রাঙামাটিতে বসতভিটার সীমানা নিয়ে বিবাদে জেরে দুই প্রতিবেশীর বিরোধ চরমে

Published: 05 Apr 2019   Friday   

রাঙামাটিতে বসতভিটা জমির সীমানা নিয়ে বিবাদমান দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিরোধ চরমে রুপ নিয়েছে। এ নিয়ে দ্বন্ধ-সংঘাত, মারামারি ও মামলা-মোকদ্দমার এক পর্যায়ে এরই মধ্যে জেলহাজতে গেছেন, তোফাজ্জল হোসেন নামে একজন। অপরজন জাফরুল হাসানের স্ত্রী আফরোজা বেগমের করা মামলায় ২৮ মার্চ গ্রেফতার হয়েছিলেন তোফাজ্জল। ঘটনাটি শহরের তবলছড়ির ওমদা মিয়া হিল এলাকার। পুলিশ ও উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

জানা যায়, বসতভিটার জমিসংক্রান্ত বিরোধকে ঘিরে ৩ মার্চ উভয় পরিবারের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে শ্লীলতাহানিসহ গর্ভের সন্তান নষ্ট ও অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে তোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান আসামি করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেন, আফরোজা বেগম। ৮ মার্চ বাদী হয়ে রাঙামাটি কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি। মামলায় সর্বশেষ ২৮ মার্চ আত্মসমর্পণ করতে গেলে আদালতের নির্দেশে তোফাজ্জল হোসেনকে (৪৭) গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে। এ নিয়ে উভয়ের সঙ্গে কথা হলে পাওয়া যায়, পরস্পর বিরোধী বক্তব্য।

 

তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী রুবি বেগম বলেন, ঘটনার দিন আমার বড় মেয়ে তানিয়া আক্তার জাফরুলের বাসার পাশে কবুতর খুঁজতে যায়। তখন আমার মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন, জাফরুল হাসানের স্ত্রী আফরোজা। এর জবাব চাইতেই আফরোজা ও তার মেয়ে সাদিয়া বিনতেসহ কয়েক নারী তানিয়াকে মারধর করে। মেয়ের চিৎকারে তাকে উদ্ধার করতে যাই। তারা আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করেছে। ওইদিন আমার স্বামী তোফাজ্জল উপস্থিত ছিলেন না। বোটম্যান হিসেবে তার কর্মস্থল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন তিনি।

 

রুবি বেগম বলেন, জাফরুল হাসান ও আমার স্বামী তোফাজ্জল দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন। জাফরুল প্রায় সময় দুই বাড়ির মাঝখানের সীমানা নিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই বিবাদ সৃষ্টি করেন। আর আমরা ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে আসছি। এরই মধ্যে ওই জাফরুল হাসান আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন। তিনি বাড়ি নির্মাণ করছেন, আমাদের বসতভিটার সীমানার ওপর দিয়ে। এতে বাধা দেয়ায় সব সময় গায়ে পড়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হন জাফরুল ও তার পরিবার।

 

অপর পক্ষে জাফরুল হাসান বলেন, ৩ মার্চ জমি সংক্রান্ত বিরোধকে ঘিরে ওইদিন সন্ধ্যার দিকে তোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী-সন্তান মিলে আমার বাড়িতে হানা দেয়। ওই সময় আমি বাড়িতে অনুপস্থিত ছিলাম। তারা আমার স্ত্রী ও সন্তানের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। তাদের উপর্যুপরি আঘাতে আমার স্ত্রীর তিন মাসের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। পরে ৮ মার্চ আমার স্ত্রী বাদী হয়ে তোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করে। এতে তোফাজ্জলের স্ত্রী রুবি বেগম (৪০), ছেলে মো. সায়মন (২১), মেয়ে তানিয়া আক্তার (২৪) ও কানিজ ফাতেমাসহ (১৯) অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মূল আসামি তোফাজ্জলকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। অন্য আসামিরা জামিনে থাকায় মামলার তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। ফলে ন্যায় বিচার নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা ন্যায় বিচার চাই।

 

জাফরুল হাসানের স্ত্রী আফরোজা বেগম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় তোফাজ্জল হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন সব সময় আমাদের সঙ্গে অন্যায় ও অনৈতিক আচরণ করে আসছে। সামাজিক ও লোক-লজ্জার ভয়ে আমরা নীরবে সহ্য করে আসছিলাম। ঘটনার দিন তারা আমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে অতর্কিত আমাদের ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে এবং আমাকে ও আমার মেয়েকে শারীরিকভাবে মারধর করে। তোফাজ্জল হোসেন আমার সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। তাতে ব্যর্থ হয়ে তলপেটে লাথি মেরে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দিয়েছে। আমি তখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম।

 

রাঙামাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ২৮ মার্চ মামলার মূল আসামি তোফাজ্জল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে যায়। আসামির বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ থাকায়, জামিন না মঞ্জুর করে তোফাজ্জলকে গ্রেফতার করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন, অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাবরিনা আলী। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ- যা বিচারাধীন রয়েছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত