রামগড়ে ডাকাত আতঙ্ক, রাত জেগে পাহাড়া, নিরাপত্তা হীনতায় জনগণ

Published: 14 Oct 2017   Saturday   

খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরএলাকা ও এর আশপাশে হঠাৎ ডাকাতি ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। লোকজন রাতজেগে পাহাড়া দিয়েও দুর্বৃত্তদের ঠেকাতে পারছে না। ইতিমধ্যে ১০/১২টি বাড়িতে ডাকাতিও বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা এবং এক নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ রকম অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে পুলিশি টহল ও নজরদারী বৃদ্ধি করা হলেও জনমনে আতঙ্ক কমেনি।

 

এদিকে,গেল ৯ অক্টোবর উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা,সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ বিষয়ক মাসিক সমন্বয় সভায়ও ডাকাতিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিষয়টি ওঠে আসে। বক্তারা বলেন, রামগড়ে হঠাৎ ডাকাতের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ। উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভাপতি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন মিয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জনসাধারনের সহযোগিতা চেয়েছেন।কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির খবর ত্বরিৎ প্রশাসনের  উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানোর অনুরোধ করেন। বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন , রামগড় থানার ওসি মো. শরিফুল ইসলাম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. আহসান উল্ল্যাহ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মো. মোস্তফা হোসেন, এক নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম মজুমদার,পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরা প্রমুখ।

 

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গেল ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত পৌরসভার সদুকারবারী পাড়া, হাজিপাড়া, ফেনীর কুল, বল্টুরাম,রামগড় পর্যটন এলাকা,সদর ইউনিয়নের বলিপাড়া, লামকুপাড়া ও নোয়াপাড়া এলাকায়কমপক্ষে১২/১৪টি বাড়িতে ডাকাতি ও সন্ত্রাসী হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

 

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল ৭ অক্টোবর শনিবার রাত সাড়ে আটটায় ফেনীর কুল এলাকায় কালাম চৌধুরী ও তার শ্বশুড় কাদের কেরানীর ঘরের দরজা-জানালা ভেঙ্গে ঢোকার চেষ্টা চালালেও জনগনের বাধার মুখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। একই সময়ে পাশের চিকনের খিল আমতলী ও খাগড়াবিলের নোয়াপাড়া এক বাড়িতে ডাকাতি হয়। এর আগে শুক্রবার রাত ১২টায় লামকুপাড়া এক বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হানা দেয়। তবে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পালায়। একই সময় হাজিপাড়া ও বাগানটিলার দুই বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা চলে।

 

 পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায, গেল ২৭সেপ্টেম্বর রাত ২টায় পৌরসভার শালবাগান এলাকার পাশের বাগানবাজার ইউনিয়নের হাজিপাড়ায় তোফাজ্জলের বাড়িতে ডাকাত লুটে নেয় সর্বস্ব। এসময় এক নারী চরমভাবে সম্ভ্রম হারানোর শিকার হন। একই রাত ৩টায় সদুকারবারী পাড়ার আবুল কালামের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এর আগে দ্বীন মোহাম্মদের মুদি দোকানের নগদ টাকা ও মালামাল লুন্ঠন হয়। এর দুই দিনপর ফেনীরকুল গ্রামের জনৈক প্রবাসীর স্ত্রী ফেরদৌস আরার বাড়িতে ডাকাতি হয়। ওই রাতেই নজিরটিলার এক বাড়িতে এবং মঙ্গলবার বলিপাড়ার মোহাম্মদ উল্ল্যার বাড়িতে ডাকাত হানা দেয়। এভাবে আবার বুধবার রাত ১টায় সদুকারবারী পাড়ার গোলাম রহমান ও রেজাউলের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হানা দেয় অবশ্য ওই সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ডাকাত আসার খবর প্রচার হলে সন্ত্রাসীরা পালায়।

 

এদিকে গেল ৫ অক্টোবর পর্যটন এলাকার দীনেশ সরকারের ঘরের তালা ভেঙ্গে মালামাল লুটের চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। আবার ৬, অক্টোবর লামকুপাড়া এক বাড়িতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ধাওয়া খেয়ে পালায় ডাকাতদল। এ সময় একটি মোবাইল ফোন ফেলে যায়। পুলিশ ফোনের সূত্রধরে ডাকাত ধরার চেষ্টা করছে- জানান, ওসি শরিফুল ইসলাম। গেল ৮ অক্টোবর গুদাম বাড়ির মনিয়া ত্রিপুরার ২টি গরুঅস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। ৯,অক্টোবর সোনাইপুল সুমন্ত কান্তি নাথ এর বাড়িতে রাত দুইটায় সন্ত্রাসী হামলা হয়। গেল ১০অক্টোবর নোয়া পাড়া ও লালছড়ির জাফর আহমেদ ও হাসেম মিয়া ডাকাতের কবলে পড়ে দশ হাজার টাকা লুট হয়। গেল ১২ অক্টোবর পৌর কাউন্সিলর মো. দেলোয়ার হোসেনের বল্টুরাম পাড়া গ্রামের বসত বাড়ীতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেন থানায় জিডি করেছেন। এভাবে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

 

 ডাকাতির শিকার সদুকারবারী পাড়ার আবুল কালাম ও ফেনীর কুল গ্রামের ফেরদৌস আরা জানান, তাঁদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশকরে ধারালো চাপাতি, চাকু, ছুরি ও লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রের মুখে সবাইকে আটকিয়ে নগদ টাকা,স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়। অনেক সময় পরিবারের ছোট বাচ্চাদের গলায় চাকু ধরে ভয় দেখায়। তাঁদের মতে, ডাকাত দলে১২/১৫ জন সদস্য থাকতে পারে। কয়েকজনের মুখোশ পড়া দেখা যায়। এদের বয়স আনুমানিক ২০-৩৫ বছরের মধ্যে এবং কালো পোশাক ও সর্ট পেন্ট পরিহিত।

 

 রামগড় পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর মো. সাহাব উদ্দিন জানান, রাত জেগে গ্রামবাসী পাহাড়া দিচ্ছে কিন্তু আতঙ্ক এতটুকু কমেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

 

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সরেজমিন বাড়ি-বাড়ি গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। রামগড়ের স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশি টহল ও নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি আরো জানান,  যত দ্রুত সম্ভব দুর্বৃত্তদের ধরার  চেষ্টা চলছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত