রাঙামাটির রাজবন বিহারের দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব সমাপ্ত

Published: 03 Nov 2017   Friday   

নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে  দুদিন ব্যাপী রাঙামাটি রাজবন বিহারের ৪৪তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব শুক্রবার শেষ হয়েছে। অনুষ্ঠানে লাখো পূর্নার্থী সমেত হয়েছেন।

 

রাঙামাটির রাজ বন বিহারের নতুন মাঠে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনকারী পূর্নার্থীদের স্ব-ধর্র্ম দেশনা দেন রাজ বিহারের আবাসিক ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। পঞ্চলশীল প্রার্থনা দেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের সিনিয়র ভিক্ষু জ্ঞান প্রিয় মহাস্থবির।

 

অনুষ্ঠানে  বক্তব্যে রাখেন রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন রাজ বন বিহার পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দেশ ও বিশ্বের মঙ্গল কামনা করেন মানপত্র পাঠ করেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান।

 

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসাসক মোহামামদ মানজারুল মান্নান, জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃেকর্নেল রিদওয়ান ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন, রাজ কুমার ত্রিভূবন আর্যদেব রায়, রাজ কুমারী আয়ত্রী রায়সহ  তিন পার্বত্য  জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও ভারত ও জাপান থেকে প্রায় লক্ষাধিক বৌদ্ধ পূর্নাথীরা সমবেত হন।

 

অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে মহাপূর্নবর্তী বিশাখা প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকৃত কঠিন চীবর  মঞ্চে আনা কলে উপস্থিত ধর্ম প্রাণ পূর্নার্থীরা সাধু-সাধু-সাধ উচ্চারণ করেন। পরে মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত(মহাপ্রয়ান) আর্যশ্রাবক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির(বনভান্তের) মূর্তিটি ভক্তরা অনুষ্ঠান মঞ্চে নিয়ে আসেন। এর পর পর শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের নেতৃত্বে কয়েক শতাধিক ভিক্ষু অনুষ্ঠান মঞ্চে আসন গ্রহন করেন।

 

অনুষ্ঠান শুরুতে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রনজিত দেওয়ানের নেতৃত্বে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর পঞ্চলশীল প্রার্থনা, অষ্টপরিস্কার দান, কঠিন চীবর, কল্পতরু, হাজার বাতি ও বুদ্ধ মূর্তি দান উৎস্বর্গ করা হয়। পরে মহাপূর্নবর্তী বিশাখা প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকৃত কঠিন চীবর চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় রাজ বন বিহারের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের উদ্দেশ্য দান করেন। অনুষ্ঠান শেষে বনভান্তের (রেকর্ডকৃত) দেশনা বাজানো হয়। বন বিহারের এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের মাসব্যাপী কঠিন চীবন দানোৎসবের সমাপ্তি ঘটলো।

 

ধর্মীয় দেশনায় রাজ বিহারের আবাসিক ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও সৎ জীবন নিয়ে জীবনযাপন করতে এবং সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রী, অহিংসা ভাব পোষন  করে সকলকে বুদ্ধ ধর্ম পালনের জন্য হিতোপোদেশ দেন।

 

উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তাই প্রবর্তিত ঐতিহাসিক নিয়ম অনুসারে এখানে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ চরকায় তূলা থেকে সূতা বের করে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে সেই সূতা দিয়ে কাপড় বুনন ও রং করে চীবর হিসেবে দান করে থাকেন। এ জন্য এ দানকে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯৭৭ সাল থেকে রাঙামাটির রাজ বন বিহার এ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত