রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর অর্থবছর শেষ হওয়ার এক মাসের অধিক সময় পার হলেও অসমাপ্ত রয়েছে প্রকল্পের কাজ। এছাড়া শুধু নীলাদ্রির রিসোর্টে ১৭ লক্ষ টাকার প্রকল্পসহ উপজেলা পরিষদকে ঘিরে বিভিন্ন প্রকল্পসহ মোট ২৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার একাধিক প্রকল্প দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলায় এডিপি এর মোট ১ কোটি ১৭ লক্ষ ৮ হাজার টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শুধু নীলাদ্রি রিসোর্ট এর জন্য ১৭ লক্ষসহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পসহ মোট ২৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো স্মার্ট ট্যুরিজমের লক্ষ্যে নীলাদ্রি রিসোর্টের জন্য অনলাইন বুকিং সিস্টেম উন্নয়ন, আত্নকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নীলাদ্রি লেকের উন্নয়ন ও কায়াকিং এর জন্য কায়াক সরবরাহ, নীলাদ্রি লেকে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি নির্মাণ, নীলাদ্রি রিসোর্ট ও শিশু পার্কের দুই পাশে গেইট সংস্কার ও বটতলী-পরিহলা এবং পুকুরপাড়া কটেজ সংস্কার, আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নীলাদ্রি লেকে ফিসিং এর উদ্দেশ্যে মাচাং নির্মাণ, নীলাদ্রি রিসোর্টে কটেজের ভেতরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকরণ, নীলাদ্রি রিসোর্টে চারদিকে জিআই তারের ঘেরা বেড়া নির্মাণ, ট্যুরিস্ট বোট সার্ভিস চালুকরণ এবং বাকী প্রকল্পগুলোও উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে তাই এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে, উপজেলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কেন বিনোদন কেন্দ্রের মত জায়গায় এতগুলো টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। দূর্গম উপজেলার আর কোথাও কি উন্নয়ন করার জায়গা ছিল না? তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে প্রতি অর্থবছরে নীলাদ্রিতে প্রকল্প দেওয়া হয় এবং উপজেলার উন্নয়নের টাকা দিয়ে নির্মিত রিসোর্ট এর আয়কৃত অর্থ কোথায়, কোন কাজে ব্যায় করা হয় তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে?
এছাড়াও উক্ত প্রকল্পগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু প্রকল্প সঠিকভাবে কাজ করা হয় নাই। এবং কিছু প্রকল্পের কাজ এখনো সমাপ্ততো হয়নি তারমধ্যে অনেক প্রকল্প এখনো কাজও ধরা হয়নি। পরিদর্শনে আরও দেখা যায়, কায়াকিং এর জন্য যে দুটি নৌকা ক্রয় করা হয় তার মধ্যে একটি নৌকা উদ্বোধনের আগে পরিত্যক্ত অবস্থায় পানিতে ডুবে রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের হাতের তৈরির প্রদর্শনী কেন্দ্র সংস্কার এর যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে সেই ঘরটি নির্মাণের পর থেকে কিছুদিন দোকান দেয়া হলেও পরে বন্ধ অবস্থায় পরে ছিল। তাছাড়া উপজেলা ক্যাফের সংস্কার ও চারিদিকে সৌন্দর্যবর্ধন ঘেরা নির্মাণ এর জন্য যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে সেটিও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এবং এডিপি’র উপজেলাব্যাপী হাতে নেওয়া কিছু কিছু প্রকল্পও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রকল্প গ্রহণের সময় জামশেদ আলম রানা ইউএনও ও প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে এই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে। এবং একই অর্থবছরে পরে রাজস্থলীর ইউএনও সজীব কান্তি রুদ্র অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন এবং এর পর তানভীর হোসেন দুই মাসের অধিক ইউএনও হিসেবে থাকার পর বর্তমানে মুহাম্মদ মামুনুল হক বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব চলাকালে প্রকল্পের অর্থবছর সমাপ্ত হয়েছে।
বিলাইছড়ি উপজেলা বিএনপি,র সভাপতি আব্দুস সালাম ফকির এর সাথে বিষয়টা নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জানামতে উপজেলায় এডিপি’র এর জন্য বরাদ্দকৃত টাকা জনসংখ্যা অনুপাতে ইউনিয়ন ভিত্তিক সমানভাগে প্রকল্প দেওয়ার কথা। তবে নীলাদ্রিতে যে এত টাকার প্রকল্প দেয়া হলো, তা কোন খাতে দেখিয়েছে অফিস থেকে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, তারা রিসোর্ট এর উন্নয়নের জন্য যদি আলাদাভাবে অনুমোদন নিয়ে এসে থাকে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু অনুমোদন না থাকলে একি প্রতিষ্ঠানে এতগুলো প্রকল্প দেয়া ঠিক হয় নাই।
এই বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কিছু কিছু প্রকল্প এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। জুন ক্লোজিং এর কারণে টাকা যেহেতু ফেরত দেওয়া যাবে না, তাই টাকা বিটি করে তুলে রেখে দেওয়া হয়েছে। কাজ সমাপ্ত হলে ছবি এবং ইনেস্পেকশনের পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে টাকা দেওয়া হবে। তিনি জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান মামলা করার কারণে স্থগিত থাকায় তিন মাস কাজ করা যায়নি। তাই এডিপি’র কাজ যথাসময়ে শেষ করা যায়নি। একি জায়গায় একাধিক প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রকল্পগুলো ইউএনও এবং চেয়ারম্যানরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয়। ইউএনও জামশেদ আলম রানা এর দায়িত্বকালীন সময়ে তার সিদ্ধান্তে এই প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া এই বারে উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকায় প্রকল্প গ্রহণে ইউএনও কে একাই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এবং তিনি অন্য অর্থবছরের তুলনাই এই অর্থবছরে নীলাদ্রিতে বেশি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এবং ১০ শতাংশ কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসক মুহাম্মদ মামুনুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার যোগদানের পূর্বে প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন সমস্যা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.