সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ডে নিহত দুই ফায়ার ফাইটারকে চোখের জলে শেষ বিদায়

Published: 06 Jun 2022   Monday   

সোমবার স্বজনসহ রাঙামাটিবাসী চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন  চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত রাঙামাটির দুই ফায়ার ফাইটার নিপন চাকমা ও মিঠু দেওয়ানকে। এছাড়া দুই ফায়ার ফাইটারকে  রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের প থেকে `গার্ড অব অনারও প্রদান করা হয়েছে।


সোমবার সকালের দিকে চট্টগ্রাম থেকে দুই ফায়ার ফাইটার মিঠু দেওয়ান (৫২) ও নিপন চাকমার (৪৭) মরদেহ রাঙমাটিতে আনা হয়। এরপ তাদের মরদেহ রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের `গার্ড অব অনার` প্রদান করা হয়।  এসময় জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ও  রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে  দুই  ফায়ার ফাইটারকে ফুল দিয়ে শেষ  শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে শেষ কৃত্যের সম্পাদনের জন্য দুই পরিবারের হাতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা ও ফায়ার সার্ভিস থেকে বিশ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। পরে দুইজনের মরদেহ রাঙামাটি আনার পর প্রথমেই তাদের স্ব স্ব বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর  মধ্যে মিঠু দেওয়ানের মরদেহ শহরের ট্রাইবাল আদাম এলাকায় এবং নিপন চাকমা মরদেহ কলেজ গেইট মন্ত্রী পাড়ার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহ বাসায় পৌঁছুলে এসময় পরিবারের কান্নায় পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। নিপন চাকমা স্ত্রী, দুই মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা সহকর্মী ও প্রতিবেশীরা নীরবে চোখের জলে এই ফায়ার ফাইটারদের শেষ বিদায় জানায়। এসময় নিপনের বাবা চিত্ত রঞ্জন চাকমা(৭০) ছেলের কফিনের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে  দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে কান্না করেন আর দু’চোখে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার।  


 দুপুরের দিকে  ব্রাহ্মণটিলা শ্মশানে মিঠু দেওয়ানের ও আসামবস্তি শ্মশানে নিপন চাকমার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।  নিহত দুই ফায়ার ফাইটার এর আগে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর কর্মরত ছিলেন। পরে নিপন চাকমা বদলি হয়ে ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুন্ড শাখায় এবং মিঠু দেওয়ান কুমিরা শাখা চলে যান।  


জানা যায়, নিহত নিপনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হেমি চাকমা ঢাকার বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে এবং ছোট মেয়ে উন্নতি চাকমা রাঙামাটিতে লেকার্স এন্ড পালিক স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। নিপনের সহধর্মীনী সুমনা দেওয়ান বেকসরকারী একটি বিদালয়ে শিক্ষকতা করছেন। অপর নিহত মিঠু দেওয়ানের এক  পড়ুয়া মেয়ে রয়েছে। তার স্ত্রী সমাপ্তি দেওয়ান একজন গৃহিনী।


নিহত নিপন চাকমার স্ত্রী সুমনা দেওয়ান বলেন, আমি প্রতিদিন দেরি করে ঘুমাই। কিন্তু সেই তাড়াতাড়ি করে ঘুমিয়েছিলাম। সকালে উঠে বিহারে পূর্ণ করতে যাই। এরপর বিহারে থাকাকালীন শুনি সীতাকুন্ডে নাকি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কিন্তু আমি তখন কাউকেই কিছু জানাতে পারিনি। বাসায় আসলে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের জরুরি বিভাগ থেকে জানায়, আমার স্বামীর চিকিৎসা চলছে। পরে আমার দেবর সেখানে তার ব্যবহার্য লুঙ্গি ও পায়ের আঙুল দেখে দেহ নিশ্চিত করে। এরপর আবার ডিএনএ টেস্ট করে নিশ্চিত করা হয়।


তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল তার দুই মেয়েকে উচ্চশিায় শিতি করে সরকারি চাকরি ধরিয়ে দেবেন৷ এখন আমার দুই মেয়ের কি হবে? আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।


নিপনের ভাই খোকন চাকমা বলেন, খবর শুনেই সীতাকুন্ডে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পরে ভাইয়ের পায়ের আঙুল দেখে লাশ শনাক্ত করি।


মিঠু দেওয়ানের ভাই টিটু দেওয়ান বলেন, তার ভাই ১২ দিন ছুটি ভোগ করে শনিবার দুপুরে শহরের ট্রাইবাল আদাম এলাকার বাসা থেকে কুমিরায় কর্মস্থলে যোগ দেয়। সেদিন রাতেই সীতাকুন্ডে আগুন নিভাতে গিয়ে কন্টেইনার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারি পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের ঘটনা বেদনাদায়ক, এই পেশাটাই এমন চ্যালেঞ্জের। সর্বদাই আমাদের ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। কন্টেইনারে দাহ্য পদার্থ ছিল এটা জানা থাকলে হয়তো এতো প্রাণহানি হতো না।


রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সীতাকুন্ডে অগ্নিদুঘর্টনায় নিহত দুই ফায়ার ফাইটারের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা করে দুই পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত