পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচার হীনতা সংস্কৃতি থাকায় একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে

Published: 07 Jul 2017   Friday   

লংগদুতে পাহাড়ীদের বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মন্ত্রী পরিষদের গঠিত তদন্ত কমিটির  সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

তদন্ত কমিটির কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচার হীনতা সংস্কৃতি থাকায় একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। এ হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হয় না। ফলে এরা অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করার সাহস পায়। উৎসাহিত হয়ে তারা পুনরায়  হামলা, ভাংচুর, লুঠপাত ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এসব অপরাধ কর্মকান্ড বন্ধ করতে হলে অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।

 

প্রসঙ্গত: গেল ২ জুন লংগদুতে তিনটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মন্ত্রী পরিষদের গঠিত তদন্ত কমিটি গেল বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে সফরে আসেন। 

 

বৈঠকে  তদন্ত কমিটির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব মঞ্জুরুল আলম, এবং রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু সাহেদ চৌধূরী। কমিটির অন্য সদস্য চট্টগ্রামের ডিআইজির প্রতিনিধি এম এ মাসুদ খান উপস্থিত ছিলেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদেও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান,  অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী, সাবেক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য অঞ্চল সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।

 

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিশিষ্টজনেরা তদন্ত কমিটিকে বলেছেন,পার্বত্যাঞ্চলের ‘জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নির্ভর ভিন্ন জীবন ব্যবস্থা’কে আমলে না নিয়ে ৮০ দশকে সমতল অঞ্চল থেকে পার্বত্যাঞ্চলে জন-স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। এ নীতির কারণে  ১৯৮০ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আদিবাসীদের উপর কম করে হলেও ১৮টির মতো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে।  এতে হাজারের অধিক নিরীহ মানুষ মারা পড়ে। অথচ  এসব ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি। অপরাধীরা বার বার পার পেয়ে গেছে।

 

১৯৮৯ সালেও লংগদুতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার বিচার হয়নি। ফলে এরা আরও অপরাধ করতে উৎসাহি হয়েছে।

 

লংগদুর সাম্প্রতিক ঘটনায় বর্ণনা করে  পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা বলেন, লংগদুতে একের পর এক গ্রামে অগ্নিসংযোগের সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত ছিল। এর দায় সেখানকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এড়াতে পারে না। তাদের ভুমিকা নিরপেক্ষ ছিল না।

 

বেঠকে বিশিষ্জনরা দীর্ঘমেয়াদে করণীয়  হিসেবে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের রূপরেখা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন এবং জন-স্থানান্তর নীতির অধীনে আনীত সকল বসতি স্থাপনকারীদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রদান করার পরামর্শ দেন।

 

সূত্র আরো জানায় বৈঠকে তদন্ত কমিটির কাছে একটি লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়। এতে লংগদু ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা।  ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সেই ভিত্তিতে পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬২ ধারা অনুসারে অবিলম্বে পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে স্থানীয় পুলিশ-এর কার্যক্রম শুরু করাসহ ৭ টি দাবী তুলে ধরা হয়।

 

উল্লেখ্য গেল ১ জুন দিঘীনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের খাগড়াছড়ি সদর থানার চার মাইল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়।  তিনি মোটর সাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে লংগদু থেকে  খাগড়াছড়িতে গিয়েছিলেন। গেল ২জুন লংগদুর বাট্ট্যাপাড়া থেকে  লংগদু সদর পর্যন্ত নয়নের লাশ নিয়ে স্থানীয় বাঙালীরা মিছিলের সময় তিনটিলা,মানিকজোড় ছড়া ও বাট্টাপাড়ায় পাহাড়ীদের ঘর বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে কমপক্ষে সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২১২টি পাহাড়ী ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। এসময় আগুনে পুড়ে মারা  যান গুনমালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধা।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত