৩৫ বছরেও আলীকদমের চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি

Published: 18 Sep 2017   Monday   

বান্দবানের আলীকদম উপজেলা সৃষ্টির ৩৫ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের মুরুং ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মেনপা পাড়াসহ ১১টি পাড়া এলাকায়। ফলে মুরুং, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালীসহ প্রায় ৫ হাজার জনগোষ্ঠী দরিদ্রতা সীমায় বসবাস করতে হচ্ছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দৃরত্বে অবস্থিত চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডটি। এ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে এখনো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এ ওয়ার্ডে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও যাতায়াতে নেই কোন ভালো রাস্তা। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে ১১টি পাড়ায় বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করছে এখানকার মানুষ। অনেক পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন।

 

ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্য শিমন ত্রিপুরা জানান, এই ওয়ার্ডটির দুরত্ব উপজেলা সদর থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার। এ ওয়ার্ডে মুরুং, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালী পরিবার মিলে কমপক্ষে ৫ হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা সরকারের অন্যকোন দপ্তর থেকে অবহেলিত এ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। চলাচলের জন্য কাঁচা মাটির রাস্তাই ভরসা এলাকাবাসীর। একমাত্র বিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নের নেই কার্যকর পদক্ষেপ।

 

তিনি অভিযোগ করেন, গেল দু’বছর পূর্বে চৈক্ষ্যং খালের ওপর ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে ডিজাইন, প্রকল্প ও বরাদ্দ অনুমোদন হলেও কাজের শুরুতে চাঁদাবাজদের দৌরাত্বের কারণে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উন্নত যোগাযোগ সুবিধা থেকে ওয়ার্ডবাসী সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। কাঁচা মাটির রাস্তাগুলোকে ব্রিক সলিং করে সড়ক যোগাযোগে উন্নয়নের তিনি দাবী জানান।

 

স্থানীয় শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৮৮ সালে এ ওয়াড়ের মেনপা পাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরী হয়। কয়েক বছর পূর্বে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই টিনসেট ঘরেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। বিভিন্ন পাড়া থেকে বিদ্যালয়মুখি সড়ক যোগাযোগ ভালো নয়। ফলে শিক্ষার্থীরা পাহাড়ি দুর্গম পথ মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। যোগাযোগ অসুবিধার কারণে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়। তিনি আরো জানান, বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী চৈক্ষ্যং খালের ওপর ব্রিজ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে খাল পারাপারে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। উপজেলা সদর থেকে বিদ্যালয়ের যাওয়ার পথে সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা মাটির। ফলে বর্ষা মৌসুমে কর্দমাক্ত মাটি পিচ্ছিল থাকার কারণে বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগের অন্তঃ থাকে না।

 

 মেনপা পাড়ার বাসিন্দা বর্তমানে উপজেলা সদরে একটি ছাত্রাবাসের পরিচালক ইয়োংলক মুরুং জানান, এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যুগ যুদ ধরে সরকারের সুষম উন্নয়ন পরিসেবা থেকে বঞ্চিত। দুর্গম পাহাড়ি এ ওয়ার্ডে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মুরুং জনসংখ্যাই বেশী। উন্নয়নের মূল স্রোত থেকে পিছিয়ে থাকা এ নৃ-জনগোষ্ঠী মূলতঃ জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ভালো রাস্তাঘাট না থাকায় তাদের উৎপাদিত জুমের ফসলের নায্য মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত।

 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গেল ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী চৈক্ষ্যং খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে প্রাক্কালন ও বরাদ্দ অনুমোদন হয়। প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দের এ ব্রিজটি চাঁদাবাজদের দৌরাত্মের কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি করতে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে সে সময় ওই ব্রিজটি অন্যত্র নির্মাণ করা হয়।

 

চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান বলেন, তিনি  নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ৭নং ওয়ার্ডের রাস্তার উন্নয়নে কাবিখা থেকে এটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। এলাকার রাস্তাঘাট করতে গেলে অনেক টাকার প্রকল্প গ্রহণ প্রয়োজন। যেটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সীমিত অর্থে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত