ভিপি সাদিক খাগড়াছড়িতে বেড়ে উঠা এক আলোকিত তরুন

Published: 11 Sep 2025   Thursday   

সাদিক কায়েম, ঢাবি’র নব-নির্বাচিত ভিপি। তাঁর বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলাশহর এবং বাজারের মধ্যিখানের নয়নপুর এলাকায়। তাঁর বাবা আবুল কাশেম (৬৫) আশির দশক থেকেই খাগড়াছড়ি শহরের কাপড় ব্যবসায়ী। সাদিক’র জন্মস্থান চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার চিটওয়া পাড়ায়। ওখানে তাঁর হাতেখড়ি ঘটলেও ক্লাস থ্রি থেকেই খাগড়াছড়ি শহরের বায়তুশ শরফ দাখিল মাদ্রাসা থেকেই কৃতিত্বের সাথে দাখিল শেষ করেন।
শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, সাদিক কায়েম দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে বরাবরই লেখাপড়ায় ভীষণ মনোযোগী। তাঁর প্রাইমারি স্কুল থেকে দাখিল পর্যন্ত মাদ্রাসার শিক্ষা জীবনে অত্যন্ত মেধাবি, ধীর-স্থির এবং বিনয়ী হিসেবেই আলোকিত। শুধু নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, স্কুল জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় সাদিক কখনো জেলা, কখনো বিভাগ এবং কখনো পুরো শিক্ষা বোর্ড জুড়েই অনণ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০১৪ সালে খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা’র অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান গনি জানান, আমার শিক্ষকতা জীবনে সাদিক কায়েম এবং এস এম ফরহাদের মতো মেধাবী শিক্ষার্থী পাইনি। আমার প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষক থেকে কর্মচারিরা সাদিকে অমায়িক ও মার্জিত আচরণের কথা মনে রেখেছে। ক্লাসে কিংবা কোন প্রতিযোগিতায় কখানো মাথা তুলে শিক্ষকদের সামনে কথা বলতো না সাদিক কায়েম। আজ তাঁর এই দেশজোড়া খ্যাতি আর সাফল্যে পাহাড়-সমতল যেনো খুশিতে উদ্ভাসিত। আমরা আমাদের প্রিয়ত এই ছাত্রের ভবিষ্যত উজ্জল্যের জন্য আজ মাদ্রাসা মসজিদে দোয়া মাহফিল করেছি।
খাগড়াছড়ি শহরের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং সাদিক কায়েমের পিতৃআত্মীয় হাজী লেয়াকত আলী চৌধুরী জানান, ও যে ভবিষ্যতে বড়ো কিছু একটা হবে; এটা তার ছোটকালেই আমরা লক্ষ্য করেছি। সমাজের আর দশটা ছেলেমেয়ে থেকে ওকে একেবারেই আলাদা করে চেনা যেতো। মাথা তুলে বড়োজনদের সালাম দেয়া ছাড়া তার মুখও ঠিকমতো দেখা হয়ে উঠতো না।
সাদিক’র পিতা আবুল কাশেম’র র্দীঘদিনের ঘনিষ্ট ব্যসায়ী ফরিদুল আলম জানান, সাদিক কায়েমের বাবা আশির দশকেই এসএসসি পাশ করা মানুষ। তিনি জীবনে ব্যবসার চেয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতিই বিশেষ মনোযোগী ছিলেন। বৈষয়িক বিষয়ে তিনি ভাবতেন কম। এবং মহান সৃষ্টিকর্তা ওনাকে আজ সফল পিতায় সম্মানিত করেছে।
বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার দুইজন কৃতি শিক্ষক ছগির আহম্মদ এবং দেলোয়ার হোসেন। তাঁরা দুইজন আরবি এবং বাংলা পড়াতেন। তাঁরা সাদিক কায়েমকে তার বিশেষ গুণাবলীর জন্য বিশেষ দৃষ্টিতে দেখতেন।
এই দুই শিক্ষক জানান, ইংরেজি এবং আরবিতে উপস্থিত বক্তৃতা থেকে বিতর্ক, সবখানে সাদিকের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এসএসসিতে ক্লাস পিএসসি, জেএসসি এবং দাখিল (মাধ্যমিক); সবখানে অল থ্রো কৃতি শিক্ষার্থী। শিক্ষা জীবনে কোনদিন কোন শিক্ষকের প্রতি বেয়াদবি করেননি।
তাঁরা জানান, দ্বীনের স্বার্থে, উন্নত-নৈতিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই ‘বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা’র অভিযাত্রা। সেই পথে ঢাবি’র এবারকার ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ভিপি-জিএস দুটি পদেই আমাদের ছাত্ররা মুখ উজ্জল করেছে।
সাদিক’র বাবা আবুল কাশেম পরম করুণাময়ের কাছে শোকরিয়া জানান। তিনি ঢাবি’র শিক্ষার্থী ভোটারদের মূূল্যবান রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসা জ্ঞাপন করেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সাদিক এবং তার টিমের সবাই যেনো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং জাতির কঠিন সময়ে যথাযথভাবে দেশ-জাতির সেবা করতে পারেন।
তিনি যাঁরা হেরে গেছেন, তাঁদের প্রতিও শুভেচ্ছা জানান। আবুল কাশেম দেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, এবারের ডাকসু নির্বাচনের মতো সুষ্ঠু ভোট তিনি জীবনেও দেখেননি বলে জানান।
সাদিকের জীবনের একটা দু:সহ স্মৃতি’র কথা মনে করে বলেন, আলিম পরীক্ষার সময় ইংরেজি বিষয়ের দিন তার গুরুতর অসুখ দেখা দেয়। পেটের ব্যথায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সে সময়টাতে তিনি কাছে থাকতে পারেননি। সে সময়ের কথা মনে পড়লে তিনি ভীষণ বেদনা বোধ করেন।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি খাগড়াছড়ি জেলা এবং আশপাশের এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মত কারিকুলামের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অনেক মেধাবী প্রজন্মের সূতিকাগার হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চবিসহ দেশের সুখ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠানে কয়েক’শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত