আদিবাসী নারীরা জাতিগতভাবে অধিক নিপীড়নের শিকার হয়-সন্তু লারমা

Published: 07 Aug 2017   Monday   

বাঙালি নারীদের চেয়ে আদিবাসী নারীরা জাতিগতভাবে অধিক নিপীড়নের শিকার হয় বলে দাবী করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

 

তিনি বলেন, বৈষম্যমূলক এ সমাজে আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা কঠিন ব্যপার। আদিবাসী নারীরা সীমাবদ্ধ জীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। আদিবাসী নারীরা সমাজে অবহেলিত এবং জাতিগতভাবে শোষণ ও নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশে গণমুখী শাসন ব্যবস্থা কায়েম না হলে আদিবাসী ও বাঙালি কোন নারীরাই নিরাপদ নয়।


রোববার রাজধানী ঢাকায় ‘টেকসইউন্নয়নএজেন্ডা ও বাংলাদেশের আদিবাসী নারীর অধিকার’শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওর্য়াক, কাপেং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের যৌথ উদ্যোগে ডেইলী স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসীনারী নেটওর্য়াকের সম্পাদক চঞ্চনা চাকমা। অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেলের রানী ইয়েন ইয়েন, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আর্ন্তজাতিক কমিশনের সদস্য ও নিজেরা করি’র সম্বন্বয়কারী খুশি কবির এবং সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক ও সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য,প্রমূখ।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সঞ্চলনায় ফাল্গুনী ত্রিপুরা আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ পাঠকরেন। স্বাগত বক্তব্য দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বহুত্বাদকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা আজ একমূখী হতে চলেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রায় আদিবাসীদের অর্ন্তভূক্তিকরণ অনেকটাই বিন্দুর মাঝে সিন্ধু খোঁজার মত। আদিবাসীদের সঠিক উন্নয়ন করতে হলে প্রথমে অদৃশ্য আদিবাসীদের দৃশ্যমান করতে হবে। আদিবাসীদের জন্য তাই পৃথক আদম শুমারীর ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। আদিবাসীদের নাগরিক অধিকার তাহলেই নিশ্চীত হবে এবং সঠিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সরকারী এবং বেসরকারি পর্যায়ে করা সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করা যাবে। তিনি আরও বলেন আদিবাসী নারীরা প্রধানত তিনভাবে অবহেলার কারনে সমাজের পিছনে পড়ের রয়েছে কাঠামোগত, সম্প্রদায়গত এবং জাতীয়ভাবে।

 

খুশি কবির বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রার সারকথা, কাউকে পিছনে ফেলে নয়। বাংলাদেশের সরকার এখানে ‘কাউকে’ এই বাক্যের সুনিদিষ্ট জনগণকে এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না। সরকার আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছেন যেখানে সে জায়গায় আদিবাসী নারীরা স্বাভাবিকভাবেই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রায় আদিবাসী নারীদের অর্ন্তভূক্তির জন্য সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।

 

ব্যরিস্টার সারা হোসেন বলেন, সামগ্রিক ভাবে নারী অধিকারের বিষয়গুলোকেই সরকার আমলে নিচ্ছে না।আদিবাসী নারীদের বিষয়ত বাদেই থেকে যাচ্ছে বরাবর। এমনকি সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও আদিবাসী নারী সংগঠন গুলোকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দূর্গম পাহাড়ী এলাকার নারীরা প্রতিকূল পরিবেশ এবং ভাষাগত কারনে ভিকটিম সার্পোট সেন্টার বা আইন সহায়তা কেন্দ্রগুলোর সাহায্য নিতে পারছে না। ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়’ এই শ্লোগানে তখনই সার্থক হবে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আদিবাসীরাও সামনে এগিয়ে যাবে।

 

রানী ইয়েন ইয়েন বলেন, পিছনে যারা পড়ে রয়েছে তাদের নিয়ে কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরা বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। সরকারি পরিকল্পনা পত্রের মধ্যে আদিবাসী নারীদের অর্ন্তভূক্তি করা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অনবদ্য বিষয়টি বাদ থেকে যাবে। মূলত: আদিবাসীদের গোষ্ঠীগত অধিকার নিশ্চিত করা না হলে আদিবাসীদের মানবাধিকার কখনও নিশ্চিত করা যাবে না।

 

তিনি আরো বলেন, সরকারের ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও শুধু কাগজের পাতায় পড়ে থাকলে উন্নয়ন হবে না। সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সেই সাথে পার্বত্য চুক্তির বিষয়টিও সরকারের আমলে নেওয়া উচিত। আদিবাসীরা মনে করে সরকার চুক্তির শর্তগুলি ইতিমধ্যেই ভেঙ্গেছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত