২৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও রাষ্ট্র কল্পনার অপহরণের চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে উদাসীন

Published: 13 Jun 2021   Sunday   

কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৫ বছর উপলক্ষে রাঙামাটিতে আলোচনা সভাশনিবার কল্পনা চাকমার ২৫ তম অপহরণ দিবস উপলক্ষে রাঙামাটিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

 

অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও যথাযথ বিচার নিশ্চিত কর দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কার্যালয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির যৌথ উদ্যেগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কল্পনা অপহরণ মামলার আইনজীবী এডভোকেট জুুয়েল দেওয়ান। পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিতা চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, পিসিজেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য আশিকা চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমন মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা নানটু।

 

স্বাগত বক্তব্যে দেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানু মারমা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা। আলোচনার শুরুতে কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৫ বছর উপলে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দেওয়া যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সোনারিতা চাকমা।


পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমন মারমা বলেন, ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয় কেতন চাকমা তথা জুম্ম জনগণ মহান জাতীয় সংসদে যেন প্রতিনিধিত্ব করতে না পারে, সেজন্য কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছিল। কল্পনাকে অপহরণ করে জুম্ম নারী সমাজের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাই আজকে ২৫ বছর পরও কেন কল্পনা চাকমার খোঁজ মেলেনি, কেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে আলোকপাত করতে হবে।


পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা নান্টু বলেন, রাষ্ট্র তার ভ‚খন্ডে বিচারহীনতার সংস্কৃতি জারি রেখেছে। সে অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর হতে আজ পর্যন্ত জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই জিইয়ে রাখা পিসিজেএসএস ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তথা তাদের সমর্থকদের ওপর অঘোষিত দমন-পীড়ন জারি রেখেছে। শুধু কল্পনা চাকমা নয়, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের উপর সংগঠিত গনহত্যা, খুন, ধর্ষণ, সা¤প্রদায়িক হামলার প্রত্যেকটি ঘটনা বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র যুব সমাজকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।


পিসিজেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য আশিকা চাকমা বলেন, আজকে জুম্ম জনগণ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। শাসকগোষ্ঠী আমাদের উপর তথা যারা অধিকারের পে কথা বলছে তাদের উপর কেন এত নিপীড়ন, কেন এত নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে তা আমাদের জুম্ম নারী সমাজকে বুঝতে হবে। আমরা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিতে যখন আন্দোলন করছি, আমাদের অধিকারের সপে কথা বলছি, তখনই সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবর্তে উল্টো চুক্তি বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কর্তৃক ঘোষিত অধিকতর আন্দোলনে জুম্ম তরুন সমাজকে এগিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

নারী অধিকার কর্মী এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, আজ কল্পনা চাকমার অপহরণের ২৫ বছর পূর্ণ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে ৩৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে এবং তারা সর্বশেষ চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে যে, এখানে কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু, আমরা তাদের সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করিনি ও করতে দিইনি এবং সেটা গ্রহণযোগ্য না। কল্পনা চাকমাকে যে গুম করা হয়েছে, তাকে অপহরণ করা হয়েছে, একটা তরুণ তাজা প্রান যে হারিয়ে গেছে, সেটা তো সত্য এবং বাস্তব। তার অপহরণের চাক্ষুস সাক্ষী রয়েছে। রাষ্ট্র কিন্তু এটা মিথ্যে বলতে পারেনি এবং তারা এও বলতে পারেনা যে কিছুই হয়নি। কিছু একটা তো হয়েছে। সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করার দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্রের। কিন্তু তারা সেটি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আমাদের কল্পনার অপহরণের বিচার আমাদের পেতেই হবে। সেজন্য আমাদের আরো সোচ্চার হতে হবে।


প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার আইনজীবী এডভোকেট জুয়েল দেওয়ান বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সকল আইনেরই উর্ধ্বে। সে সংবিধানে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের জনগণই সকল মতার উৎস এবং তারা রাষ্ট্রের মালিক। সকল প্রকার অপরাধের বিচার পাওয়াটা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অধিকার। কিন্তু, আজ ২৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও রাষ্ট্র কল্পনার অপহরণের চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে উদাসীন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে কল্পনা অপহরণের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে না এবং বিচার হবে না।


উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২জুন রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা লাইল্যা ঘোনা বাড়ী থেকে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কল্পনা চাকমাকে অপহরন করে। এ অপহরণ ঘটনার মামলার ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে রাঙামাটির পুলিশ সুপার তদন্তের চুড়ান্ত রিপোর্ট রাঙামাটি আদালতে পেশ করেছেন। তবে কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা এ মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে না রাজির আবেদন জানিয়ে মামলার অধিকতর তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/এ.ই

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত