পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় পানছড়ির মায়াবিনী লেক

Published: 10 Feb 2018   Saturday   

শীতল নীরব নিস্তদ্ধ স্বচ্ছ জল, স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ায় মাছ। চারিদিকে বিস্তৃত অরণ্যঘেরা সবুজের সমারোহ আর পাহাড়। পাহাড়ের মাঝে লেক। লেকের মাঝখানে আর চারিদিকে রয়েছে টিলা। এ টিলাগুলোতে তৈরী করা হয়েছে গোলঘর বিশ্রামাগার। গোল ঘর থেকে পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরী বাঁশের সাঁকো।

 

লেকে ঘুরার জন্য রয়েছে নৌকা। পড়ন্ত বিকেলে লেকের চারিদিকে নৌকায় করে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরানো যায়। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁসের পাশাপাশি দেখতে পাবেন সাদা বক আর বড় বড় মাছের লাফা-লাফি। যা আপনার নৌকা ভ্রমনের আনন্দকে শতগুন বাড়িয়ে দেবে। পাবেন প্রকৃতির স্বাদ।
এটি খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার কংচাইরী পাড়ার পর্যটন স্পট লেক ‘মায়াবিনী’। গেল বছর ৭ নভেম্বর খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক রাশেদুল ইসলাম বিশ্রামগার‘ মায়াবিনী’ ও জেলা প্রশাসক সহধর্মীনি কানিছ ফাতেমা স্বর্ণা বাঁশের তৈরী সাঁকোগুলো উদ্বোধন করেন । সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ লেক জেলার সর্বোচ্চ পর্যটন স্পটে রুপ নিতে পারে।


দারিদ্র মাহমুদ নামে এক ভদ্র লোক সেই মায়াবিনী নিয়ে ফেসবুকে একটি উপন্যান লিখতে শুরু করেছেন। ‘লেক’ মায়াবিনীর গিয়ে মনোমুগ্ধ হয়ে তিনি এ উপন্যাস লেখা শুরু করেন। সেই উপন্যাসের ধারাবাহিক এখনো পর্যন্ত দুই পর্ব পোস্ট করা হয়েছে। আরো অনেক পর্ব আছে বলে তিনি জানান।


এ লেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটকসহ প্রতি শুক্রবারে কয়েক হাজার পর্যটকের ভীড় জমে। কেউ আছেন উপভোগ করতে, কেউ আছেন পিকনিকে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে ঘিরে সেজেছে অপরুপ রুপে। উপজেলার অটো মোটর বাইক সমিতি(সিএনজি)সহ বিভিন্ন সমিতি ও গ্রামের ভ্রমন পিপাসু তরুন-তরুনিরা সেদিন লেকে পিকনিক করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যায়।


‘একতা সমিতি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে সমিতির মাধ্যমে কংচাইরী পাড়ার একঝাঁক তরুন উদ্যোক্তা শুধু মাছ, হাঁস, মুরগী চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্যোগ ‘একতা সমিতি’ নামে একটি সমিতি তৈরী করে লেক করার উদ্যোগ নেয়। তাঁদের এ উদ্যোগে হাতে বাড়িয়ে দেয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ২০১৬ সালে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে ২২০ ফুট দৈর্ঘ্য একটি বাঁধ করে দেয়। সমিতি বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৫জন। ২০১৬ সালে উপজেলা জেলা মৎস্য অফিস থেকে ১০০ কেজি মৎস্য পোনাসহ ৫লাখ টাকার মৎস্য পোনা, ৬ লাখ টাকার মাছের খাদ্যসহ মোট ২৩ লাখ টাকা খরচ করেছে অর্ধেক মাছ বিক্রি করে ২২লাখ টাকা আয় করেছে। আর অর্ধেক মাছ না ধরে পুকুরে রেখে দিয়েছে। ২০১৭ সালে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে ১০ কেজি মাছের পোনাসহ ৩ লাখ টাকার মৎস্য পোনা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাছ বিক্রি করে ৪-৫গুন লাভ হবে বলে সমিতির সদস্যরা আশাবাদী।


একতা সমিতির সভাপতি অংলাপ্রু মার্মা জানান, এ সমিতির মাধ্যমে আমরা গ্রামের অসহায় লোকদের সহায়তা, শিক্ষা বৃত্তি, অসহায় ও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করে যাছি। এ লেকটি পর্যটন স্পটে রুপ নিতে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা ও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম সব সময় সহায়তা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।


পানছড়ি উপজেলার সিনিয়র শিক্ষক নান্টু চাকমা ও বিশ্বময় চাকমা, ভাইবোনছড়া মিলেনিয়াম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাতু মনি চাকমা জানান, লেকে প্রতিদিন শতশত পর্যটন আছে। পড়ন্ত বিকেলে লেকে নৌকা ভ্রমন খুবই আনন্দ দায়ক। নৌকা ভ্রমনের সময় বড় বড় মাছের লাফা-লাফি, ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁস আর সাদা বক দেখতে পাবেন। যা আপনার নৌকা ভ্রমনের আনন্দকে শতগুন বাড়িয়ে দেয়।


পানছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন এই লেকটি এখন ‘মায়াবিনী’ লেক রুপে দিনদিন পরিচিতি লাভ করছে। আমরা সুযোগ পেলে লেকে যায়। নৌকা ভ্রমন করে খুবই মজা করি।


উপজাতীয় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সে চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র সহকারী সচিব খগেন ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়ি জেলার এটিই সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক লেক। লেকে গেলে মন পবিত্র হয়। নৗকায় করে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। তাই প্রতিদিন শথ শত ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক এ লেকে আসে।


পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা ও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেছেন, লেকে যাওয়ার জন্য উপজেলার এডিবি প্রকল্প থেকে সাত লাখ টাকা দিয়ে ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্য পথ ইট সলিং করে দেয়া হয়েছে। লেকটিকে পরিপূর্ণ পর্যটন স্পট করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও হচ্ছে না। এ জন্য রড় ধরনের বরাদ্দের প্রয়োজন। এ ব্যাপরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করা হয়েছে।

 

কিভাবে যাবেন মায়াবিনী লেকে

মায়াবিনী লেকটি পানছড়ি উপজেলায় অর্ন্তগত হলেও খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তীতে অবস্থিত। পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে ভাইবোন ছড়া বাজারে উত্তরে মাথায় ‘মায়াবিনী’র একটি সাইন বোর্ড দেওয়া আছে। খাগড়াছড়ি থেকে ভাইবোনছড়া বাজারের দূরত্ব ১৫কিলোমিটার। খাগড়াছড়ির চেংগী স্কোয়ার থেকে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে বাস, পিকআপ, জীপ(চাঁদের গাড়ী), সিএনজি, মহেন্দ্র ও মোটর সাইকেলে উঠে ভাইবোন ছড়া বাজারে নেমে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে এ লেক। আর পানছড়ি থেকেও একই গাড়ীতে যাওয়া যায়। দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত