রাঙামাটির রাজ বন বিহারে দুদিন ব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু

Published: 02 Nov 2017   Thursday   

রাঙামাটির রাজ বন বিহারে বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর  শুরু হয়েছে।

 

রাজ বন বিহার পাশে অবস্থিত ৪৪তম কঠিন চীবর দানোৎসবের প্রথম দিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চরকা সূতা কাটা থেকে কাপড় তৈরীর লক্ষে বেইন ঘরে পঞ্চশীল প্রদান করেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের সিনিয়র ভিক্ষু জ্ঞান প্রিয় মহাস্থবির। এর আগে বেইন ঘরে ফিটা কাটেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।

 

এরপর বেইন ঘর উদ্ধোধন উদ্ধোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। চরকায় তুলা থেকে সূতা কাটা উদ্ধোধন করেন চাকমা সার্কেলের রাণী ইয়েন ইয়েন। এসময় রাজ বন বিহার পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি  গৌতম দেওয়ান,নিরুপা দেওয়ান, এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

উদ্বোধনের পর পর বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে সেই সূতা, কাপড় বুনন, রং ও সেলাই করে চীবর(রং বস্ত্র) তৈরীতে এক হাজারের অধিক পূর্নার্থী সারারাত ১১৪টি কোমড় তাতে চীবর প্রস্তুত করবেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকতৃ চীবর শুক্রবার বিকাল ৩টায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে লক্ষাধিক পূনার্থীর উপস্থিতিতে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্য দান করা হবে। এছাড়া এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে  রাজ বন বিহারের পাশে বিভিন্ন সামগ্রির মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায়  আদিবাসীদের তৈরী হস্তশিল্প, বস্ত্র, ধর্মীয় গানের সিডি ক্যাসেট, বইপত্র, নানান স্বাদের খবরসহ বিভিন্ন পণ্যর সমাহার ঘটেছে। এছাড়া বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ  নানান খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্য সূতা কেটে রং করে কাপড় বুনে সেলাই করে চীবর বানিয়ে শুক্রবার পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দান করা হবে। পার্বত্যাঞ্চলের যে জুমের সংস্কৃতি রয়েছে যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঐতিহাসিকভাবে কার্পাস মহল বলা হতো সেই  বয়ন শিল্পকে চর্চা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ধর্মীয় উদ্দেশ্যর সাথে এ অঞ্চলের কৃষ্টি,সংস্কৃতিকেও প্রতিফলিত করা হচ্ছে।

 

তিনি সকল প্রাণীর  প্রতি মৈত্রী অহিংসা ভাব পোষন করতে এবং মৈত্রী, করুনা ও অহিংসার ভাব নিয়ে সকলকে বুদ্ধ ধর্ম পালনের আহ্বান জানান।

 

রাজ বন বিহার পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সভাপতি গৌতম দেওয়ান জানান,প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও তিন পার্বত্য জেলা থেকে বৌদ্ধ বিপুল পূর্নার্থীদের সমাগম ঘটেছে।

 

রাঙামাটি কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্যজিৎ বড়ুয়া জানান, রাজ বন বিহারের অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিরাপত্তা চাদরে ঘিরে রাখা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রায় ৫শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

 

উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তাই প্রবর্তিত ঐতিহাসিক নিয়ম অনুসারে এখানে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ চরকায় তূলা থেকে সূতা বের করে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে সেই সূতা দিয়ে কাপড় বুনন ও রং করে চীবর হিসেবে দান করে থাকেন। এ জন্য এ দানকে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯৭৭ সাল থেকে রাঙামাটির রাজ বন বিহার এ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত