঈদ করা হবে না।


একই কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মাহবুব আলম জানান, ঈদ করার চিন্তাভাবনা কোন প্রশ্নই আসে না। পাহাড় ধসে বাড়ীঘর সবই নিঃস্ব হয়ে গেছে।ওই কেন্দ্রে মাবাবার সাথে আশ্রয় নেয়া গোধুলী আমানতবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনীতে পড়া মাহমুদ আক্তার খুকু জানায়, পাহাড় ধসে বাড়ী ভেঙ্গে যাওয়ায় তার সব বইপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এবার ঈদের সময় তার বান্ধবীদের নিয়ে ঈদ করা হবে না। একই কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ফাতেমা বেগম ফরিদ, জুলেখা বেগম,আমেনা বেগমসহ অনেকেই জানান, পাহাড় ধসের ঘটনার পর আশ্রয় কেন্দ্রে এক কাপড়ে রয়েছেন। ঈদ করার চিন্তাভাবনা অপাতত নেই তাদের। একই কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া নুর জাহান জানান, যেখানে ঘরবাড়ি নেই মাথা গুজাবার ঠাই নেই সেখানে ঈদ করবো কিভাবে?


রাঙামাটি সরকারী কলেজে আশ্রয় নেয়া মনিরা আক্তার,সনিয়া বেগম, শামসুর নাহার আক্তার,রওশন আরা বেগম,শেফালি বেগম,তাজলিমা, তানিয়া বেগম,মাহমুদা.পারভিন আক্তারসহ অনেকে জানান, তারা রুপনগর এলাকা থেকে এই আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। খাবার-দাবার ঠিকমত পাচ্ছেন। ঘরবাড়ি নেই কিভাবে তারা এবার ঈদ করবেন। তাই ঈদ তাদের করা হবে না। একই কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া শানু বেগম জানান, ঘরবাড়ি নেই তাই এবার ঈদ করার পরিবেশ নেই। একই কেন্দ্রে আশ্রিত হেমায়েত জানান, ঘরবাড়ি নেই ঈদ করবো কিভাবে? তাই ঈদ করা হবে না এবার।


রাঙামাটি সরকারী কলেজে আশ্রয় নেয়া মোঃ কাউসার জানান, রুপনগর এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনায় তার বড় ভাই সালাহ উদ্দীন ও ভাবী রহিমা বেগম মারা গেছেন। তাদের এক মেয়ে সুমাইয়া ১৭ মাস এবং অপর মেয়ে মিম ৪ বছর বেচে রয়েছে। এখন তারা তার কাছে রয়েছে এবং তাদের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছেন। তিনিও জানান, এই শোকের মধ্য দিয়ে আমাদের এবারে ঈদ করা হবে না।


জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন,পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে আশ্রিত কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের সবাইকে ঈদেও নতুন জামা-কাপড় দেয়া হবে। কেউই বাদ যাবে না। তিনি আরো বলেন, ঈদের দিনে আশ্রিত লোকজনদের সাধারনত ঈদের দিনে যেসব খাদ্যদ্রব্য পোলাও,মাংস,বিরানি,সেমাইসহ যা যা খাবার দেয়া হয় তাই দেয়া হবে। এছাড়া ঈদের দিনে আশ্রিত লোকজনদের সাথে তিনিসহ জেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত