বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে হত্যা ঘটনা জিডি হিসেবে নিয়েছে পুলিশ: হাই কোর্টে যাচ্ছেন স্বজনরা

Published: 18 Jul 2017   Tuesday   

রাঙামাটির লংগদুতে তিনটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ মামলা গ্রহন করলেও গুনমালা চাকমা নামের এক বৃদ্ধাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাটি অভিযোগ হিসেবে নিয়েছে। ঘটনার ২৬ দিনেও অভিযোগটি পুলিশ মামলা হিসেবে রুজু না করায় বৃদ্ধার আত্বীয়-স্বজনরা কয়েক দিনের মধ্যে হাইকোর্টে রিট করতে যাচ্ছেন। তবে পুলিশ দাবী করেছে, আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে ওই বৃদ্ধার পুড়ে যাওয়া অংশ হাড় ও ছাই ঢাকায় ফরেন্সিক বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হবে।


নিহত গুনমালা চাকমার মেয়ে কালা সোনা চাকমা জানান, তার মাকে(গুনমালা চাকমা) আগুনে পুড়ে হত্যার ঘটায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞানামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে গেল ২০ জুন লংগদু থানায় মামলা করতে যান। এতে লংগদু থানা পুলিশ হত্যার মামলাটি মামলা হিসেবে না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নিয়েছে(জিডি নং ৭০৪)।


তিনি আরো জানান, গেল ২ জুন ঘটনার দিন স্থানীয় বাঙালীরা দা,লাঠিসোটা,পেট্রোলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তিনটিলাসহ তিনটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগ,লুঠপাত ও হামলা শুরু করে। এসময় তার মা গুনমালা চাকমা(৭৫)কে প্রাণে বাচাঁনোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে লংগদু ইউপি চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমার বাড়ীতে রাখা হয়। কিন্তু সেখানেও তার মাকে বাচঁতে দেয়নি। তার মাকে আগুনে পুড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর দিন তার মা’র পুড়ে যাওয়া হাড় গোড় উদ্ধার করা হয়েছে।


রাঙামাটির সিনিয়র আইনজীবি উষাময় খীসা জানান, লংগদুর ঘটনাটি মানবিক। তাই ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও গুনমালা চাকমার হত্যার ঘটনার মামলা বিষয়ে কয়েকজন আইনজীবি গরীব ও আসহায় পাশে দাড়াতে আইনী সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।


রাঙামাটি বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবি প্রতিম রায় পাম্পু জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে অনেক জঘন্যতম মামলা বিচার না হওয়ায় দোষীরা পাড় পেয়ে যাচ্ছে। লংগদুতে গুনমালা চাকমা নামের এক বৃদ্ধাকে আগুনে পুড়ে হত্যার প্রমাণ রয়েছে। অথচ নিহতের মেয়ে থানায় মামলা করতে গিয়েও পুলিশ সাধারন ডায়েরি হিসেবে নিয়েছে।


তিনি আরো জানান, ২৬ দিন হলো এ ঘটনার জিডি করা হয়েছে। পুলিশ এখনো মামলা হিসেবে গ্রহন করেনি। তিনিসহ কয়েকজন আইনজীবি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গুনমালা চাকমা হত্যাকান্ডের বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যে হাইকোর্টে রিট করার। এছাড়া লংগদুতে ঘরবাড়ীতে অগ্নিকান্ডে ঘটনার শিকার সহায় সম্বলহীন অসহায় ও গরীব মানুষের পাশে দাড়াতে অগ্নিকান্ডের মামলা ঘটনার বিষয়ে আইনী সহায়তা দেয়া হবে।


লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম জানান, আদালতের অনুমতি নিয়ে নিহত বৃদ্ধা গুনমালা চাকমার পুড়ে যাওয়া দেহবাশেষ হাড়গোড় ও ছাই সংগ্রহ করে তাতে সিলগালা করে ঢাকায় ফরেন্সিক বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেতে দেড় দুই মাস সময় লাগতে পারে। প্রতিবেদনে সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। তিনি আরো জানান, অগ্নিসংযোগের ঘটনার মামলার তদন্তের পাশাপাশি আগুনে পুড়ে বৃদ্ধা হত্যার অভিযোগের ঘনটনাটিও তদন্ত করছে পুলিশ।


উল্লেখ্য গেল ১ জুন দিঘীনালা- খাগড়াছড়ি সড়কের খাগড়াছড়ি সদর থানার চার মাইল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ পাওয়া যায়। পরদিন গেল ২ জুন সকালে লংগদুর বাট্ট্যাপাড়া থেকে লংগদু সদর উপজেলা পর্যন্ত লাশ নিয়ে স্থানীয় বাঙালীরা মিছিল বের করে। এ সময় তিনটিলা,মানিকজোড় ছড়া ও বাট্টাপাড়ায় পাহাড়ীদের ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে দেয় বলে অভিযোগ। এতে ২১৩টি ঘরবাড়ি সম্পুর্ণ পুড়ে যায়। ওই সময় তিন টিলা এলাকায় গুণামালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধা আগুনে পুড়ে মারা যান।

 

অগ্নিসংযোগের ঘটনায় লংগদু থানার পুলিশ উপ পরিদর্শক দুলাল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ থেকে ৪শ জন অজ্ঞাত আসামী করে লংগদু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া পাহাড়ীদের পক্ষ থেকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অপর একটি মামলা দায়ের করেছে। এ পর্ষন্ত পুলিশ ২৯জনকে গ্রেফতার করেছে। পুড়ে যাওয়া ৩টি গ্রামের পাহাড়ীরা এখনো নিজ নিজ ভিটায় ফিরেননি।  
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত