রাঙামাটিতে হিলর ভালেদীর পূনর্মিলনী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

Published: 25 Aug 2018   Saturday   

শনিবার রাঙামাটিতে সাংস্কৃতিক সংগঠন হিলর ভালেদী ও হিলর প্রোডাকশনের পূর্নমিলনী উপলক্ষে আলোচনা সভা, সন্মানা স্মারক প্রদান ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 

রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। হিলর ভালেদী ও হিলর প্রোডাকশনের সভাপতি সুপ্রিয় চাকমা (শুভ) সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও অবঃ উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, লেখক, কবি ও সাহিত্যিক মৃত্তিকা চাকমা, রাঙামাটি রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা,হিলর ভালেদী সংগঠনের সাবেক উপদেষ্টা স্নহাশীষ চাকমা(আশীষ),সংগঠনের উপদেষ্টা ও নাটঘর একাডেমীর অধ্যক্ষ সচিব চাকমা প্রমূখ। সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদীকা পারমিতা চাকমার অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নিকেল চাকমা। অনুষ্ঠানে সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে কাজ করার গুরুত্ব ও সহযোগিতার ভূমিকা অপরিসীম সেসব বিষয়ে নিজের অভিমত প্রকাশ করেন সংগঠনের সদস্য মাতৃ চাকমা।


এর আগে দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে মোমবাতি প্রজ্জলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সাধনমনি চাকমা। ‘যেই ভেই লক এক সমারে যেই’ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনের সদস্য প্রিয়াংকা চাকমা। এরপর শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও মঞ্চায়িত হয় ২৫ মিনিটের ১২জন অভিনীত সম্পূর্ণ চাকমা ভাষায় ‘জধাবল’ নাটক। পরে সুপ্রিয় চাকমা (শুভ) পরিচালিত চাকমা ভাষায় নির্মিত ‘ম মনান হিঙিরী বুঝেম’ ও ‘মানেয় জনম’ দু’টি চাকমা ফিল্মে সেরা অভিনয় করা ছয়জনকে সম্মাননা স্বারক প্রদান ও মঞ্চে মঞ্চায়িত ‘জধাবল’নাটকে অভিনিত সেরা তিনজনকে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।


প্রধান অতিথির বক্তব্য রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, হিলর ভালেদী ও হিলর প্রোডাকশনের এই ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে যে কেউ মুগ্ধ হবে। অনুষ্ঠানে না আসলে হয়তো অল্প সময়ে করা এমন মনোমুগ্ধকর আয়োজন উপভোগ করা সম্ভব হতো না। মাত্র একদিনে মধ্যে এমন পারফরমেন্স করা বলা বাহুল্য। সংগঠনটি যদি এভাবে কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে একদিন সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হবে।


মেয়র আরো বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশা-পাশি যুব সমাজকে মাদক থেকে বিরত থাকার সচেতনতা বাড়াঁতে হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে রাঙামাটি স্টেডিয়ামের পাশে অনেক যুবক আড্ডাতে মেঠে উঠে। সেসব বিষয়গুলো সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান। রাঙামাটিতে অবাধে গরু চলাচল ও ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশনের কাজ চলছে। একমাসের মধ্যে সেসব সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি জানান।


মেয়র সংগঠনকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, সংগঠনের যদি একটি নির্দ্দিষ্ট জায়গা থাকে তাহলে পৌর সভার পক্ষ থেকে ভবণ নির্মাণে সর্বাত্তক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

 

মঞ্চে মঞ্চায়িত ‘জধাবল’ নাটক উপভোগ করে সাধন মনি চাকমা বলেন, অতীতে পাহাড়ি বৈদ্যদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম ছিল। অতীতকালে পাহাড়ে যখন চিকি’সক ছিল না তখন বৈদ্যরাই মানুষের জীবন বাঁচানোর একমাত্র সম্ভল ছিলো। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতি হওয়াতেই পাহাড়ে এবং শহরাঞ্চলে বৈদ্যদের কেউ বিশ্বাস করে না। তার কারন হচ্ছে বর্তমানে পেটের ক্ষুধা মিটানোর জন্য অনেকে ভূয়া বৈদ্য সাজে। যার কারনে বর্তমানে বৈদ্যদের কেউ বিশ্বাস করতে পারে না। হিলর পরিবার এমন একটি উল্লেখযোগ্য নাটিকা উপস্থান করতে পারবে সম্পূর্ণ কল্পনীয়। কেননা সংগঠনের উদ্যোগে করা এটি ছিলো প্রথম মঞ্চায়িত নাটিকা।

 

প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, সংস্কৃতি মানে মানে জীবনধারার একটি অংশ। সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে লালন পালন করতে পারলেই হিলর পরিবার পার্বত্য চট্টগ্রামের মুখ উজ্জল করবে। সংগঠনটি সাংস্কৃতিক বিষয়ে যে কাজ গুলো করে যাচ্ছে সত্যি প্রশংসনীয়। বিভিন্ন সেবা মূলক, সামাজিক কর্মকান্ড, রক্তদান কর্মসূচী করে যাচ্ছে সেগুলো দেখার বিষয়। জুম্ম জনগণের সংস্কৃতিগুলো তুলে ধরতে এক ঝাক তরুণ সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।

 

মৃত্তিকা চাকমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসী পাহাড়ি তরুণদের অনেক প্রতিভা রয়েছে। সেসব প্রতিভা গুলো বিকশিত হতে না পারার পেছনে রয়েছে অর্থ। পাহাড়ের তরুণ-তরুণীরা নিজের হাট খরচ বাঁচিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজ সংস্কৃতিকে বিকশিত করার। কিন্তু সেসব গুলো সঠিক রুপ প্রতিফলন সম্ভব হবে তরুণ-তরুণদের নাট্য কর্মশালার মধ্যে দিয়ে। প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যেমে তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে হবে।

 

তিনি পৌর মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, রাঙামাটিতে অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। যারা সঠিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখা আবশ্যক।

 

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অনেক কিছু নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও বিকাশে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্যোগীদের উৎসাহ জোগাতে দরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা। হিলোর ভালেদী ও হিলোর প্রডাকশনের এমন উদ্যোগে আন্তরিক সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃক্ষকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান বক্তারা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত