স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহন করতে হবে

Published: 07 Mar 2018   Wednesday   

রাঙামাটিতে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নে স্থানীয় মানুষের অংশ গ্রহন শীর্ষক সংলাপের বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন।

 

তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন করতে হলে এ অঞ্চলের সংস্কৃতিকে বজায় রেখে ও স্থানীয় জনসাধারনকে সম্পৃক্ত করে উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহন করতে হবে। তা না হলে এ উন্নয়ন এখানকার মানুষের কোন কাজে আসবে না।

 

অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন ও কাপেং ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের আয়োজনে বড়গাং পর্যটন কেন্দ্রের সন্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন  জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য নূরুল আলম, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ ইমাম, রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা।  স্বাগত বক্তব্যে  দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নে স্থানীয় মানুষের অংশ গ্রহন শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মোনঘর শিশু সদনের নির্বাহী পরিচালক আশোক কুমার চাকমা।

 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে রাখেন রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, নারী নেত্রী এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, উন্নয়ন কর্মী ললিত চন্দ্র চাকমা, পাড়ার নির্বাহী পরিচালক আব্বাস উদ্দীন সাংবাদিক হিমেল চাকমা, সত্রং চাকমা প্রমুখ। দিন ব্যাপী সংলাপে হেডম্যান কারবারী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশা শ্রেনীর নেতৃবৃন্দ সংলাপে অংশ  নিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন।

 

সংলাপে বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক চালু করলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষককের অভাবে তার সফলতা পাচ্ছে না। যদিও সরকার ডাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করছে আদিবাসীদের মাতৃভাষা চালু করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠান পার্বত্য জেলা পরিষদের দীর্ঘ সময় ধরে কোন নির্বাচন না হওয়ায় সরকারের মনোনীত ব্যক্তিদের দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতা দুরের কথা এখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের উন্নয়নসহ কোন প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ নেই। বস্তুত তিন জেলা পরিষদ এখন রাজনৈতিক পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাড়িয়েছে।

 

বক্তারা বলেন, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ করলেও তা বাস্তববে কোন দৃশ্যমান নয়। সাধারন মানুষের উন্নয়ন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোন  প্রতিফলন নেই।

 

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে রোড ম্যাপ ঘোষনার দাবী জানিয়ে আসছি উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার ৭২ ধারার মধ্যে ৪২ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে দাবী করছে এটাই খুবই দুঃখ লাগে। তাই আশংকা জাগে সরকার না দিলেও চুক্তির সবই দিয়ে ফেলেছে। পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠিত পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বয় করবে। কিন্তু ২০ বছরেও আঞ্চলিক পরিষদের প্রবিধান প্রনয়ন করেনি সরকার।

 

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, এখানকার সাধারন মানুষের সাথে আলাপ-আলোচনা ও সম্পৃক্ত করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করতে হবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগনের সম্পৃক্ততা ছাড়াই উন্নয়ন করা হয়েছে। আর যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে তা চাপিয়ে দেয়া উন্নয়ন হয়েছে।

 

তিনি বলেন, সরকারের বন ভূমি নেই। সরকার বন ভূমি করবে তা ভালো কথা। আমরাও চাই বাংলাদেশে বন ভূমি করা হোক। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ভূমি করার জন্য ২ লাখ ১৮ হাজার একর জমিতে বন ভূমি অধিগ্রহন করার পরিকল্পনা করছে। যদিও সরকার বলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে খাস ও বিরান  ভূমি রয়েছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন খাস জমি নেই। যে সব ভূমি রয়েছে তা জোট মালিকানাধীন ও এলাকার মানুষের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তাই এসব ভূমি অধিগ্রহন করা হয় হাজার হাজার মানুষ উচ্ছেদ হয়ে যাবে। কাপ্তাই বাধের কারণে যে সব মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে তার চেয়েও বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

 

জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা বলেন,পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে এখনো অবহেলিত রয়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন হওয়া দরকার এবং সব ধরনের জনগোষ্ঠীদের প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরী।

 

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী সময়ে পার্বত্য এলাকায় হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন হয়েছে বলা হলেও তা দৃশ্য্যমান নয়। তা আমরা সবাই জানি।

 

তিনি বলেন, আদিবাসীদের ৫টি জনগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষা চালু করেছে। কিন্তু প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। এখানে সরকার শুধু মাতুভাষার বই ছাপালে চলবে না প্রশিক্ষিত শিক্ষক দিতে হবে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য নূরুল আলম বলেন, সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এখানকার মানুষের হতাশা দেখা দিচ্ছে। এখানে উন্নয়ন হওয়ার কথা থাকলেও সাধারন মানুষের উন্নয়নের ছোয়া পাচ্ছে। তাই স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করে  উন্নয়নের কাজ করতে হবে। 

 

অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ ইমাম, যে কোন উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে অষ্ট্রেলিয়ান সরকার আগ্রহী। অষ্ট্রেলিয়ান সরকার তার নৈতিক দিক থেকে উন্নয়নে কাজ করতে চায়। তাই অষ্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন বড় জানালা খুলে রেখেছে, বিশেষ করে টেকনলোজি ও শিক্ষা দিক দিয়ে। অষ্ট্রেলিয়ান সরকার শিক্ষা বিষয়ে এওয়ার্ড নিয়ে কাজ করছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত