সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবীর মধ্য দিয়ে রাঙামাটিতে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন

Published: 09 Aug 2017   Wednesday   

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন ও ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীর মধ্য দিয়ে বুধবার রাঙামাটিতে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বর্নাঢ্য র‌্যালী ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।


আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার উদ্যোগে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্যে দেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান ও এমএন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা। স্বাগত বক্তব্যে দেন আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সাধারন সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার।


এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে র‌্যালী ও সমাবেশের উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা। পরে নৃত্য ও সংগীতের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জীবন জীবিকা,শোষন, নিপীড়ন বঞ্চনার কথা ডিসপ্লের মাধ্যমে আদিবাসী শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন।

 

সমাবেশ শেষে একটি বনার্ঢ্য র‌্যালী পৌর প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালীতে আদিবাসী নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ গ্রহন করেন।


সমাবেশে সভায় বক্তারা বলেছেন আদিবাসীদের তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখে বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেয়া কোন দিনই সম্ভব নয়।


সন্মানিত অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে যারা এ কথা বলেন তারা হয়তো অশিক্ষিত অথবা ইস্যূকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। এছাড়া ভূমি বেদখল করার জন্য আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধা সৃষ্টি করেন। সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবে, বৈষম্য কিছুটা দুর হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে।


তিনি অভিযোগ করে করে বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। এ চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামর আদিবাসীদের অধিকারের সনদ,সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক অধিকার রয়েছে। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করে ভাওতাবাজী করছে। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি মানবধিকার পরিস্থিতি উন্নত হবে।


তার মতে, এ চুক্তি যতদিন বাস্তবায়িত না হয় তত দিন পর্ষন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে আসবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি না আসলে বাংলাদেশ কোন দিন এগিয়ে যেতে পারবে না।

 

তিনি পাহাড়ী-বাঙালী সবাইকে একসাথে এগিয়ে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে পরিণত করার আহ্বান জানান।


জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে দেশ অনেক এগিয়ে পারতো। আর অস্বীকৃতি দেয়া মানেই হল পিছিয়ে রাখা।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, সংবিধানে বাঙালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করে আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করে দেশের অন্যান্য হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ধর্মের সাথে দুরত্ব বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও হতাশা বিরাজ করছে। পাহাড়ের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান না থাকায় হাজার পাহাড়ী ঢাকা, চট্টগ্রামে বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। আওয়ামীলীগ অসাম্প্রদায়িকতা কথা বলেও সাম্প্রদায়িকতায় লংগদুতে পাহাড়ীদের বাড়ীঘর জ্বলে পুড়ে ছাড়কার হয়।


সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি নিশ্চয়তা প্রদানের দাবী জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আদিবাসীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রের গণতন্ত্র শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়নের গতিধারা বজায় রাখা সম্ভব হবে না। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী মানুষ ধ্বংস হওয়ার জন্ম গ্রহন করেনি। লড়াই সংগ্রাম করে আদিবাসী মানুষ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত