শুকনা কলা গাছের পাতা দিয়ে পাহাড়ে প্রথমবারের মতো মাশরুম চাষে সফলতা মিলছে। এতে কম খরচে চাষীরা পাহাড়ের আনাচে-কানাচে থাকা কলা গাছের শুকনা পাতা দিয়ে মাশরুম উৎপাদনে ফলে এ চাষ নিয়ে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে এ চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। আর এ সফলতার মূল উদ্যোক্তা হচ্ছে রাঙামাটির বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উইমেন্স এডুকেশন ফর এডভান্সমেন্ট এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট(উইভ)। যা আরএসএফ সোসিয়েলের সহযোগিতায় ইমপ্রুফ ম্যানেশ্চুয়াল হাইজিন প্র্যাক্টিস এন্ড ইকোনোমি এমপাওয়ারমেন্ট মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
জানা গেছে, সাধারনত ধানের খড় ও তুষ দিয়ে পুষ্টিকর খাদ্য মাশরুম চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু পাহাড়ে খড় ও তুষ সব স্থানে সহজেই মিলে না। কিন্তু পাহাড়ের আনাচে কানাচে রয়েছে অসংখ্য কলা গাছ। কলা গছের শুকনা পাতা সহজেই পাওয়া যায়। এতে সম্পূর্ন বিনা খরচে এই শুকনা কলা গাছের পাতা দিয়ে অল্প খরচে মাশরুম চাষ করা যায়। এসব কথা চিন্তা করে রাঙামাটিতে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উইমেন্স এডুকেশন ফর এডভান্সমেন্ট এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট(উইভ) এর উদ্যোগে আরএসএফ সোসিয়েলের সহযোগিতায় ইমপ্রুফ ম্যানেশ্চুয়াল হাইজিন প্র্যাক্টিস এন্ড ইকোনোমি এমপাওয়ারমেন্ট প্রকল্পের এক বছর মেয়াদী একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্প এলাকা হিসেবে কাউখালী সদরের কচুখালী ও রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি যৌথ খামার এলাকায় চাষীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শুকনা কলা পাতা দিয়ে মাশরুম চাষ পরীক্ষামুলকভাবে চাষ করা হয়। এতে এ মাশরুম চাষে বেশ সফলতাও এসেছে। ইতোমধ্যে চাষীরা এই শুকনা কলা পাতা দিয়ে উৎপাদিত মাশরুম বাজারেও বিক্রি করে আয়ও করেছেন। এতে অল্প খরচে এ মাশরুম উৎপাদনে এ চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। তাছাড়া শুকনা কলা পাতা দিয়ে চাষের এ মাশরুম বাজারে ক্রেতাদেরও বেশ আগ্রহ রয়েছে।
কাউখালী উপজেলার কচুখালী এলাকার মাশরুম চাষী ম্যমাচিং মারমা জানান, উইভ এর মাধ্যমে মাশরুম চাষে প্রশিক্ষন নিয়ে শুকনা কলা পাতায় মাশরুম চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে দুই থেকে তিন কেজি মাশরুম বিক্রি করেছেন। বাজারে ক্রেতাদের বেশ চাহিদা রয়েছে। কারণ সবাইয়ের আগ্রহ খড়ের উৎপাদিত মাশরুম খাওয়া হলেও শুকনা কলাপাতায় উৎপাদিত মাশরুম স্বাদ অন্যরকম। অনেক ক্রেতা অগ্রিম অর্ডার দিয়েও সরবরাহ দিতে পারিনি।
সাপছড়ি যৌথ খামার এলাকার চাষী আলোরানী চাকমা জানান, প্রশিক্ষন নেওয়ার পর কলা পাতায় এ চাষ করেছি। এখন মাশরুম এসেছে। ইতেমধ্যে উৎপাদিত এ মাশরুম বাড়ীতে খেয়েছি স্বাদটাও বেশ ভালো। ভবিষ্যতে এ চাষ করে আরো লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার।
প্রকল্পের সমন্বক পূর্নচন্দ্র চাকমা জানান, ধানের খড়ের পরিবর্তে শুকনা কলা পাতায় চাষ পার্বত্য চট্টগ্রামে এই প্রথম। মুলত দুই প্রকারের শুকনা কলাপাতা দিয়ে মাশরুম চাষ করা হয়। একটি হল পলিথিন ব্যাগের মাধ্যমে মাশরুমের বীজ ও জীবানুমুক্ত করতে সিদ্ধ করা শুকনা কলাপাতা দিয়ে অপরটি হল বেসন ও মাশরুম বীজ সিদ্ধ করা শুকনা কলাপাতায় মুড়িয়ে বেধে রাখতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে এক মাস পর মাশরুম আসতে শুরু করবে।
উইমেন্স এডুকেশন ফর এডভান্সমেন্ট এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট(উইভ) এর নির্বাহী পরিচালক, নাইউ প্রু মারমা মেরী বলেন, শুকনা কলা পাতার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরাই প্রথম চাষ করে সফল হয়েছি। কৃষকরা এ চাষে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমরা আশা করি অল্প খরচে স্থাণীয় সম্পদ ব্যবহার করে বিশেষ করে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙামাটির উপপরিচালক মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ইদানিং মাশরুম চাষে ধানের খড়ের পরিবর্তে রাঙামাটিতেশুকনা কলা পাতা ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে খড় সহজেই পাওয়া যায় না সেহেতু শুকনা কলা পাতা ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ পাহাড়ে প্রচুর কলা গাছ পাওয়া যায় বলে এ চাষ অত্যন্ত সহজলভ্য। যতটুক জেনেছি কাউখালী ও রাঙামাটি সদরের যৌথ খামার এলাকায় মাশরুম চাষে খড়রে পরিবর্তে শুকনা কলা পাতা দিয়ে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কলা পাতায় উৎপাদিত মাশরুম খড়ে উৎপাদিত মাশরুমের চেয়ে স্বাদ আলাদা কিনা তা সরাসরি পর্যবেক্ষন না করলে সঠিকটা বলা সম্ভব না।
--হিলবিডি/সম্পাদনা/সিআর.