পার্বত্য চুক্তি পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান

Published: 02 Dec 2017   Saturday   

পার্বত্য চুক্তির দুদশকে উপলক্ষে আয়োজিত গণ সমাবেশে বক্তারা পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবী জানানোর পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।


পার্বত্য চুক্তির দুদশক উপলক্ষে শনিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে গণসমাবেশে বক্তারা এ আহ্বান জানান।


পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিে জেলা শাখার উদ্যোগে রাঙামাটি জিনেসিয়াম চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সভাপতি সূবর্ণ চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্বাবদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির, কমিউনিষ্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক আশোক সাহা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগের সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা। অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সাধারন সম্পাদক অরুন ত্রিপুরা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুমন মারমা। সমাবেশে বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার পাহাড়ী নারী-পুরুষ অংশ গ্রহন করেন। সমাবেশে শেষে জিমনেসিয়াম চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের ঘুরে গিয়ে আবারও জিনেসিয়াম চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার বলেছেন,পার্বত্য চুক্তি ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন করছে বলে সরকারী দাবী করেছে। কিন্তু এসব বাস্তবায়ন হলে কেন পাহাড়ের মানুষ অসন্তুষ্ট, কেন অখুশি। পাহাড়ের মানুষ স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীনতার জন্য সকলে রক্ত দিয়েছে। স্বাধীন দেশের পাহাড়ের মানুষ আজ কেন নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চিত জীবন নিয়ে বসবাস করতে হবে।


তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলতে গিয়ে সরকার প্রায়ই পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রমের ফিরিস্তি তুলে ধরে আসছে। কিন্তু এই সমস্যা অর্থনৈতিক সমস্যা নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়ে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজ পার্বত্যবাসীর শাসনতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রশাসনিক ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষমতা ও কার্যাবলী এখনো আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে দেয়া হয়নি। পার্বত্য জেলার ডেপুটি কমিশনার ও পুলিশ সুপাররা সমতল অঞ্চলের মতো পার্বত্য জেলায় শাসনকার্য পরিচালনা করছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্যাঞ্চলের শাসনব্যবস্থা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পৃথক। সরকার আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে অথর্ব করে রেখে উপনিবেশিক কায়দায় পার্বত্যাঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করছে।


পার্বত্য চুক্তির ২০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পার্বত্যবাসীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সের জন্য এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে যে হতাশা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, তা অনুভব করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তবে কেবল অনুভব করলে হবে না, তার জন্য অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দিতে হবে।

 

তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স ব্যাপারে উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়ের মানুষের মনের বেদনা প্রশমের জন্য ভিডিও কনফারেন্স করতে হয়েছে। তিনি তিনি বলেন পার্বত্য চুক্তির ২০ বছর পূর্তি করা হয়েছে তা যেন বিজয় উল্লাস করা হয়েছে বলে।

 

তিনি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে নিয়োজিত অনেক কর্মকর্তা পার্বত্য চুক্তি ও পাহাড়িদের বিষয়ে সংবেদনশীল নয়। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে পোস্টিং দেয়ার আগে তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ আইন, শাসনব্যবস্থা, পাহাড়ির সংস্কৃতি বিষয়ে ধারণা দেয়া দরকার।


সরকারের মধ্যে চুক্তি বিরোধী মহল লুকিয়ে আছে উল্লেখ তিনি বলেন, তারাই চুক্তি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে চলছে। শাসক মহলের সাথে যুক্ত জুম্ম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রমও চুক্তি বাস্তবায়নে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করছে।


উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, জুম্ম জনগণের সংগ্রাম বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে নয়। এই সংগ্রাম জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণ, ভূমি ও সংস্কৃতির অধিকারের জন্য। জুম্মদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাদের আর পিছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব সংরক্ষণ তথা চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে।


তিনি হুশিয়ারী উচ্চালন করে বলেন, পার্বত্য সমস্যার সমাধানে এখনো সময় আছে। তাই দ্রুততার সাথে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নসহ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।


তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে রোড ম্যাপ ঘোষনার দাবী জানিয়ে বলেন, তালবাহা না করে অচিরেই চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নের এগিয়ে আসন। আর কালক্ষেপন করবেন। আন্দোলন শুরু হলে তার সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।


তিনি দাবী করে বলেন, জেলা পরিষদ শুধু গম-চাউল ভাগ করে দাবী করে থাকে। আর চাকুরী আছে টাকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করে। এই বাইরে আর কি আছে তাদের ক্ষমতা।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্বাবদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির বলেন, পার্বত্য চুক্তি করেও একটি পক্ষকে বাস্তবায়নে আন্দালন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষ কি চায় সেটা রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে। তিনি বলেন, পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়।রাষ্ট্রকে আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে এবং রাষ্ট্রকে তাদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। এ অঞ্চলে বৈচিত্র্যপূর্ন বজায় রাখতে হবে। যদি বৈচিত্র্যপূর্ন বজায় না থাকে তা হলে উগ্রবাদের সৃষ্টি হবে। যেমন মিনায়নমারে হচ্ছে। আমরা বাংলাদশের এরকম উগ্র জাতীয়তাবাদ দেখতে চায় না।


কমিউনিষ্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক আশোক সাহা বলেন, ২০ বছর আগে চুক্তি হয়েছে। কেন কেন বার পাহাড়ের মানুষকে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য দাবী জানাতে হবে। আর কত কাল ধৈর্য্য ধরতে হবে। তিনি আরো বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। যতদিন পর্ষন্ত এ দাবী পূরণ না হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত