অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

Published: 10 Aug 2017   Thursday   

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজে গেল ৬ আগস্ট পাহাড়ী-বাঙ্গালী সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

বৈঠকে শিক্ষার সুষ্ট পরিবেশ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা ছাড়াও ঘটনার ইন্দদাতা ও জড়িত ছাত্রদের খোঁজে বের করার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দীঘিনালা কলেজের অধ্যক্ষ মন্টু বিকাশ চাকমা। বৈঠকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজুল হক, দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শামসুদ্দীন ভূইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শতরুপা চাকমা, ব্যবসায়ী নেতা আলহাজ্ব মোঃ জসিম, জেলা যুবদলের সহ সভাপতি (সমীরণ পন্থী) শামশুল হক, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহাবুব আলম, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সভাপতি রাজ্যময় চাকমা, এমএন লারমা সমর্থিত যুব সমিতির সভাপতি সমীর চাকমা, উপাধ্যক্ষ তরুন কান্তি চাকমা, সহকারী অধ্যাপক দীলিপ চৌধুরী, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য সুপ্রিয় চাকমা, নলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সাধন চন্দ্র চাকমা ও দীঘিনালা প্রেসক্লাব সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রাজু বক্তব্য রাখেন।

 

বৈঠক শেষে কলেজের সহকারী অধ্যাপক দীলিপ চৌধুরীকে আহবায়ক, ব্যবসায়ী নেতা আলহাজ্ব মোঃ জসিম ও বাজার চৌধুরী জেসমিন চাকমাকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে আগামী পাঁচ দিনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য কমিটিকে অনুরোধ জানানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে উপাধ্যক্ষ তরুন কান্তি চাকমা জানান।  

 

 বৈঠকে সংঘাতে নয় যেকোন সংকটে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য কলেজের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষা, শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন। এছাড়া বৈঠকে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতা শনিবার থেকে কলেজে ক্লাশ চালু করার সিন্ধান্ত নেয়া হয়।

                         

 তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজ ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নিন্দা জানিয়ে বক্তাগন বলেন, উপজেলার সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের জাতিগত সংঘাত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যা ঘটেছে তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং দীঘিনালাবাসীর স্বার্থ পরিপন্থী। তাই ঘটনার ইন্দনদাতা ও জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। শিক্ষা শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়নের স্বার্থে সংঘাতে নয় যেকোন সংকটে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে । পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করে মা বাবার আশা আকাংখ্যার প্রতিফলন ঘটাতে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায় জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার সাথে সম্পৃক্ত হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

 

বক্তারা আরো বলেন, আমাদের মাঝে ধর্ম এবং বর্ণের ভিন্নতা থাকলেও এলাকার স্বার্থে আমরা অভিন্ন। আমরা পাহাড়ী কিংবা বাঙ্গালী হয়ে সংঘাত সৃষ্ঠি করতে চাই না। সামগ্রীক স্বার্থে আমাদের একটাই পরিচয় আমরা দীঘিনালাবাসী। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি এসব চিন্তা চেতনা ছাত্র সমাজকেও লালন করতে হবে। বৈঠকে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখার জন্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। এতে কলেজ ও উপজেলা ছাত্র সংগঠনের নেতারা একমত পোষণ করেন।

 

উল্লেখ্য, গেল ৬ আগস্ট দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ী-বাঙ্গালী ছাত্ররা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে কলেজের অধ্যক্ষ মন্টু বিকাশ চাকমা ও পুলিশসহ ১২ জন আহত হয়। সংঘর্ষের পর কলেজ কতৃপক্ষ চারদিনের জন্য ক্লাশ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করে।

 

এদিকে গতকাল কলেজ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে টহল অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শামসুদ্দীন ভূইয়া জানান, শনিবারে কলেজের ক্লাশ চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি উন্নতি হলে আইনশৃংখলা বাহিনীর টহল প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত টহল অব্যাহত থাকবে। তবে ঘটনার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাস শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত