সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬০ বছর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক মানিক সরেনের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও কাপেং ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রনাথ সরেন। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা। আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রহমতউল্লাহ, গণশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মইনউদ্দীন চিস্তি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার খন্দকার রেজওয়ানুল করিম, আইইডি-এর নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান এবং গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক মানিক সরেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি চঞ্চনা চাকমা; বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ; আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিভূতিভূষণ মাহাতো প্রমুখ।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলের পূর্বে আদিবাসীদের জমি নিয়ে গন্ডগোল ছিল না। এর পর থেকেই আদিবাসীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ণ শুরু হয় এবং একপর্যায়ে সীমাহীন নির্যাতনের কারনে সাঁওতালরা ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ করেন। তবে আদিবাসীদের এসব প্রকৃত ইতিহাসকে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসও মিথ্যাচারের ইতিহাস। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার অভাবে আজও পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন সরকার করছেনা। অপরদিকে নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করে বেমালুম এই সরকার তা ভুলে গেছে। তিনি অবিলম্বে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান।
জনসংহতি সমিতির নেতা শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন, ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের যে চরিত্র ছিল আজকের সরকারের মধ্যেও সেই একই চরিত্র বিদ্যমান। যার কারনে বিদ্রোহের এত বছর পরেও আদিবাসীদের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির প্রধান প্রধান বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তানাহলে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরা আবারো সরকারকে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পূর্বের ন্যায় বাধ্য করবে। এর জন্য কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে তার দায় ভার সরকারকেই নিতে হবে।
ড. রহমতউল্লাহ বলেন, ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ। তবে যেসব কারনে বিদ্রোহ হয়েছিল সেধরনের নির্যাতন নিপীড়ণের ঘটনা আজও বিদ্যমান। ভূমির অধিকারকে তিনি মৌলিক অধিকার আখ্যায়িত করে আদিবাসীদের জমি জমা রক্ষায় সরকারকে কার্যকর ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নি¤œবর্গীয় মানুষদের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি আদিবাসীদের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দেরও দাবি জানান।
পাভেল পার্থ বলেন, রাষ্ট্রতো সবসময় আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এমনকি গণমাধ্যমগুলোও অনেক সময় বর্ণবাদী আচরণ করে। যার কারনে জায়গার ভিন্নতার কারনে একই রকম ঘটনায় গণমাধ্যম দুই রকমের ভূমিকা পালন করে। সাঁওতাল বিদ্রোহের পূর্বে আদিবাসীদের উপর অন্যায় অত্যাচারের কিছু কিছু ঘটনা তখনকার গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করলেও এই আধুনিক রাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো আদিবাসীদের উপর নির্যাতনের অনেক ঘটনাকে প্রকাশই করেনি। আদিবাসী মানুষের দ্রোহকে আরও অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করার জন্য তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
মইনউদ্দিন চিস্তি বলেন, আওয়ামীলীগের আমলেই আদিবাসীরা কেন জানি বেশী নির্যাতনের শিকার হয়। অথচ এই আওয়ামীলীগকেই আদিবাসীরা বেশী ভোট দেয়। তিনি আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। তানাহলে আদিবাসীদের যে ভোট ব্যাংক আওয়ামীলীগের পকেটে যায় সেটা হয়তো একদিন তাদের হারাতে হতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি আদিবাসীরা জমি হারাতে হারাতে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সমতলের ৯০ ভাগেরও বেশী আদিবাসী এখন ভূমিহীন। যাদের অল্পসল্প আছে সেগুলোর দিকেও ভূমিদস্যুদের শকুন চোখ পড়েছে। এই ভূমির জন্যই ঢুডু সরেনকে হত্যা করা হয়েছে। পার্বতীপুরের চিড়াকূটা গ্রাম লন্ডভন্ড করা হয়েছে। কিন্তু কোন ঘটনারই সুষ্ঠ’ বিচার হচ্ছেনা। তিনি সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.