লামায় মানব পাচারের মূল ঘাঁটি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন!

Published: 13 Jun 2015   Saturday   

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা এলাকা থেকে সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাচারের শিকার হয়েছে ৫৩ জন গ্রামবাসী  অভিযোগ উঠেছে । স্থানীয় দালাল ও মানব পাচারকারী চক্রের হোতা বজল আহমদ ও তার সহযোগীরা ৪ মাস আগে এ সব গ্রামবাসীর কাছ থেকে ১লাখ ৮০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে এ ৫৩ জন গ্রামবাসিকে পাচার করে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এসব পরিবারের স্বজনদের কান্নায় ফাঁসিয়াখালীর আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে।

গ্রামবাসীরা বর্তমানে মালয়েশিয়ায় এসব পাচারের শিকার ব্যক্তিরা  কারাগারে রয়েছে বলে দাবি করে এ দালাল চক্র আরও ২লাখ টাকা করে আদায় করে তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে। এমনকি পাচার হওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জনের স্বজনদের কাছ থেকে গড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে সেখানে নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবার শর্তে। কিন্তু এসব অভিবাসীর ভাগ্যে বাস্তবে কী ঘটেছে বা ঘটছে তার কোন সঠিক তথ্যও মিলছে না। স্বজনরা দালালদের টাকা দিয়েও তাদের আপন জনদের খোঁজ না পাওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরছেন ।

অভিযোগ উঠেছে, লামার ইয়াংছা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের বড় পুত্র নবী হোসেন তার ছোট ভাই বেলাল হোসেনকে বজল দালাল নানা প্রভোলন দেখিয়ে এবং অর্থ উপার্জন নিশ্চিতের কথা দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। বেলালের অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্যও জানার সুযোগ হয়নি গত ৪ মাসেও। লামা থানায় এ বিষয়ে মানবপাচারকারী চক্রের হোতা বজল আহমদ সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরপর খানিকটা পুলিশি তৎপরতা বেড়ে গেলেও আসামীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা মানব পাচারকারীদের ধরার কোন উদ্যোগ না নিয়ে বাদীকে উল্টো ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী পক্ষের লোকজন। গত ৫ মাচ ওই মামলার বাদী নবী হোসেনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ হারুন অর রশীদ অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানিয়ে অবেদন জানিয়েছেন।

অপরদিকে, ২২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয় লামা থানায়। মামলার বাদী নবী হোসেন গত বছরের ১২ ডিসেম্বর লামা থানায় মামলা করলেও সেটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয় গত ২২ ফেব্রুয়ারি। এ মামলায় নবী হোসেন তার ছোট ভাই বেলাল হোসেনকে বিদেশে অর্থ উপার্জনের লোভ দেখিয়ে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া পাচার ও সেখানে নির্যাতন চলছে মর্মে দাবি করে দফায় দফায় টাকা আদায়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেন দালাল বজল আহমদের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, বড়ছনখোলা, হিমছড়ি, কুমারী, কাঁঠালছড়া, ঠান্ডাছড়া, হারগাজা, বদুরঝিরি, গুলিস্থান বাজার, বনফুর, পুড়ারঝিরি, ভিলেজার পাড়া, মেম্বার পাড়া ও শামুকঝিরি এলাকা থেকে গত ৬মাসে উক্ত দালালদের মাধ্যমে দফায় দফায় মানবপাচার হয়েছে মালয়েশিয়ায় অবৈধ ভাবে সাগর পথে। এসব গ্রাম ও এলাকা থেকে কেবল গত ৬ মাসেই ২ শতাধিক লোক পাচার হয়েছে। পাচার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে শতাধিক লোকের কোন হদিস নেই। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তাও কেউই বলতে পারছে না।

এসব পরিবারের সদ্যরা অভিযোগ করেছেন,দালাল বজল আহমদ ও তার সহযোগীরা মালয়েশিয়ায় পাচারকরা লোকদের কাছ থেকে প্রাথমিক ভাবে ১লাখ ৮০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। পরে টেকনাফ হয়ে সাগর পথে এদেরকে পাঠানো হয় মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দিকে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুখ্যাত ভূমি দস্যু লাদেনের বাগান থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছিল মালয়েশিয়া যাবার প্রস্তুতিকালে। এ সময় ৪ জন মানব পাচারকারীকেও আটক করে পুলিশে দেয়। পরে তারা ছাড়া পায় কোন এক অদৃশ্যে শক্তির কারণে।

এলাকায় সরেজমিন সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইয়াংছার এলাকা বাসী অভিযোগ করেছেন, ফাঁসিয়াখালীর বজল আহমদ, নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রুবী আক্তার, আবু জাকের, মোঃ কাফি উদ্দিন, জমির উদ্দিন এবং চকরিয়ার মোজাফ্ফর, জসিম উদ্দিন ও আবদুস শুক্কুর মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতা। তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে থেমে নেই মানব পাচার।

লামা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ সিরাজুল ইসলামের জানান,লামা উপজেলার মানব পাচার ঘটনার ব্যাপারে মামলা হয়েছে। মানব পাচারে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত