পার্বত্য চুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তিতে খাগড়াছড়িতে নানান আয়োজন

Published: 01 Dec 2018   Saturday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রোববার খাগড়াছড়িতে সরকারীভাবে বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহন করা হয়েছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া হতাশ পার্বত্যবাসী। তাদের দাবী পার্বত্য বাসীদের দাবী চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন না করে সরকার পার্বত্য চুক্তির ২১ তম বর্ষপূতি পালন করতে যাচ্ছে এই বছর।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ তিন দশক ধরে চলা আন্দোলনের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দীর্ঘ ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও চুক্তির পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তিসহ বহু ধারা আজো রয়ে গেছে অবাস্তবায়িত। চুক্তির অমিমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে চলছে অবিশ্বাস, দুরত্ব। ফলে প্রত্যাশিত ভাবে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে কাংখিত শান্তি ফিরে আসেনি। ২১ বছর পরেও শান্তি চুক্তির মূল ধারাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ পার্বত্যবাসী।


সরকার সমর্থকরা বলছে চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়নের পথে, যার ফলে পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার দাবী করলে ও পাহাড়িরা মনে হতাশার কালো মেঘ এখনো কাটেনি । অনেকে মনে করেন চুক্তি পর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ে চলছে হানাহানি মারা মারি। বিভিন্ন ভাবে ভাগ হচ্ছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন গুলো।


আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস এমএন লারমা দল ও নতুন গঠিত গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ এর একাধিক নেতা জানান সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কারনে পাহাড়ে শান্তি চুক্তি বিরোধীরা পার্বত্য এলাকা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারনে পাহাড়ে চলছে হত্যাসহ নানা ধরনের অরাজকতা।


অন্যদিকে ইউপিডিএফ প্রসিত প্রুপের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান তারা তাদেরকে শান্তি চুক্তি বিরোধী বলা হলে ও প্রকৃত পক্ষে তারা শান্তি চুক্তি বিরোধী নয়।  তারা চান পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন। তাই তারা পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনের লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ পাহাড়ীদের দাবী অচিরে যেন সরকার ভূমি সমস্যা সমাধানসহ পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে শান্তি ফিরে নিয়ে আসেন।

 

জল বিদ্যূতের নামে কাপ্তাই বাঁধ তৈরী, রাজনৈতিক ভাবে সমতল থেকে পাহাড়ে বাঙালি পূনর্বাসনসহ নানা কারনে পাহাড়ে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(জেএসএস)। এরপর প্রায় দু‘যুগের বেশি সময় ধরে চলে সশস্ত্র সংগ্রাম। এতে অসংখ্য পাহাড়ী ও বাঙ্গালী ক্ষতির শিকার হন। পরের কয়েকটি সরকার শান্তি প্রক্রিয়া চালালেও আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির সাথে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে। কিন্তু অজো প্রত্যাশিত শান্তির দেখা মিলেনি পাহাড়ে। পাহাড়ীদের দাবী পার্বত্য এলাকায় মূল সমস্যা ভূমি সমস্যা। এ সমস্যা সমাধান করলে পাহাড়ে আর বড় কোন সমস্যা থাকবে না বলে মনে করেন পাহাড়ী জনগোষ্ঠির মানুষ। আর ভারত প্রত্যাগত জুম্ম (উপজাতীয়) শরনার্থীরা অনেকে এখনো ফিরে যেতে পারেনি তাদের মূল বাস্তভিটায়। তাদের দাবী সরকারের সাথে তাদের নিজ ভুমি ফেরত দেওয়া, তাদের জান মালের নিরাপত্তা ও চাকুরিসহ তাদের সাথে ২০ দফা চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সরকার তাও কোনটায় বাস্তবায়ন করেনি।


প্রত্যাগত জুম্ম (উপজাতীয়) শরনার্থীর নেতা সুকৃতি জীবন চাকমা জানান তাদের সাথে সরকারের ২০ দফা চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সরকার আদৌ সে চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী অনেকে এখনো তাদের বসত ভিটায় ফিরে যেতে পারেনি বলে তিনি দাবী করেন।

 

নারী নেত্রী ও সমাজকর্মী শাপলা ত্রিপুরা বলেন সরকার যে ৪৫ টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে দাবী করছে তা তার কাছে বোধ্যগম্য নয়। তিনি আরো বলেন চুক্তিতে উল্লেখ ছিলো ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী ও জেএসএস কর্মীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার কথা থাকলে সরকার তা করেনি। অনেক জেএসএস কর্মী ও জুম্ম শরনার্থী এখনো পূর্নবাসিত হয়নি বলে তিনি জানান।


পার্বত্যাঞ্চলের নানা শ্রেণী পেশার মানুষের প্রত্যাশা-পাহাড়ে শান্তি স্থাপন ও চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগ নেবে। সাধারন জনতা থেকে শুরু করে পাহাড়ের নেতারা চুক্তির সার্বিক পরিস্থিতিতে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। চুক্তির ধারাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভ্রাতৃঘাতি ও জাতিতে জাতিতে সংঘাত ঘটছে বলে অভিমত সাধারন পাহাড়ীদের। তারা অচিরে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জোর তাগাদা দিয়েছেন।


চুক্তির একুশ বছরে পেরিয়ে গেলেও চুক্তির মৌলিক বিষয় ও শর্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা বলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন পাহাড়ের মানুষ। তারা বলছেন, আওয়ামীলীগের এত বছরেও চুক্তির কোন অগ্রগতি নেই। তারা আশা করেন সরকার অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তিসহ চুক্তির সকল মূল ধারা গুলো বাস্তবায়ন করবেন।


অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করে এবার চুক্তির ২১তম বর্ষপুর্তি পালন করতে যাচ্ছেন।
প্রতি বছরে ন্যায় এই বছর ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন চুক্তির ২১তম বর্ষপুর্তি উপলক্ষে দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়ে নিয়েছে।


খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন পার্বত্য চুক্তির একটি চলমান প্রক্রিয়া। চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। আর বাকী ধারা গুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। বর্তমান সরকার চুক্তি করেছিলো তাই এই সরকার চুক্তি নিয়ে খুবই আন্তরিক। তিনি আরো বলেন সামনের নির্বাচন আওয়ামীলীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে।
--হিলবিডি২৪/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত