মঙ্গলবার ঢাকায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে নাগরিক সমাজের প্লাটফর্ম জন উদ্যোগে জনযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
জন উদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুলের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বর পর্ষন্ত জনযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। এ জনযাত্রা কর্মসূচিতে সাইকেল, ক্যাপ, প্লাকার্ড, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদিসহ সহযাত্রী হিসেবে অংশনেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী যুব পরিষদ, সান্তাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (সাসু), মাদল, চানচিয়া, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম, ওয়াইপিজে, কাপেং ফাউন্ডেশন, আইইডি, ছাত্র-শিক্ষক-লেখক-শিল্পী-সাংবাদিকসহ ও নাগরিক সমাজের সক্রিয়জনরা অংশ নেন।
জনযাত্রার উদ্বোধন করেন লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। বক্তব্যে দেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, আইইডির সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা দীপায়ন খীসা। সঞ্চালনা ও ঘাষণা পাঠ করেন জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল। উপস্থিত ছিলেন কাপেং ফাউন্ডেশনের সোহেল হাজং, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সভাপতি অনন্ত ধামাই, আন্তর্জাতিক রবিদাস উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি গৌতম রবিদাস, জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য জামাল হায়দার মুকুল, মো. সেলিম, সাবেক ছাত্রনেতা শাহজাহান আলী সাজু প্রমুখ।
উদ্বোধনী বক্তব্যের পর আদিবাসী-বাঙালির মিলিত জনযাত্রা অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করে শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরে আসে। সামনে সাইকেলসহ সুসজ্জিত এ জনযাত্রায় সাইকেল চালিয়ে আসেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং ও আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী দুইটি পক্ষ হলো সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। তাদের মধ্যে আজ বিস্তর ব্যবধান তৈরি হয়েছে। চুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে সরকার দাবি করলেও প্রধান প্রধান বিষয়সমূহ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পাহাড়ে উন্নয়নের নামে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে, নির্বিচারে পাহাড়-বন ধ্বংস করার পরিণাম যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার আলামত পাওয়া গেছে বিগত বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এছাড়াও সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠির উপর নির্বিচারে আক্রমণ করে লংদুতে বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। গৃহহারা এসব দরিদ্র আদিবাসীদের আজও পূর্নবাসনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে ঠুটোজগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে, ভূমি কমিশন অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। দেশের সকল আদিবাসীদের সংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সরকারকেই বরতে হবে।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরে পাঠ করা ঘোষণায় বলা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল সমস্যার সমাধান সম্ভব। ২০ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জম্মু জনগোষ্ঠী আজ ক্ষুব্ধ হচ্ছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সকল জাতিগোষ্ঠির মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদায় বাস করবে এটাই আমাদের চাওয়া। এই চুক্তি আদিবাসীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল এবং তাদের দাবির ফলে সরকারকে এ চুক্তি করতে হয়েছে। সুতরাং এখন সরকার এ চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নে বাধ্য। কেননা জনসংখ্যার ভারসাম্য নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে ভয় ও শঙ্কা আছে, তা দূর করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য চুক্তি শতভাগ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
চুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বা পরিকল্পনায় এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সেখানকার নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে সকল সেটেলারদের পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে সম্মানজনক পূর্নবাসনসহ ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.