মানিকছড়িতে ‘সততা’ ফার্মের অসততার বর্জ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

Published: 24 Apr 2019   Wednesday   

মানিকছড়ি সদর রাজ বাজারের আধা কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর মাস্টার পাড়া ও পাঞ্চারাম পাড়ায় প্রায় ৬ একর ভূমিতে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত ‘সততা পোল্ট্রি ফার্ম’-এর বর্জ্যরে দূষণে শতাধিক পরিবারের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফার্মের দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে যত্রতত্র খোলা জায়গায় বয়লারের বর্জ্য, মরা মুরগী অবাধে ফেলায় সেখানকার পরিবেশ বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠেছে। সেখানে বসবাসরত শতাধিক পরিবার এবং ইউনিয়ন সড়কে চলাচলরত সকলেই মুখে মাক্স বা কাপড় ব্যবহার করে চলাচল করছেন প্রতিনিয়ত। বর্জ্যের গন্ধে ছোট শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা শ্বাস-প্রশ্বাসসহ নানা রোগে কষ্ট পাচ্ছে। স্থানীয়রা পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদ করলেও ফার্ম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের শেষ আকুতি আমাদেরকে বাঁচতে দিন, অন্যথায় প্রাণ বাঁচাতে ভিটামাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সততা ফার্মের চারপাশে খোলা জায়গায় ফার্মের বর্জ্য, মরা মুরগী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাসহ অস্বাস্থ্যকর পবিবেশ বিরাজমান। এসব বর্জ্যে মাছি ভনভন করেছে। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে আশেপাশের অন্তত ১৫-২০ জন লোক ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এভাবে পরিবেশ দূষণ হতে থাকলে শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে বসবাস করা কঠিন। হয়তো এখানে সততা ফার্ম থাক, না হয় আমরা জীবন রক্ষায় অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছি না।

 

এ সময় সজল কান্তি নাথ, বিষু কান্তি নাথ, আবু তাহের, নুর ইসলাম, রতন কান্তি নাথ, মো.মনির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রতিনিয়ত ফার্মের দুষিত বর্জ্যে পরিবেশ বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে । এছাড়াও ২/১ দিন পর পর রাতে ময়লার স্তুপ খুলে দিলে যে পরিমাণ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তাতে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে যেতে হয়।

 

সুনীল কান্তি নাথ বলেন, ফার্মের দূষিত গন্ধে আমার ঘরে বর্তমানে দু’জন রোগি মৃত্যুশয্যায়! এ ব্যাপারে আমি অনেকবার ম্যানেজারকে অবহিত করেও ব্যর্থ হয়েছি। মানিকছড়ি-বাটনাতলী ইউনিয়ন সড়কে চলাচলরত মোটর বাইক চালক সমিতির সভাপতি আবদুল মন্নান অভিযোগ করে বলেন, ফার্মের দূষিত গন্ধে ১ কিলোমিটার সড়কে  মোটর সাইকেলের যাত্রীরা মূখে কাপড় চেপে চলাচল করতে হয়।

 

সততা ফার্মের ম্যানেজার মো. মনির হোসেন স্থানীয়দের আনিত অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ফার্মের দুর্গন্ধ যাতে চারিদিকে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত বর্জ্যে চুন ছিটানো, ফ্যান ব্যবহার করে বাতাস দেয়াসহ সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়। তারপরও কিছুটা গন্ধ থাকছেই।

 

সততা ফার্মের সত্বাধিকারী আলহাজ্ব মো. ইকবাল হোসেন মুঠোফোনে এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশে (ঘনবসতি) বিদেশের ন্যায় শতভাগ পরিশুদ্ধ পরিবেশে পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালনা করা কঠিন। তবে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ফার্র্ম পরিচালনা করছি। বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োগ্যাস তৈরির কাজ চলছে। পরিবেশ রক্ষায় এতকিছু করার পরও যদি কোন ত্রুটি থাকে তাহলে অচিরেই প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন-এর সা: সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, পোল্ট্রি একটি শিল্প। এই শিল্পের বিকাশের প্রয়োজন যেমন জরুরী, মেনিভাবে এর দূষণ নিয়ন্ত্রণেও পরিবেশ আইন অনুযায়ী প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ ইকবাল জানান, তিনি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় কর্মরত। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মানিকছড়ি উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন। তাই বিষয়টি এখনো নজরে আসেনি। তিনি দাবি করেন, এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত