বাঘাইছড়িতে হতাহতের ঘটনায় ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত

Published: 19 Mar 2019   Tuesday   

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহন শেষে  উপজেলা সদরের ফেয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে হতাহতের ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ধরতে শীঘ্রই  যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এ  ঘটনা তদন্তে  ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  মঙ্গলবার নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর তাদের আত্বীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশ ঘরে রাখা নিহত ৬ জনের লাশ  মঙ্গলবার সকালের দিকে পাশ্ববর্তী জেলা খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের শেষে তাদের আত্বীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  বর্তমানে বাঘাইছড়ি উপজেলায় পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।  উপজেলায় সকল ধরনের দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লোকজন আতংকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তবে  পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী,বিজিবি,আনসার ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 

অপরদিকে, গতকাল পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ফয়েজ আহমেদ, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও উপজেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও নিহতদের আত্বীয়-স্বজনদের বৈঠক করেছেন।

 

জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ জানান, এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে  স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী। গঠিত এই কমিটিকে দশ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। 

 

তিনি আরো জানান এ ঘটনায় সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীদের নিমূল করার লক্ষে অনতিবিলম্বে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিহতের দাফনের জন্য প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ দশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। 

 

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে  গতকাল বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে বাঘাইছড়ি উপজেলাবাসী ব্যানারে বিক্ষোভ-মিছিল করেছে। এতে বক্তব্যে দেন নব নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কায়ুম, আব্দুল জলিল, মোঃ আবছার উদ্দীন প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

 

এ ঘটনায় পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান এ পার্বত্য নাগরিক কমিটির নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে এ ধরনের কান্ডজ্ঞানহীন ও হটকারী ঘটনাকে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না উল্লেখ করে বলেন, এ মানবিক বিপর্যয় কোনভাবেই কোন বিবেকবান মানুষের কাম্য হতে পারে না। যারা এ জঘন্য অমানবিক অপরাধ সংঘটিত করেছে তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি বিধানের দাবী  জানান।

 

এছাড়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্র্ন্ট (ইউপিডিএফ) এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বার্তায় বাঘাইছড়িতে নির্বাচন পরিচালনাকারী টিমের ওপর হামলা ও ৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।  বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘ঘটনাস্থল ইউপিডিএফ সমর্থক অধ্যুষিত হওয়ায় কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম ও এক শ্রেণীর গোয়েন্দাসংস্থা কর্তৃক দলটিকে সন্দেহের তালিকায় যুক্ত করায় ইউপিডিএফ ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।  প্রেস বার্তায় ‘উক্ত উপজেলায় ইউপিডিএফ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং ইউপিডিএফ’র কোন প্রার্থীও ছিল না, তাহলে ইউপিডিএফ কেন নির্বাচনী টিমের ওপর হামলা করে নিজেদের অহেতুক বিতর্কে জড়াবে’? প্রেস বার্তায়  হামলার মোটিভ ও যৌক্তিকতা বিচার না করে কেবলমাত্র হীন উদ্দেশ্যে ইউপিডিএফ-এর ওপর দায় না চাপাতে এবং প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সাধারণ জনগণকে হয়রানি না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, সোমবার বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনে সাজেকের কংলাক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে ভোট গ্রহন শেষে সদরে ফেয়ার পথে দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কের ৯ কিলোমিটার এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত ব্রাশ ফায়ার করে। এতে গুলিতে সহকারী পুলিং অফিসার ৭জন নিহত ও ২৬ জন আহত হন। এর মধ্যে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ১১জনকে হলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।রাতে গুরুত্বর আহত  চট্টগ্রাম সন্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সহকারী পুলিং অফিসার ও নিউ লাইল্যাঘোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আবু তৈয়ব মারা যান।  

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত