চবিতে শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

Published: 10 Sep 2019   Tuesday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সমতল ও পাহাড়ী ছাত্রদের নিয়ে শহীদ  ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরষ্কার  বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কৃতি চাকমার  সঞ্চালনায়  এবং  সংগ্রামী সভাপতি মিন্টু চাকমার সভাপতিত্বে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ সাইদুল ইসলাম। 

 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মংয়ই চিং মারমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ চাকমা, ত্রিপুরা ছাত্র ফোরাম, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নয়ন ত্রিপুরা প্রমুখ। 

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট `১৯ এর আহ্বায়ক ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রুমেন চাকমা।

 

টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় ইনক্রেডিবল(২০১৭-১৮ সেশন) ও ইভার গ্রীন(১৩-১৪ সেশন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।ইনক্রেডিবলের অধিনায়ক মংচাইসা মারমার একমাত্র গোলে ইভারগ্রীনকে পরাজিত করে ইনক্রেডিবল টানা দ্বিতীয় বারের মত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

 

খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও মেডেল এবং রানারআপ দলকে রানারআপ ট্রফি ও মেডেল তুলে দেন অতিথিরা।এছাড়া টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ইভারগ্রীনের খেলোয়াড় টমি ত্রিপুরা,সেরা গোলদাতা নির্বাচিত হন ইভারগ্রীন এর স্ট্রাইকার থোয়াইচিংনু মারমা, সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হন ইনক্রেডিবল এর গোলকিপার সুশোভন দেওয়ান এবং ম্যান অফ দ্যা ফাইনাল নির্বাচিত হন ইনক্রেডিবল এর খেলোয়াড় প্রেনচ্যুং ম্রো।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, জীবনকে সুন্দর ও মানসিক ভাবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। 

 

তাই পরস্পরের মধ্যে ভাতৃত্ব বোধ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং শারীরিক সুস্থটা  বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নিজেকে খেলাধুলার মধ্যে রাখতে হবে। তার সাথে আমাদেরকে উদার মন-মানসিকতার অধিকারী হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। খেলোয়াড় এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,  আপনাদের খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে। কারণ একজন শিক্ষিত মানুষ দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে পারে।

 

তিনি আরো বলেন,আজকের এই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে একমাত্র সচেতন ছাত্র ও যুব সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।তার পাশাপাশি ছাত্রসমাজকে দেশ ও জাতির জন্য ঐতিহাসিক ভুমিকা পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বক্তারা বলেন,  এই টুর্নামেন্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা, মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়া এবং শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা সম্পর্কে  জানা।

 

পাশাপাশি তার আত্মত্যাগকে অনুসরণ করে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র ও যুব সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সর্বদা প্রস্তুত থাকা।

 

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের শেকড়।সেই শেকড়ে আজ অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।সেই বিরাজমান অস্থিতিশীলতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্রসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত  প্রয়োজন। তাই সবাইকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাথে সামিল হয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান বক্তারা ।

 

উল্লেখ্য, শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কাপ্তাই সুইডিস পলিটেকনিক শাখার সক্রিয়কর্মী ছিলেন। ২০১২ সালের ২০ মে তারা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অংশগ্রহন শেষে কাপ্তাইয়ে ফেরার জন্য রাঙামাটির কল্যাণপুরস্থ পেট্রোল পাম্পে সহকর্মী ও বন্ধুদের অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ অপেক্ষামান বাসের পাশ ঘেষে আসা একটি চলমান সিএনজি গতি শ্লো করে কিছু সন্ত্রাসী সেখানে পরিকল্পিতভাবে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। সেই গ্রেনেড হামলায় তিনি সহ ৬ জন মারাত্মকভাবে আহত এবং আরো ৮/১০ জন আহত হন। ঘটনার পরপরই তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এবং ঘটনার তিনদিন পর তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেন।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছে। গেল  ২ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সমতল ও পাহাড়ী আদিবাসীদের সেশন ভিত্তিক ১১ টি দলের অংশগ্রহনে শহীদ ছাত্রনেতা মং চসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট `১৯ শুরু করা হয়।এবং আজ ফাইনাল খেলার মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্ট সমাপ্তি ঘটে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত