রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিগ্রহনকৃত ভূমিস্বত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর

Published: 04 Nov 2017   Saturday   

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মানের জন্য জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহনকৃত ভূমিস্বত্ব শনিবার অনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে  হস্তান্তর করা হয়েছে। রাঙামাটি শহরের ঝগড়া বিল এলাকায় ৬৪ একর অধিগ্রহনকৃত জমি বংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মানের জন্য ভূমি হস্তান্তর কাজটি একটি মহৎ ও পবিত্র কাজ। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হলে সবার আগেই উপকৃত হবেন পার্বত্যাঞ্চলের বসবাসকারী লোকজন। এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের পার্বত্যাঞ্চলের বাইরে গিয়ে আর পড়াশুনা করতে হবে না। তিনি আগামী জুলাই মাসের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জন্য কিছু স্থাপনা নির্মাণ শুরু হবে এবং ২০১৮সালের শেষ নাগাদ আরো কিছু স্থাপনা তৈরী করে স্থায়ীভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

 

তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যথাযথ পরিচচর্যা করার জন্য ও একটি উচু মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে রাজনৈতিক মহলসহ সকল সম্প্রদায়কে ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

 

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে বক্তব্যে দেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা। অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, জেলা সিভিল সার্জন শহিদ তালুকদার, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ড.মানিক লাল দেওয়ান, মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ড.একে দেওয়ানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

অনুষ্ঠাণ শেষে ৬৪ একর অধিগ্রহনকৃত জমি বংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক। পরে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পরে কমিশনের চেয়ারম্যান ঝগড়া বিল এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহন করা জমির স্থান পরিদর্শন করেন।

 

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি সম্পুর্ণ বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার অবদান উল্লেখ করে বংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ১৯৯৬ সালের দিকে ৬টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রথম পর্যায়ে এবং আরো ৬টি দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থাপনের জন্য অগ্রসর হয়েছি। এর মধ্যে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের কারণে কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলেও রাঙামাটিতে সেই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়াটি শুরু করে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহন শেষ হয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলের বসবাসকারী মানুষের জন্য। কাজেই এটি জাতীয় সম্পদ হলেও এটি পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের সম্পদ। তাই এ অঞ্চলের মানুষকে এ সম্পদকে আমানত হিসেবে গ্রহন করে একটি উচু মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সবাই সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। তিনি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হলে সরেজমিনে প্রধানমন্ত্রী সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন বলেও মন্তব্য করেন।

 

তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় এই রাঙামাটিতে একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় হবে যেখানে শুধু স্থানীয় ছেলেমেয়েরা পড়তে আসবে না, বিদেশী অনেক গবেষক আসবেন। কারণ রাঙামাটিতে রয়েছে অনেক বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের আর কোথাও কিন্তু নেই। এই বৈচিত্র্যগুলো নিয়ে গবেষণা করতে আসবেন এবং রাঙামাটির যে অর্জন ও প্রাকৃতিক যে সম্পদ আছে সেই খবরগুলো বিশ্বের গবেষকদের কাছে তুলে দেবেন। 

 

তিনি আরো বলেন,এখানে যাই হোক, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় হোক, এটা কোনো সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হোক, স্থানীয় জনগণের সহায়তা ছাড়া কিছু সুষ্ঠুভাবে হওয়া সম্ভব না।  তিনি এখানে অনেকবার  এসেছেন, নানা কারণে, নানা সরকারি কাজে, তো আজকের এই দিনটি নিঃসন্দেহে সকলের জন্য ঐতিহাসিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যারা জমি ছেড়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ, কারণ তারাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অংশীদার।

 

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি)  উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, রাবিপ্রবি স্থাপন প্রকল্পের জন্য এই বছরের ডিসেম্বর এর মধ্যে ডিজিটাল সমীক্ষা এবং এর পরবর্তীতে মাস্টারপ্ল্যান করা হবে। আগামী বছর জুন, ২০১৮ এর মধ্যে কোন একটা স্থাপনা তৈরি করতে চাই বিশেষ করে একাডেমিক ভবন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তার নিজস্ব জায়গায় ক্লাশ শুরু করতে  পারে। এজন্য আমাদের একান্ত প্রচেষ্টা থাকবে এবং  সকালের সহযোগিতা করতে হবে। 

 

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের দিকে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেনী পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। ভূমি নিয়ে নানান জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এতদিন নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু করা যায়নি। বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে শহরের শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনে শ্রেনী পাঠদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রেষ্ট হাউসের একটি ভবনে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত