খাগড়াছড়িতে শিশু অধিকার বাস্তবায়ন সম্পর্কিত জবাবদিহিতা বিষয়ক সেমিনার সেমিনার অনুষ্ঠিত

Published: 05 Mar 2019   Tuesday   

নিরাপদে বেড়ে উঠার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির দাবীতে পার্বত্য অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নানা সমস্য ও শিশু অধিকার বাস্তবায়ন সম্পর্কিত জবাবদিহিতা বিষয়ক সেমিনার মঙ্গলবার খাগড়াছেিত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে হেলপিং চিলড্রেন গ্রোয়িং এ্যাজ এ্যাকটিভ সিটিজেন প্রকল্পের আওতায় শিশু সংগঠন ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ)-এর আয়োজনে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম।
দাতা সংস্থা প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন পল্টনজয় পাড়া এনসিটিএফের সভাপতি স্কুল শিক্ষার্থী রৌদ্র ত্রিপুরা। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী মো. চাহেল তস্তরী, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মো: নাজমুস শোয়েব, সহকারি পুলিশ সুপার (ডিএসবি) খন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজ ও আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পল্টনজয় পাড়া এনসিটিএফের সহ-সভাপতি ছাত্রী জবা ত্রিপুরা ও নুসরাত জাহান জুঁই। অধিবেশনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাবারাং সংস্থার কর্মসূচি সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরা। স্বাগত বক্তব্য শেষে উপস্থাপক জবা ত্রিপুরা।


উপস্থাপনায় বক্তারা বর্ষায় চেংগী নদীর পানী বেড়ে গেলে স্কুলে, হাসপাতালে বা বাজারে যাতায়াতের সমস্যা, পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সমস্যা, গ্রামের অধিকাংশ পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট বিষয়ে সচেতন না হওয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের হুমকী, কিশোরীদের বয়:সন্ধীকালীন সমস্যাকে এখনও পরিবারে বা সমাজে ভালো চোখে না দেখার কারণে বিদ্যালয়ে অপ্রত্যাশিত সমস্যায় অনুবিধা পড়তে হয়, রাস্তাঘাটে, দোকানে বা খেলার মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় বখাটে ছেলেদের কাছ থেকে ইভ টিজিংয়ের শিকার, শিক্ষক দ্বারা শারীরিক শাস্তি ও প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করার মতো পরিবেশ তৈরি, স্কুলের টয়লেটগুলোতে সঠিক নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের অভাব, শিশু পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রের অপ্রতুলতা, বোর্ড পরীক্ষার সময় রাস্তায় র‌্যালী বা মিছিলের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে ট্রাফিক জ্যামসম সমস্যগুলো তুলে ধরেন।


উপস্থাপিত সমস্যাসমূহ নিয়ে পরামর্শমূলক, জবাবদিহিতামূলক আলোচনায় অংশ নেন জাবারাং নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি জীতেন বড়–য়া, মৌজা প্রধান হেডম্যান নিবুল লাল রোয়াজা, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা উষানু চৌধুরী, পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীলা তালুকদার, সহকারি পুলিশ সুপার (ডিএসবি) খন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মো: নাজমুস শোয়েব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী মোহাম্মদ চাহেল তস্তরী।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন,ইভটিজিং নিয়ে প্রশাসন অধিক সচেতন। আইন শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে এই বিষয়টি জিরো টলারেন্স। স্কুলে কিশোরীদের বয়:সন্ধীকালীন সমস্যাকে স্পষ্টভাবে বলতে পারার জন্য এনসিটিএফ সদস্যদের অভিবাদন জনান। স্কুলে কোন ছাত্রীর হঠাৎ সমস্যা হলে যাতে উপকরণ সহজপ্রাপ্য হয় সে দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রধান অতিথি প্রথমে একটি স্কুলে জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে উপকরণ সরবরাহের পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। জেলা সদরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দিয়ে শুরু করবেন বলেও তিনি মত ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নিজ উপজেলায় উদ্যোগ গ্রহনেরও অনুরোধ করেন।


জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, বর্তমান প্রজন্মের শিশুরাই পারে আগামীর খাগড়াছড়ি গড়তে। এ জেলার সন্তান মংসানু মারমা-এর ইলিশ জীন আবিষ্কারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন তোমরাও পারবে বিজ্ঞানী মংসানু মারমার মতো নতুন কিছু আবিষ্কার করতে। শুধু দরকার যৌক্তিক বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা।


খাগড়াছড়ি জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়–য়া জেলা পরিষদ পার্কের বিচ্ছিন্ন একটি অনাকাংখিত ঘটনার জের ধরে এক শিশু সদস্যের নিরাপত্তার দাবী ও আরও বিনোদন পার্ক নির্মাণের দাবী জানান।


পল্টনজয় পাড়ায় একটি খেলাধুলার মাঠের দাবীর প্রেক্ষিতে হেডম্যান নিবুল লাল রোয়াজার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি মাঠের জন্য জায়গা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু মাঠের পূর্নাঙ্গ চেহারা আনতে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতা কামনা করেন।


প্রাইভেট ও কোচিং নিয়ে ব্যাখ্যা দেন প্রধান শিক্ষক শ্রীলা তালুকদার। স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কোচিং পরিচালনা হলে আইন মেনেই তা করা হয়। তিনি আরও বলেন, আইন অনুসারে স্কুল শিক্ষক নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতে পারবেননা বলে আইনে উল্লেখ আছে। তাই যা হচ্ছে সম্পূর্ণই অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যকার ব্যাপার। সেখানে প্রধান শিক্ষকের করণীয় বলে কিছু নেই।


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজ ইভ টিজিং, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়ায় টমটম ভাড়া আদায় ও পরীক্ষার সময় রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম বিষয়ে তাঁর পুলিশ বিভাগকে আরও সতর্ক থাকার ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত