শক্তিমান চাকমার লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর

Published: 03 May 2018   Thursday   

নানিয়ারচরের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও এমএন লারমা গ্রুপের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এসময় রূপম চাকমা নামে একজন আহত হয়েছে। ঘটনার পর পরিস্থিতি বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নানিয়ারচর থানার কিছু দূরে এ ঘটনা ঘটেছে।তবে এ ঘটনায় এমএন লারমা গ্রুপের জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) দায়ী করলেও প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ অস্বীকার করেছে। 

 

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে শক্তিমান চাকমা বাজার থেকে তার সহযোগী রুপম চাকমাকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেলযোগে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ে পৌছান। এসময় কার্যালয়ের উঠার আগে উৎপেতে থাকা তিন জন দুর্বৃত্তর খুব কাছ থেকে তাকে লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করলে তিনি ঘটনাস্থলে নিহত হন। এসময় তার সাথে থাকা এমএন লারমা গ্রুপের জেএসএস এর নানিয়ারচর থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুপম চাকমা আহত হন। তাকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর এলাকায় পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।


এদিকে শক্তিমান চাকমার মৃত দেহ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কড়া প্রহরায় নিয়ে আসা হয়েছে। এসময় হাসপাতালে তার আত্বীয়-স্বজন, জেলা বার এসোসিয়েশনের নেতারা ও শুভকাংখীরা তাকে শেষবার দেখতে হাসপাতালে ভিড় জমান। শক্তিমান চাকমার একমাত্র মেয়ে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রেয়া চাকমা বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে যান। সেখানে বাবার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য অবতারণা হয়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্ষন্ত শক্তিমান চাকমার লাশ ময়নাতদন্তের শেষে পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। পরে তার স্বজনরা নানিয়ারচর নিয়ে যাওয়ার লাশ উপজেলা পরিষদে রাখা হয়েছে। শুক্রবার পারিবারিক শশ্নানে তার শেষ কৃত্য হবে জানা গেছে। 

 

শক্তিমান চাকমার চাচাতো ভাই বিদর্শী চাকমা জানান, তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার খাদ্য অফিসে চাকুরী করেন। সেখানে রাঙামাটি থেকে পরিচিত একজন তাকে টেলিফোন করে জানান শক্তিমান চাকমা মেরে ফেলা হয়েছে। পরে তিনি তার শ্যালিকাকে টেলিফোন ঘটনার সম্পর্কে নিশ্চিত হন।


শক্তিমান চাকমার ছোট ভাই রতন চাকমা জানান, তিনি গতকাল সকালের দিকে নানিয়ারচরে তার নিজের বাগানে কাজ গেলে তার এক কর্মচারী জানান শক্তিমান চাকমাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তার ভাইয়ের লাশ দেখতে পান। তিনি আরো জানান, দুর্বৃত্তরা খুব কাছ থেকে গুলি করে তার মৃত্যূর নিশ্চিত হয়ে চলে গেছে।


দেখতে যাওয়া মৃত্যূ আমরা কামনা করিনা। এভাবে চাপ প্রযোগ করে রাজনীতির সমাধান প্রত্যাশা করিনা। রাজনীতি যে যার যার। তবে শক্তিমান চাকমা যে রাজনীতি করেন তা হয়তো সেই রাজনীতি আমি বিশ্বাস করিনা। কিন্তু শক্তিমান চাকমা আমার ¯েœহভাজন ব্যক্তি সেজন্য দেখতে এসেছি। তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করতে সবাইয়ের শুভ বুদ্ধি উদয় হোক। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস্তবতা বুঝে রাজনীতিকে সেভাবে জানতে পারি,রাজনীতি রাজনীতি জায়গাতে থাকুক। এ ধরনের হিংসাতœক সংঘাত চলতে থাকলে পার্বত্য এলাকায় জনগোষ্টীদের আধিকার আদায়ে আরো পিছিয়ে পড়বে।


নানিয়ারচর থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার পর এলাকার পরিস্থিতি ভাল রয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার ও মামলা দায়ের হয়নি।


রাঙামাটি পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান, নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শক্তিমান চাকমা তার অপর একজন সহকারী রূপম চাকমাকে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে বাজার থেকে সকালে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় পরিষদের সামনে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা দুবৃর্ত্তরা এলোপাথারী গুলি করে পালাতে থাকে। গোলাগুলি শব্দ পেয়ে নানিয়ারচর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। তখন তারা দেখতে পায় সাদা পোষাকের তিন জন সন্ত্রাসী দৌড়াতে থাকে। পুলিশ সন্ত্রাসীদের ধরতে ধাওয়া দেয় এবং এক পর্যায়ে গুলিবর্ষন করে।


অপরদিকে শক্তিমান চাকমার নিহতের ঘটনায় প্রসিত বিকাশ চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ ও এমএন লারমা গ্রুপের জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) পরষ্পরকে দায়ী করেছে। এমএন লারমা গ্রুপের জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা প্রসতি বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের অর্পন চাকমার নেতৃত্বে শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন।

 

তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মীকে হারিয়েছি। এ থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা,মহালছড়ি, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বিক্ষোভ-মিছিল করা হয়েছে। এরপরও যদিও প্রশাসন দোষীদের গ্রেফতার না করে তাহলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে।

 

তবে ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমার এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে জানান, কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়াই এ ধরনের অভিযোগ করা ঠিক নয়। অনুমান নির্ভর অভিযোগ করা সুন্নিবিশিত নয়। এতে প্রকৃত খুনীদের রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করবে। তিনি অরো বলেন,ইউপিডিএফ ও সংস্থারপন্থী জেএসএস-এর মধ্যে তীব্র সংঘাত সৃষ্টিতে তৃতীয় একটি পক্ষ পরিকল্পিভাবে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত