আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা-সমমর্যাদা নিশ্চিতকরণ ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান

Published: 08 Mar 2018   Thursday   

আন্তর্জাতিক নারী দিবস  উপলক্ষে আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা-সমমর্যাদা নিশ্চিতকরণ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসুন শ্লোগানে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

সভায় বক্তারা আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা-সমমর্যাদা নিশ্চিতকরণ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁও-এর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কলাম লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কনা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, এএলআরডির উপ পরিচালক রওশন জাহান মনি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়ার প্রোগ্রাম ম্যানেজার এভিলিনা চাকমা ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের যুগ্ম আহ্বয়ক রাখি ম্রং প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি মনিরা ত্রিপুরা ও মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা।

 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি চন্দ্রা ত্রিপুরা ও সঞ্চালনা করেন জয়শ্রী চাকমা। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী নারী অধিকার কর্মী, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

আলোচনা সভায় ফাল্গুনি ত্রিপুরা তার মূল প্রবন্ধে ১১ দফা দাবী তুলে ধরেন। সেগুলো হল আদিবাসী নারীর সকল মানবাধিকার নিশ্চিত,আদিবাসী নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা বন্ধে দ্রুত ও কার্যকর হস্তক্ষেপ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিরাপত্তা জোরদার,আদিবাসী নারী ও শিশুর উপর সহিংসতার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান,সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারী ও শিশুদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা প্রদান,নারী উন্নয়ন নীতিমালায় আদিবাসী নারীদের জন্য আলাদা একটা অধ্যায় রাখা এবং সকল ধরনের নীতিমালা গ্রহনের পূর্বে আদিবাসী নারী নেতৃবৃন্দের পরামর্শ গ্রহণ,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা এবং এলক্ষ্যে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা, আদিবাসী নারীদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা,আদিবাসী মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু কমানোর লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ,ভূমি ও সম্পত্তির উপর আদিবাসী নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং বন, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার,শিক্ষা কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে  আদিবাসী নারীদের জন্য কোটা নিশ্চিত করা এবং বিধবা ও বয়স্ক ভাতা নিশ্চিত  এবং জাতীয় সংসদে অঞ্চলভিত্তিক এবং স্থানীয়  সরকার ব্যবস্থায় আদিবাসী নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরেন। 

 

সম্মানিত অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তব্য কলাম লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তার বক্তব্যে বলেন আদিবাসী এলাকায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন খুব বেশি তৎপর নয়। যেখানে মূলধারার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়, সেখানে দুর্বলঅংশগুলোর প্রতি প্রশাসনের নজর আরো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা যদি সফলতা অর্জন করতে চাই, তবে নারীদের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।  রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু এই সংখ্যা দিয়ে কিছু হবেনা। যতক্ষণ নীতি নির্ধারনী জায়গায় নারীরা ভুমিকা রাখতে না পারবে ততদিন পুরোপুরি সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। এছাড়া তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে পাহাড়ে নারী পুরুষ কারোরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাইলে নারীর অংশগ্রহণ ও অবদানকে স্বীকার করতে হবে। এছাড়া নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিক করতে হবে তিনি উল্লেখ করেন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কণা বলেন-বাংলাদেশের ইতিহাসে আদিবাসী নারীদের অনেক অবদান রয়েছে। তাদের সেই অবদানের ইতিহাসই আমার জীবনের অনেক বড় প্রেরণা। তিনি বানিজ্যিক ধারার নারী দিবস পালনের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের বৃহৎ  নারী শ্রমিক গোষ্ঠী এই নারী দিবস উদযাপনের বাইরে। নারী দিবসের মৌলিক অনুপ্রেরণা থেকে বের হয়ে বানিজ্যিক নারী দিবস পালন করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং  বলেন, আদিবাসী সমাজে নারীরা অন্যান্য সমাজের নারীর থেকে এখনো অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। নারীর উপর সহিংসতা যারা করে বুঝতে হবে তারা মূলত হেরে যায় । দুই মারমা  মেয়ের উপর যারা নির্যাতন করেছে তারাই যত ক্ষমতাশালী হোকনা কেন কোননা কোনভাবে তারা হেরে যাবে। রাষ্ট্র বা ক্ষমতাশালীদের এটা অনুধাবন করতে হবে।

 

রওশন জাহান মনি বলেন,সমাজ ও রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হলে অন্তত কিছুটা হলেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো। যেহেতু সেই অঞ্চলের লোকজন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতো। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন দরকার। তিনি আরো বলেন-পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় আদিবাসী নারীরা নিরাপত্তার হুমকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া নারীদের সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় যে আইন ও নীতিমালা রয়েছে, তার চাইতে আদিবাসীদের প্রথাগত সামাজিক ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় করতে হবে।

 

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা বলেন, -বাঙ্গালী নারীদের উপর নিপীড়ন আইন শৃংখলা বাহিনীর দ্বারা খুব একটা হয় না, কিন্তু পাহাড়ে বা আদিবাসী নারীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর দ্বারা বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী পুরুষের সমমর্যাদা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ব্যর্থ। ফলে এই রাষ্ট্র কাঠামোকে বদলানো গেলে সমাজতন্ত্রের আলোকে যদি বাংলাদেশকে গড়া যায় তবে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে ধাবিত হওয়া সম্ভব।

 --হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত