কাউখালীতে দূস্কৃতকারীদের দেয়া বিষে ৮টি গরুর মৃত্যুঃ আক্রান্ত আরো ১৪টি

Published: 22 Jul 2017   Saturday   

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার নাইল্যাছড়ি এলাকায় সামিয়া ডেইরী ফার্মে খাবারের সাথে দূস্কৃতকারীদের দেয়া বিষে ৮টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরো ১৪টি গরু। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বিষ প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এব্যাপারে কাউখালী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন ফার্মের মালিক।

 

সামিয়া ডেইরী ফার্মের মালিক মোঃ নজরুল ইসলাম তাজল জানান, দেশী বিদেশী মিলে তার ফার্মে ২২টি গরু ছিল। ফার্মের বাইরে বিভিন্ন স্থানে বর্গা দিয়েছেন প্রায় ১০/১২টি গরু। রাতদিন খাটা খাটনির মাধ্যমে নিজের চোখের সামনেই বেড়ে উঠতে থাকে এসব গরু। আসছে ঈদুল আযহায় গরু বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু ১৯ জুলাই নজরুলের সবকিছু তছনছ করে দিল দূস্কৃতকারীরা। আসরের নামাজের পর ফর্মের গরুর জন্য খাবার প্রস্তুত করে গরুর সামনে দিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায় নজরুল। এরই মধ্যে কোন এক ফাঁকে অজ্ঞাত দূস্কৃতকারীরা ফার্মে থাকা গরুগুলো খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। বিষাক্ত খাবার খেয়ে গরুগুলো ছটফট করতে থাকে। নামাজ শেষে নজরুল ফার্মে এসে দেখেন ২২টি গরুর মধ্যে ৮টি গরুই মাটিতে লুটে পড়ে ছটফট করছে। অবশিষ্ট গরুগুলাও বিষক্রিয়া আক্রান্ত হয়ে ছটফট করছে। এর আগে স্থানীয় প্রাণী চিকিৎক ধনপতি সরকারকে দিয়ে গরুগুলো বাঁচাতে প্রাণপন চেষ্টা করেন নজরুল। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।


তিনি আরো জানান, একটু আগেই যে গরুগুলা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করছিল তার চোখের সামনেই কাটা কবুতরের মত ছটফট করতে দেখে নিজেই হুশ হারিয়ে ফেলেন। শেষমেষ কাউখালী প্রাণী সম্পদ অফিসে খবর দেন তিনি। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল ইসলাম প্রায় দু’ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু তিনি যাওয়ায় আগেই আটটি গরুই মারা যায়। যার বাজার মুল্য ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হবে।


তাজল জানান, তার ইচ্ছা ছিল বিদেশ যাওয়ার। প্রবাসী বড় ভাইয়ের পরামর্শে বিদেশে যাওয়ার টাকা দিয়ে দেশে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন। মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধজাত গরুর ফার্মের জন্য ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কৃষি ব্যাংক কাউখালী শাখা হতে ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এ তরুন ফার্মার। পরিবারের সহযোগীতা ও ব্যাংক ঋণ সব মিলয়ে তার এ ফার্মে পূঁজি বিনিয়োগ করেন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।


তিনি জানান, আমার সাথে কারো ব্যক্তিগত শত্র“তা থাকতে পারে, কিন্তু আমার নিরীহ প্রাণীগুলো কি দোষ করেছে। আমি কারো কাছে বিচার প্রার্থী হবোনা, এর বিচার আমি আল্লাহর দরবারে দিলাম।


ধনপতি সরকার জানান, দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর ধরে অবলা প্রাণী নিয়ে কাজ করছি। অনেক গরু ছাগল আমার সামনে মারা গেছে কিন্তু কোন দিন এত খারাপ লাগেনি। কিন্তু এক সাথে এতগুলো আমার সামনে মারা যেতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।


উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোৎ মঈনুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ৮টি গরু মারা যায়। অবশিষ্ট ১৪টি গরুও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এসব গুরুগুলোকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে বিষ গুরুর রক্তের সাথে মিশে যাওয়ায় বেঁচে থাকা গরুগুলোর অবস্থাও আশংকামুক্ত বলা যাচ্ছে না।


তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে ৮টি গরু বিষ ক্রিয়া মারা গেছে বলে ধারনা। তারপরও মারা যাওয়ার কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য গরুগুলো ময়নাতদন্ত করে তার আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।


কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আব্দুল করিম জানান এ ব্যাপারে ফার্মের মালিক থানায় একটি জিডি করেছেন। মারা যাওয়ার গরুগুলো থেকে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত