পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) এক জাতি, এক ধর্ম কায়েম করতে চাই শাসক গোষ্ঠী অভিযোগ করে বলেছেন,দেশে ৫৪ ভাষাভাষিসহ বিভিন্ন ধর্মের লোকের বসবাস রয়েছে। যে জাতি গোষ্ঠীর নিজেদের ভাষায় কথা বলতে, আত্বনিয়ন্ত্র অধিকার আদায়ে লড়াই সংগ্রাম করেছিল তারাই এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ পরিস্থিতি ভালো নেই বলে বান্দরবানের কয়েক’শ পাহাড়ি পরিবার মায়ানমারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। পার্বত্য জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন চাই। নিরাপদ জীবন চাই। কারোর পরাধীনতার কাছে বেঁচে থাকতে চাই না।
বুধবার বান্দরবানের বোমাং রাজার মাঠে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) ২৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যোতিস্মান চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: মোহিউদ্দিন মাহিন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মারুফ তন্ময় বিল্যা, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং, বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির জেলা আহ্বায়ক জোয়াম লিয়ান আমলাই, জেএসএস ও পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ প্রমুখ। বৃহস্পতিবার শহরের নিকটবর্তী ফারুক পাড়ায় পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ২০ তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সমাবেশ শেষে এটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি রাজার মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে আবারও রাজার মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সঅনুষ্ঠানে যোগদান করতে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও জেএসএস সমর্থিত লোকেরা সকাল থেকে রাজার মাঠে এসে জড়ো হন। এদিকে সংঘাত এড়াতে শহরের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বান্দরবানে সন্তু লারমা আগমন ঠেকাতে সোমবার ও মঙ্গলবার জাগো পার্বত্যবাসী নেতাকর্মীরা সমাবেশ, মিছিল ও কালো পতাকা উত্তোলন করে।
প্রসঙ্গগত গত ১১ মার্চ বান্দরবানে সন্তু লারমার আগমন ঠেকাতে পাহাড়ি-বাঙ্গাী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও জনসংহতি সমিতির নেতা কেএসমং বলেন,যারা গোপন সভা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে গড়ে তোলার জন্য এই রকম জঘন্যতম কাজে লিপ্ত রয়েছে তিনি তাদের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারন করে তিনি বলেন,ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত না হলে জনগন দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন শাসক গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোটের ফলাফলকে তাদের অনুকুলে নিয়ে নির্বাচিত করেছে। একথায় শাসকগোষ্ঠী যেমন জানে তেমনি বান্দরবানের আপামর জনগনও জানে। তিনি আওয়ামীলীগের এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন বেশি লাফালাফি করবেন না,বেশি লাফালাফি করলে যে খান থেকে থলে কান্দে করে এসেছিলেন জনগন আবার সেখানে পাঠিয়ে দেবে। তিনি পাহাড়ী জনগনকে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে জম্মু জনগনের অধিকার আদায়ের আহবান জানান।
সন্তু লারমা তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন ১৯০০ সালের শাসন বিধি দিয়ে তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকেরা পার্বত্য জনগণের বিরুদ্ধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ১৮৬০ সাল থেকে শাসন, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ। এখনও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। সামরিক শাসক গোষ্ঠী দ্বারা শাসনের নীল নকশা পাকিস্তানের আমল থেকে যেভাবে হয়ে আসছে তার উত্তরাধিকারীরাও একই কায়দায় শাসন চালিয়ে আসছে। এর থেকে উত্তোরন হতে পারছে না পার্বত্য জুম্ম জনগণ। তিনি এর থেকে মুক্তি পেতে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সন্তু লারমা বলেন, সরকার তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জম্মু জনগনের ভূমি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ভুমিহীন করে তুলছে। খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে জুম্ম জনগনকে তাদের ভুমি থেকে উচ্চেদ করা হচ্ছে। বান্দরবানের লামা,নাইক্ষংছড়ি ও আলীকদমের জুম্ম জনগনের জমি প্রভাবশালীরা রাবার বাগান,ফলজ বাগান ইত্যাদির নাম দিয়ে দখল করে আমাদের জুম্ম জনগনকে সেখানথেকে উচ্ছেদ করার পায়তারা করা হচ্ছে। তা কোনভাবেই মেনে নেয় যায় না।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.