বান্দরবানে ৪ শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ: আটক ১

Published: 08 Apr 2015   Wednesday   

বুধবার দুপুর আড়াইটা। কোর্টের বারান্দায় খেলছিল চার অবুঝ শিশু। এদিকে-সেদিকে দৌড়াচ্ছে। আর দৌড়ে এসে মায়ের কোলে আশ্রয় নিচ্ছে। কোল থেকে মাথা তুলে আবার লাফালাফি করছে। তারা জানেনা তাদেরকে কোর্টে কি জন্য আসতে হয়েছে। তাদের এখানে কি কাজ করতে হবে। অথচ এ সময়ে তাদের থাকার কথা ছিল স্কুলের বারান্দায়। স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে খেলা করা কিংবা শিক্ষকের পাঠদান মনোযোগ সহকারে শোনা। এ চারজন সবাই থানছি বলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। 

 

সাড়ে তিনটার দিকে বান্দরবান সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ কাজী মিজানুর রহমানের আমলী আদালতে  এ ৪ শিশুর কাছ থেকে জবানবন্ধী নেয়া হয়েছে। এ সময় বাইরে অপেক্ষা করছিল শিশুদের অভিভাবকরা। তাদের চোখে মুখে ছিল উৎকন্ঠার ছাপ। সত্য ঘটনা আদালতের সামনে কিভাবে বর্ণনা করবে এ আশংকায়।

 

কোর্টের বারান্দায় খেলার সময় প্রথম শ্রেণির পড়–য়া স্কুল ছাত্রীটির কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়-সে কি জন্য এখানে এসেছে। লজ্জায় মুখ গুড়িয়ে মায়ের আচলে লুকিয়ে পড়ল। পরে শিশুটির মা পাশে বসিয়ে সেই দিনের ঘটনা জিজ্ঞেস করা হয়। ঘটনার দিনক্ষন তার জানা নেই। সে শুধু জানে ড্রাইভার আংকেল তাকে কি করেছে। সেইদিন-ড্রাইভার মো: জাফর (৪০), পিতা-আব্দুর রশিদ, থানছি বলিপাড়ার নতুন হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা তাকে চকোলেটের লোভ দেখিয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। এরপর আদর করে কোলে বসায়। মোবাইলে খারাপ ভিডিও ছবি দেখায়। তারপর এই ধরণের করার জন্য বলে। করলে আরো বেশি চকোলেট দিবে। শিশুটিকে দিকে অনৈতিক কাজ করায় পাষন্ড লোকটি।

 

এমন ঘটনা যে শিশুটির সঙ্গে হয়েছে তার মা জানতে পারে যখন শিশুটি প্রসাব করার সময় কান্নাকাটি করছিল। শিশুটির মা বলেন, প্রতিবার প্রসাব করার সময় তার মেয়েটি কান্না করছিল। রাগের মাথায় মেয়েটির গালে চড় তাপ্পড়ও মারেন। পরে মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা।

 

ঘটনা জানাজানি হলে থানছি বলিপাড়া বাজার এলাকায় হৈ-চৈ পড়ে যায়। শিশুটি তার মাকে জানায়-তার সঙ্গে যে ধরণের আচরণ করা হয়েছে, অন্য তিনজনের সঙ্গেও একই ধরণের আচরণ করেছে পাষন্ড ড্রাইভারটি। তিনজনের মধ্যে একজন তৃতীয়, একজন দ্বিতীয় ও অন্যজন এখনো শিশু শ্রেণিতে পড়ছে।

 

ঘটনার শিকার তৃতীয় শ্রেণির পড়–য়া শিশুর মা বলেন, লম্পট ড্রাইভার জাফর তার শিশুকে দিয়ে খারাপ করেছে। অন্য শিশুদের সঙ্গেও একই ধরনের আচরণ করেছে সে।

 

এমন ধরণের জঘন্য অনৈতিক ঘটনা শিশুদের সঙ্গে কখন হয়েছে সঠিকভাবে অভিভাবকরা জানাতে পারেননি। যখন মা তার মেয়েকে জিজ্ঞেস করে তখন তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। এ ব্যাপারে শিশুটির মা  গত ৩১ মার্চ থানছি থানায় এজাহার করেছেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ৩১ মার্চ তার মেয়ের কাছ থেকে শুনে বিষয়টি জানতে পারেন। একই তারিখে অন্য এক শিশুর সঙ্গেও ৩১ মার্চ অন্য আরো দুই শিশুর সঙ্গে দুইদিনে মোট চার শিশুর সঙ্গে জঘন্যতম অনৈতিক কাজ করেছে ড্রাইভার মো: জাফর।  মামলা বিলম্ব হওয়ার বিষয়ে এজাহারে লেখা হয়েছে বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হয়। এজন্য থানায় মামলা দায়ের করতে দেরী হয়েছে। এ ঘটনায় আসামী মো: জাফরকে আটক করেছে পুলিশ।

 

অভিভাবকরা অভিযোগ করেন এ ঘটনায় থানছি উপজেলার বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাশৈসিং মার্মা মিমাংসার চেষ্টা করেন। জরিমানা হিসেবে দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। পরে থানছি থানা ওসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে থানায় এজাহার করা হয়।

 

মিমাংসার চেষ্টা করার বিষয়ে বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাশৈসিং মার্মা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন বিষয়টি জানতে উভয়পক্ষকে অফিসে ডেকে আনা হয়েছে। মিমাংসার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ডেকে আনা হয়নি।

 

থানছি থানা ওসি ওমর আলী বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের অফিস থেকে আসামীকে আটক করা হয়েছে। আটক করার পর ভিকটিমের অভিভাবক থানায় এজাহার করা হয়।

 

বাদী পক্ষের আইনজীবী বাসিংথোয়াই মার্মা বলেন, বুধবার বান্দরবান সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ কাজী মিজানুর রহমানের আমলী আদালতে ভিকটিমদের কাছ থেকে জবানবন্দী নিয়েছেন।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত